অভিযোগের শেষ নেই অবৈধ ঘের মালিক জসিম মাস্টারের বিরুদ্ধে
ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশ: শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৫, ২:৪৫ পিএম
জসিমউদদীন মাষ্টার
জসিমউদদীন মাস্টার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার শাহ রাহাত আলী হাই স্কুলের শিক্ষক। ৫ আগস্টের আগে শিক্ষক হয়েও প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে সভা-সমাবেশে ছিলো তার সরব উপস্থিতি।
উপজেলার দরিয়াদৌলত ইউনিয়নের কালাইনগর গ্রামে ২০০১ সাল থেকে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজের নামে কোনো জমি না থাকলেও প্রায় ৫০-৬০ বিঘা দখল করে অবৈধ ঘের দিয়ে মাছ শিকার শুরু করেন। এর মধ্যে রয়েছে এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির নিজস্ব জমি ও তিতাস নদী, সরকারি হালট।
নদী সহ সবকিছু নিজের মনে করে আওয়ামী আমল থেকে এখন পর্যন্ত দখল করে মাছের রাজ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর গুরতর অভিযোগ এসেছে।
বৃহস্পতিবার (অক্টোবর) বিকালে সাংবাদিক দেখে শত শত এলাকাবাসী ছুটে এসে অভিযোগ জানাতে থাকেন। অবৈধ মাছের ঘের উচ্ছেদের জন্য তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করতে থাকেন।
মাছের ঘের
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার তিতাস- ঢোল ভাঙা নদীতে অবৈধভাবে ঘের দিয়ে মাছ নিধনের জন্য জসীম মাস্টার ও তার অনুগত বাহিনী প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৫০-৬০ বিঘা জমি ও নদী দখল করে নদীতে বাঁশ পুঁতে ও গাছের ডালপালা ফেলে মাছ শিকারের ঘের তৈরি করেছে।
নদীতে নির্দিষ্ট একটি স্থান দখল করে চারপাশে বাঁশ পুঁতে রাখা। ভেতরে কচুরিপানা ও গাছের ডালপালা ফেলে ঘের দেওয়া হয়েছে। ঘেরের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে মাছের খাবার ফেলা হয়। খাবারের খোঁজে মাছ ভেতরে চলে আসলে চারদিকে জাল দিয়ে ঘের আটকানো হয়। তারপর আটকা পরা মাছসহ পোনা শিকার করা হয়।
নদীতে ঘের দেওয়ার কারণে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। অন্যদিকে স্থানীয় প্রকৃত জেলেরা নদী থেকে উন্মুক্তভাবে মাছ শিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ঘের তৈরিতে ছোট ছিদ্রযুক্ত জাল ব্যবহার করায় মা ও পোনা মাছসহ সব ধরনের মাছ আটকা পড়ছে। এতে জীববৈচিত্র্য ও মৎস্যসম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। অবৈধভাবে মাছ শিকার রোধে উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের সচেতনতামূলক কোনো কার্যক্রম নেই।
অবৈধ ঘেরের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ
নদী তীরবর্তী স্থানীয় বাসিন্দাসহ একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ করে বলেন, ‘টাকা ও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রভাবশালী জসিম মাস্টার নদীতে ঘের দিয়ে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সময়ের ব্যবধানে নদীর নাব্য হারিয়ে ক্রমশ মরা খালে পরিণত হচ্ছে। নদী দখল, পলি জমে ভরাট হওয়া, অবৈধভাবে ঘের দিয়ে মাছ শিকার করা এর অন্যতম কারণ।’
এলাকার একজন মৎস্যজীবী বলেন, নদীতে এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। নদীতে ঠিকমতো নামতেও পারেন না তারা।
এভাবে নৌপথ বন্ধ, ঘেরের কারণে কচুরিপানা জমে দুর্ভোগের কথা বলে প্রতিবাদ করায় জসীম মাস্টারসহ তার বাহিনী দিয়ে অনেককেই মারধোর করে। ১ সপ্তাহ আগেও এলাকার নারী-পুরুষসহ বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘জসীম মাস্টার যেখানে সেখানে ঝোপ বা ঘের তৈরি করার ফলে নৌকা চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। অনেককেই নিজস্ব জমিতে যেতে দিচ্ছে না। এ ছাড়াও ঘেরের আশপাশে মাছ ধরতেও তাদের বাধা দেওয়া হয়।’
এ বিষয়ে জসিম মাস্টার বলেন, ‘আমি বহু আগে থেকে এটি দখল করে মাছ চাষ করছি। সরকারের কাছ থেকে ইজারা বা অনুমতি নিতে হয়, সেটি আমার জানা নেই। স্থানীয়দের হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নদী বা জমিতে আমার কোনো জমি নেই- এ কথা সত্যি। তবে আমার শুশুরের সামান্য জমি আছে। সেই সুবাদে পুরোটা আমি চাষ করছি।’
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাঈদা আক্তার মুঠোফোনে বলেন, ‘নদী থেকে ঘের বা ঝোপ দিয়ে মাছ শিকার সম্পূর্ণ অবৈধ। এর ফলে মাছের বংশবিস্তার হবে না। লিখিতভাবে অভিযোগ পেলেই নদীতে ঘের দেওয়ায় অভিযান পরিচালনা করা হবে। নদী দখলকারী যতই প্রভাবশালী হোক, তাতে কোনকিছু যায়-আসে না।’