রাজশাহীর তানোরসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের পাঁচটি ইউনিয়নে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর উদ্বেগজনকভাবে নিচে নেমে গেছে। কিছু কিছু এলাকায় একেবারেই পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ বসানো বন্ধ ঘোষণা করেছে। ফলে এলাকার মানুষকে এখন প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে বাড়ি বাড়ি বসানো সাবমার্সিবল পাম্প থেকে জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে।
পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো) পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছে এই ধষধৎসরহম চিত্র। গত জুন থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত হাইড্রোলজিক্যাল মডেলিংয়ের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির অবস্থা জরিপ করে তারা। ওয়ারপোর একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫০টি জায়গায় প্রায় দেড় হাজার ফুট গভীর পর্যন্ত বোরিং করে জরিপ চালানো হয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে এই এলাকাগুলোর কোথাও কোথাও পানি ধারক স্তরের (অ্যাকুইফার) সন্ধান মেলেনি।
বিশেষ করে রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাচন্দর ইউনিয়ন, মন্ডুমালা পৌর এলাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, নওগাঁর পোরশার ছাওড়া ইউনিয়ন ও সাপাহার উপজেলার সদর ইউনিয়নের কিছু নির্দিষ্ট স্থানে অ্যাকুইফার প্রায় অদৃশ্য। সাধারণত ১৫০ থেকে ২০০ ফুটের মধ্যে অ্যাকুইফার পাওয়া যায়। কিন্তু এই ইউনিয়নগুলোতে তা অনুপস্থিত। আশপাশে ছোট ছোট পকেট অ্যাকুইফার থাকলেও যেকোনো সময় সেগুলোও শেষ হয়ে যেতে পারে বলে করছেন বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা। যে এলাকায় পকেট অ্যাকুইফারেও পানি নেই, সেখানকার মানুষকে দূর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
জরিপ শেষে ওয়ারপো এই এলাকাগুলোকে পানি সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করলে পানি নীতি অনুযায়ী এসব জায়গায় পানি ব্যবহার করতে হবে, যেখানে প্রথম অগ্রাধিকার পাবে খাবার পানি।
এই ব্যপারে বিএমডিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল কাসেম বলেন, বিএমডিএর একটা নাম হয়ে গেছে তারা শুধু ভূগর্ভস্থ পানি তোলে। আসলে এখন পল্লী বিদ্যুৎ থেকে সংযোগ নিয়ে কৃষকেরা বাড়ি বাড়ি খাওয়ার পানির জন্য সাবমার্সিবল পাম্প বসাচ্ছে, সেই পাম্প থেকে ধানখেতে পানি দিচ্ছে। তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের জুন মাস থেকে তাঁরা গভীর নলকূপ বসানো সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছেন এবং চাষিদের কম পানিতে লাভজনক ফসল করার জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন।
তবে, ১৯৮৫-৮৬ সাল থেকে বিএমডিএ গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে সেচকাজ করায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার পেছনে তাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমান সংকট মোকাবেলায় সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে বরেন্দ্র অঞ্চলের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কেকে/ এমএস