জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হবে আজ। এই রায় ট্রাইব্যুনালে সামনে শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে প্লাকট নিয়ে হাজির হয়েছেন জুলাই শহিদদের স্বজনরা।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
রায় শুনতে ট্রাইব্যুনাল চত্বরে হাজির হয়েছেন বেশ কিছু শহিদ পরিবারের সদস্য। যাদের নির্দেশে তাদের স্বজনদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তিই স্বজনদের প্রত্যাশা।
সকাল সকাল ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়েছেন শহিদ মারুফের বাবা। তিনি বলেন, আমার ছেলে চব্বিশের ১৯ জুলাই বাড্ডা ব্র্যাক বিশ্বাবিদ্যালয়ের সামনে গুলি খেয়েছে। আমি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অষ্টম সাক্ষী ছিলাম। আমরা ট্রাইব্যুনালের ওপর নিরাশ হয়ে গেছিলাম, কবে রায় পাব! একপর্যায়ে একটা সুসংবাদ আসছে আমাদের শহিদ পরিবারের সামনে—শেখ হাসিনার রায় আজ। রায় শুনতে আসছি, কী হয়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শহিদ মারুফের বাবা বলেন, আমার বলা শুধু এইটুকু—আমার ছেলেকে তো আর পাব না। আমার ছেলেকে কলেজ পর্যন্ত পড়ালেখা করিয়েছি। এই ছেলেই ছিল আমার আশা-ভরসা। এই স্বৈরাচারী সরকার আমার ছেলেকে হত্যা করেছে, এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
আদালতের সুষ্ঠু বিচারপ্রক্রিয়া ও শেখ হাসিনার কটূক্তি নিয়ে তিনি বলেন, পূর্বে এই ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীদের ধরেবেঁধে হাজির করা হতো, এমনকি সাক্ষীদের ইন্ডিয়া পর্যন্ত পাচার করা হয়েছিল—ওইটা ক্যাঙ্গারু কোর্ট ছিল না! এখন হাসিনা ভারত বসে বলেতেছে, আজকের ট্রাইব্যুনাল ক্যাঙ্গারু কোর্ট। আজকে শেখ হাসিনার সঠিক রায় ঘোষণা হবে। সেই রায় নিয়ে ঘরে ফিরব এবং দ্রুত এই রায় কার্যকর করতে হবে।
ছেলের ছবি বুকে ঝুলিয়ে এসেছেন শহিদ হাফিজুর রহমান সিকদারের বাবা আবুবকর সিকদার। তিনি বলেন, আমার ছেলে চব্বিশের ২০ জুলাই শহিদ হয়েছে। আমার ছেলে অটোরিকশা চালাত। রিকশা চালানো অবস্থায় পুলিশের গুলিতে মারা গেছে ও। আমি আজ ট্রাইব্যুনালে এসেছি শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় শুনতে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমা আশা করছি, শেখ হাসিনা ও দোষী আওয়ামী লীগের দোসরদের যাতে ফাঁসি হয়।
শেখ হাসিনা ছাড়াও আলোচিত এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন—সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
জুলাইজুড়ে সারাদেশে যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, তার সবগুলোর বিচার করা সম্ভব ছিল না আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের। কারণ, সব হত্যায় অপরাধের বিচার করলে শেখ হাসিনার বিচার শেষ করতে লেগে যেত কয়েক বছর। এ কারণে সব হিসেব মিলিয়ে প্রসিকিউশন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেছে বেছে সুনির্দিষ্ট পাঁচটি অভিযোগ আনে। এই পাঁচ অভিযোগেই সোমবার শেখ হাসিনার রায় ঘোষণা হবে আজ।
কেকে/এআর