ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অংশ পরিদর্শনে এসে নিজেই তীব্র যানজটে আটকা পড়েন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
বুধবার (৮ অক্টোবর) সকালে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনে পৌঁছে তিনি সড়ক পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে রওনা দেন।
পথে আশুগঞ্জের হোটেল উজানভাটিতে কিছু সময় যাত্রাবিরতি শেষে সকাল সোয়া ১০টার দিকে তিনি সরাইল বিশ্বরোড মোড়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। তবে বাহাদুরপুর এলাকায় পৌঁছালে তার গাড়ির বহর দীর্ঘ যানজটে আটকা পড়ে। ১৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়। অবশেষে দুপুর একটার দিকে উপদেষ্টা মোটরসাইকেলে চড়ে সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে পৌঁছান।
এদিন সকাল থেকেই আশুগঞ্জের সোহাগপুর থেকে সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। হাইওয়ে পুলিশের দাবি, এক পাশে মালামাল রেখে সড়ক সংস্কার কাজ ও খানাখন্দের কারণে এ যানজট দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রায় ৫১ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে। এরই মধ্যে আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল-বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশে অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে যান চলাচলে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে—এই পথে ১৫ মিনিটের যাত্রা পাড়ি দিতে সময় লাগছে ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত।
উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের আগমন উপলক্ষে গত রোববার থেকে সড়কের খানাখন্দের ভরাট শুরু করা হয়। এক পাশে যান চলাচল বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ চালানোর ফলে গত তিন দিন ধরেই যানজটের তীব্রতা বেড়েছে, যার ধারাবাহিকতা বজায় ছিল বুধবারও।
আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল আলম বলেন, ‘উপদেষ্টা মহোদয় আশুগঞ্জ থেকে সরাইলের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করার পর মৈত্রী স্তম্ভ এলাকায় যানজটে আটকা পড়েন। পরে তিনি মোটরসাইকেলে করে সরাইলে পৌঁছান।’
দুপুরে সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে চলমান সড়ক সংস্কার কাজ ও যানজটের বাস্তবতা সরেজমিন পরিদর্শন করেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
পরে মহাসড়ক পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন ১২ জন কর্মকর্তাদেরকে ঢাকায় অফিসে না বসে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোডের অস্থায়ী কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ বিষয়ে অবহেলা করলে বা অফিসে না পাওয়া গেলে তাদেরকে সাসপেন্ড করা হবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢাকা সিলেট মহাসড়কের যে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে ট্রাফিক বিভাগের গাফলিত কারণে।’ এ বিষয়ে তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে কথা বলে এ সমস্যা সমাধান করার কথা জানান।
সড়কপথে যানজটের কারণে রেল পথে অতিরিক্ত চাপ বেড়েছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান করা হবে।’
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম, পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক, সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারফ হোসাইন, সরাইল থানার ওসি মোহাম্মদ মোরশেদুল আলম চৌধুরী, সরাইল সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে একনেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে আখাউড়া স্থল বন্দর পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে প্রস্তাবনা অনুমোদন হয়। গত ২০২০ সালে ৩টি প্যাকেজ কাজ শুরু করে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। এরপর করোনা মহামারি, বালু সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কয়েক দফা পিছিয়ে যায় মহাসড়কটির নির্মাণ কাজ। এর মধ্যে ২০২৫ সালে ৩১ জুলাই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। সম্প্রতি আরও এক বছরের জন্য প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়। সেই সঙ্গে ১৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়।
কেকে/ আরআই