সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ভারী বর্ষণ-বন্যায় মেক্সিকোতে নিহত ৪৪, নিখোঁজ ২৭      ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      
অর্থনীতি
সরকারের স্বার্থ উপেক্ষা করে নোভার্টিসের শেয়ার হস্তান্তর
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫, ৮:১৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

# অনুমোদন ছাড়াই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অভিযোগ
# পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের


বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সংখ্যাধিক্য শেয়ার দেশীয় প্রতিষ্ঠান রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটি গুরুতর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সরকারের ৪০ শতাংশ অংশীদারিত্বের জিম্মাদার বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) এর পূর্বের চেয়ারম্যানের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা, নিয়ন্ত্রক সংস্থার চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং পুরো প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বিষয়টি এখন একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি রাখে।

এই হস্তান্তরের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে লাভজনক একটি প্রতিষ্ঠানে সরকারি স্বার্থ রক্ষায় বিসিআইসি’র দৃশ্যত ব্যর্থতা। নোভার্টিস বাংলাদেশে সরকারের শেয়ার রয়েছে ৪০ শতাংশ। কোম্পানির সংঘবিধি অনুযায়ী বিদেশি অংশীদার শেয়ার বিক্রি করতে চাইলে বিসিআইসি’র তা ক্রয়ের প্রথম অধিকার ছিল। শিল্প মন্ত্রণালয় গত ৭ জানুয়ারি তারিখে এক চিঠিতে বিসিআইসিকে ‘সরকারের স্বার্থ সংরক্ষণ করে’ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বিসিআইসি এর পূর্বের চেয়ারম্যান এই নির্দেশনা পালনে ব্যর্থ হয়েছে।

ঘটনাক্রম পর্যালোচনায় দেখা যায় ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে নোভার্টিসের ১৯০তম বোর্ড সভায় বিসিআইসি’র প্রতিনিধি পরিচালকরা শেয়ার ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সম্পাদিতব্য সমঝোতা স্মারক (MoU) দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শিল্প মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার মাত্র একদিন পর, ৮ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত নোভার্টিসের ১৯১তম বোর্ড সভায় সেই সমঝোতা স্মারক পর্যালোচনা না করেই শেয়ার হস্তান্তরের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

এর আগে, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত বিসিআইসি’র নিজস্ব বোর্ড সভায় শেয়ার হস্তান্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি শুধুমাত্র ‘অবহিত’ হওয়া হয়। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ সালের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, যেখানে নোভার্টিসের প্রতিটি শেয়ারের নীট সম্পদ মূল্য (NAV) ছিল ৯৪৫.৭৩ টাকা, সেখানে এমন লাভজনক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনার উদ্যোগ না নিয়ে বিসিআইসি’র নিষ্ক্রিয় অবস্থান সরকারি স্বার্থবিরোধী ছিল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শেয়ার মূল্য কোন পদ্ধতিতে করা হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। ফলে এই চুক্তির সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো শেয়ারের অবমূল্যায়ন। অভিযোগ রয়েছে, বাজার মূল্যের পরিবর্তে একটি গোপন চুক্তির মাধ্যমে শেয়ারের বিক্রয় মূল্য কম দেখানো হয়েছে। নোভার্টিসের মোট সম্পদের মূল্য কৃত্রিমভাবে কম দেখানোর ফলে, সেখানে থাকা বিসিআইসি’র ৪০ শতাংশ শেয়ারের মূল্যও আনুপাতিক হারে কমে গেছে, যা রাষ্ট্রীয় সম্পদের সরাসরি ক্ষতি। কম মূল্য দেখানোর ফলে সরকারের সরাসরি রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে যা গেইন ট্যাক্স হিসেবে সরকারের পাওয়ার কথা ছিল।

আইনি ও প্রক্রিয়াগত জটিলতা চলমান থাকলেও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস এরই মধ্যে নোভার্টিসের ব্যবস্থাপনায় কার্যত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রেডিয়েন্টের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নোভার্টিসের প্রধান কার্যালয় থেকে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা ও সিদ্ধান্ত দিচ্ছে। নোভার্টিসের পণ্য রেডিয়েন্টের নিজস্ব সফটওয়্যার সিস্টেমের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে এবং নোভার্টিসের কারখানায় রেডিয়েন্টের নতুন যন্ত্রপাতি প্রবেশ করানো হয়েছে।

এই ঘটনাগুলো এমন এক সময়ে ঘটছে যখন শেয়ার হস্তান্তরের আইনি প্রক্রিয়া সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন এবং অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার চূড়ান্ত অনুমোদন বাকি। এই প্রেক্ষাপটে, সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষক ও আইনজীবীরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দিচ্ছেন। প্রথমত, শেয়ার হস্তান্তরের সময় বিসিআইসি'র তৎকালীন চেয়ারম্যানের ভূমিকা ও গৃহীত পদক্ষেপগুলোর একটি নিরপেক্ষ পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। বিশেষত, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা এবং নিজেদেরই চাওয়া দলিল পর্যালোচনা না করে তড়িঘড়ি করে কেন অনুমোদন দেওয়া হলো, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তৎকালীন নেতৃত্বের ভূমিকা খতিয়ে দেখা অপরিহার্য।

দ্বিতীয়ত, একটি স্বাধীন অডিট ফার্মের মাধ্যমে শেয়ারের যথাযথ মূল্যায়ন করে এর প্রকৃত বাজার মূল্য নির্ধারণ করা আবশ্যক। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন শেয়ারের অতিমূল্যায়ন বা অবমূল্যায়নের অভিযোগ নিষ্পত্তি হবে, তেমনই সরকারের কতটা আর্থিক সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে, তার একটি স্বচ্ছ চিত্র পাওয়া যাবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং জনগণের সম্পদের সুরক্ষার্থে বিসিআইসি’র তৎকালীন নেতৃত্বের কার্যক্রমের পর্যালোচনা এবং শেয়ারের একটি স্বাধীন মূল্যায়ন এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল।

কেকে/এজে
আরও সংবাদ   বিষয়:  সরকারের স্বার্থ উপেক্ষা   নোভার্টিস   শেয়ার হস্তান্তর  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ভাইরাল গরুচোর সবুজসহ গ্রেফতার ৫
আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস আজ
যখন জনগণ জানে না, তখন গণভোট অর্থহীন
২০ জিম্মিকে আজ মুক্তি দেবে হামাস
অবৈধ্য অস্ত্রের বিস্তার রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জরুরি তৎপরতা চাই

সর্বাধিক পঠিত

নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে : তানভীর হুদা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
মৌলভীবাজারে জামায়াত ও খেলাফত মজলিসের স্মারকলিপি
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ
ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা

অর্থনীতি- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close