শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্যসেবা কার্যত ভেঙে পড়েছে। প্রায় চার লাখ মানুষের একমাত্র সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রটি বর্তমানে চলছে মাত্র কয়েকজন চিকিৎসকের ওপর ভর করে। ফলে, উপজেলার সাধারণ মানুষকে চিকিৎসাসেবার জন্য হিমশিম খেতে হচ্ছে।
৫০ শয্যার এই হাসপাতালে নিয়ম অনুযায়ী অন্তত ১৭ জন মেডিক্যাল অফিসার থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৬ জন চিকিৎসক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ১০টি পদের মধ্যে আছেন মাত্র ২ জন। এ অবস্থায় হাসপাতালে জরুরি বিভাগসহ নিয়মিত সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, ডায়াথার্মি মেশিন, ওটি লাইট ও জেনারেটরসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও অ্যানেসথেসিওলজিস্ট না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সিজারিয়ান অপারেশন। ফলে, প্রসূতি ও জরুরি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে রোগীদের জেলা সদরের ক্লিনিকগুলোতে যেতে হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাইকার অর্থায়নে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়। তবে, প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় সেগুলোর বেশিরভাগই অচল অবস্থায় পড়ে আছে।
রোজিনা বেগম (৪০) নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, “উপজেলা হাসপাতালে সিজার না হওয়ায় গরু বিক্রি করে মেয়েকে শেরপুরে নিয়ে যেতে হয়েছে। খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা।”
আরেকজন রোগীর অভিভাবক আফাজ আলী (৫০) বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মেয়ের সিজারের খরচ মিটিয়েছি। ৩০ হাজার টাকা জোগাড় করা আমাদের জন্য অনেক কষ্টের।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহাম্মেদ বলেন, “অপারেশন থিয়েটার চালু ও সিজারিয়ান সেবা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি, দ্রুত সমাধান হবে।”
স্থানীয়রা বলছেন, ‘দ্রুত চিকিৎসক সংকট নিরসন ও অপারেশন থিয়েটার চালু না হলে নালিতাবাড়ীর সাধারণ মানুষকে চিকিৎসার জন্য আরও বেশি অর্থনৈতিক ও মানসিক কষ্ট ভোগ করতে হবে।’
কেকে/ এমএ