ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মুসলিম বিবাহ আইন বাতিল করছে আসামের সরকার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
🕐 ৩:০৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪

মুসলিম বিবাহ আইন বাতিল করছে আসামের সরকার

ভারতের আসাম রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার সেখানকার মুসলিম বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন আইন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উত্তরাখণ্ডের সরকার রাজ্যে সব ধর্ম, বর্ণের জন্য একই ধরনের বিয়ে, তালাক ও উত্তরাধিকারসহ অন্যান্য সাধারণ আইন প্রবর্তনের সপ্তাহতিনেক পর এ সিদ্ধান্ত নিল রাজ্যটি। সেখানে মুসলিমদের বিয়ে নথিভুক্তির ১৯৩৫ সালে তৈরি আইন ‘আসাম মুসলিম ম্যারেজেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট’ বাতিলে পক্ষে মত দিয়েছে রাজ্যের মন্ত্রিসভা।

শুক্রবার রাতে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে এই আইন বাতিলের ঘোষণা দেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা। এদিন এক্সে করা এক পোষ্টে তিনি জানান, ‘বর্তমান সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বিতর্কিত আইনটিই বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’

দীর্ঘ পোস্টে তিনি বলেন ‘বিয়ে নিবন্ধন আইনে ধর্ম নির্বিশেষে ন্যূনতম বয়সে সমতা আনার লক্ষ্যেই ব্রিটিশ আমলের এই আইন বাতিল করা হলো। রাজ্যে যে ৯৪ জন মুসলিম ম্যারেজ রেজিস্ট্রার আছেন, সরকার তাদের এককালীন দুই লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেবে। নতুন করে মুসলিম ম্যারেজ আইন চালু করবে সরকার। তাতে সরকার নির্ধারিত বিয়ের বয়সের সীমা, মেয়েদের ১৮ এবং ছেলেদের ২১ বছর বিয়ের ন্যূনতম বয়স রক্ষা করা হবে বাধ্যতামূলক।’

আসাম সরকারের একটি সূত্র এনডিটিভিকে জানিয়েছে, খুব শিগগিরই আসামের বিধানসভায় এই বিষয়ক একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। আর অপর একটি সূত্র বলছে, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই এই বিষয়টি উত্থাপিত হতে পারে।

ব্যাপকহারে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার কারণে ২০১৬ সালে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে আসামের সরকার। কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ্যে এলে জানা যায়, অল্পবয়সে মা হওয়ার ফলে বহু নারী অকালে গুরুতর রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকের মৃত্যুও হচ্ছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়, রাজ্যের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নাবালিকা বিয়েতেও রাশ টানা দরকার। এরপরেই কমিটির সুপারিশ মেনে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে টানা দুই বছর চলে অভিযান।

এসব অভিযানের আওতায় গত বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রথম দফায় ৩ হাজার ৪৮৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখন ৪ হাজার ৫১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়। পরে একই বছরের অক্টোবর মাসে দ্বিতীয় অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় ৯১৫ জনকে। আর মামলা দায়ের হয় ৭১০ জনের বিরুদ্ধে। কিন্তু গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, নাবালিকাদের অনেকেরই বিয়ে মুসলিম ম্যারেজ আইনে নথিভুক্ত করা। ফলে আইনত তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারেনি। কারণ, মুসলিমদের বিয়ে নথিভুক্তির জন্য ১৯৩৫ সালে তৈরি আইন ‘আসাম মুসলিম ম্যারেজেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট’ অনুযায়ী ছেলে ও মেয়েদের যথাক্রমে ২১ এবং ১৮ বছরের কম বয়সীদের বিয়ে নথিভুক্ত করার বিধান ছিল।

এরপরই নাবালিকা বিয়ে আটকাতে মন্ত্রিসভার সম্মতিক্রমে আইন বাতিলের পথে হাঁটলো হেমন্তের সরকার। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহল বলছে, আসাম সরকারের এই পদক্ষেপ অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদিও পুরোপুরি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার কথা আগেই জানিয়ে রেখেছেন বিজেপি শাসিত এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা অভিন্ন বেসামরিক আচরণবিধি ভারতীয় আইনের একটি সাধারণ বিধি, যা সব ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। একইসঙ্গে এই আইন বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার এবং দত্তক গ্রহণসহ ব্যক্তিগত অধিকারের অন্যান্য ক্ষেত্রে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রযোজ্য হয়ে থাকে।

 
Electronic Paper