সাংবাদিকদের বেতন কাঠামো নির্ধারণে গঠিত ওয়েজ বোর্ড নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেছেন, আমরা চাই, ওয়েজ বোর্ড বিষয়টি শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে যাক।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) তথ্য ভবনে সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড গঠন এবং সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ (খসড়া) সংক্রান্ত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
সভায় নবম ওয়েজ বোর্ড কমিটিতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রতিনিধি না থাকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তথ্য উপদেষ্টা নিজেই।
মাহফুজ আলম বলেন, একটা বাস্তবতা হচ্ছে— আপনি একজন সাংবাদিক হিসেবে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করছেন। কিন্তু আপনার বেতন নির্ধারণ করছে তথ্য মন্ত্রণালয়। এটা বাস্তবসম্মত নয়, এটি একটি আনরিয়েল। সাংবাদিকরা অনেকদিন ধরেই মজুরি বোর্ড চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে মালিকপক্ষকে রাজি হতে হবে। তাদেরও কথা বলার জায়গা রয়েছে। বেতন না বাড়ালে সাংবাদিকরা বিপথগামী হবেন। ভালো বেতন পেলে সাংবাদিকদের চাঁদাবাজি ও দালালি কমে যাবে। কোন কোন টেলিভিশনে সাংবাদিকদের ১৩/১৪ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হচ্ছে। এই টাকায় ঢাকা শহরে সাবলেটেও পাওয়া যায় না। সাংবাদিকদের ভাল রাখতে হবে। স্বচ্ছল রাখতে হবে। আমরা চাই এর সমাধান হোক আমার হাতে থাকা সময়ের মধ্যেই। সাংবাদিকদের জন্য বাস্তবসম্মত বেতন কাঠামো ও সুরক্ষা আইন নিশ্চিত করতে আমি আন্তরিকভাবে চাই। তবে সত্য হচ্ছে— মালিক পক্ষের সদিচ্ছার অভাবেই এটি এতদিন বাস্তবায়ন হয়নি।
আলোচনার শেষাংশে মাহফুজ আলম বলেন, পরিকল্পনা, প্রস্তাবনা, যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির ভিত্তিতে আগামী ১০ দিনের মধ্যে দুই পক্ষকে বসে চূড়ান্ত রূপরেখা দিতে হবে। না হলে আমরা সামনে এগোতে পারবো না। সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ প্রণয়নে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত এই অধ্যাদেশ চূড়ান্তকরণের আগে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামত নেওয়া প্রয়োজন। তিনি আগামী দশ দিনের মধ্যে এই বিষয়ে লিখিত মতামত ও প্রস্তাব প্রদানের জন্য সাংবাদিক সংগঠন ও গণমাধ্যমপ্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, মালিকপক্ষের সমস্যা সমাধান করে সাংবাদিকদের নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করতে হবে। নইলে মালিকেরা বেতন ভাতা দিবে কোথা থেকে। শুধু বাসসে বাস্তবায়ন করলে হবে না। সাংবাদিকেদর বেতন ভাতার বিষয়ে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে থাকতে হবে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ বলেন, ডিএফপির মিডিয়া লিস্ট আপডেট করেন। সার্কুলেশনের অসত্য তথ্য দেওয়া হয়। বিজ্ঞাপনের ৭৫ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এগুলো দ্রুত সমাধান করেন।
জবাবে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, এ বকেয়া আগের সরকারের। আমরা এসব জঞ্জাল সাফ করার চেষ্টা করছি। ডিএফপির সার্কুলেশনের সঠিক ডেটা আমাদের কাছে আছে। সেটা প্রকাশ করা হলে অনেক নামিদামী সম্পাদকদের সম্মান থাকবে না। তাদের অনুরোধেই আমাদের এটা করা হচ্ছে।
ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হাসান সোহেল বলেন, আমরা শ্রমিক থাকতে চাই না। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে সাংবাদিকতায় যোগ দেই তখন আমার বেতন ছিল আমার বন্ধু ক্যাডার কর্মকর্তার চেয়ে বেশি। নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন না হওয়ায় এখন কী অবস্থা সেটা বিবেচনায় নিবেন। তাহলেই বুঝতে পারবেন সাংবাদিকদের অবস্থা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংবাদিক নেতারা বলেন, বিদ্যমান আইনে সাংবাদিকদের শ্রমিক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সাংবাদিকরা আর শ্রমিক হিসেবে থাকতে চান না। সাংবাদিকদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহের কর্তৃত্ব একাধিক মন্ত্রণালয়ে না রেখে শুধু তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে রাখার পক্ষে মত দেন তারা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, প্রধান তথ্য অফিসার মো. নিজামূল কবীর, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদা বেগম, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা।
কেকে/ আরআই