মৌলভীবাজারে গত ১৬ বছর ধর বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি এবং ডিএপি সারের ডিলারদের মধ্যে একটি সিন্ডিকেট ব্যবসায় চলছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে ‘সার ডিলার নিয়োগ নীতিমালা-২০০৯’ তোয়াক্কা না করে জেলার শ্রীমঙ্গলে ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় বিসিআইসির সারের ডিলার নিয়োগ দেয় সরকার। এছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিশাল অনিয়মের মাধ্যমে একই পরিবারে একাধিক ব্যক্তির নামে ডিলারশীপ দেওয়া হয়। বিসিআইসি সার ডিলারদের রাজনৈতিক বিবেচনায় ডিলারশিপ দেওয়ার ফলে প্রান্তিক কৃষকরা গত এক যুগেরও বেশি সময় ডিলার সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
অনুমোদিত খুচরা বিক্রেতাদের সময়মতো ও প্রয়োজনমতো সার না দেওয়া এবং অতিরিক্ত দামে সার বিক্রিতে নাজেহাল কৃষকরা। এখনো এই সিন্ডিকেট চক্রটি জেলাজুড়ে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে রেখেছে। রোপা আমনের এই ভরা মৌসুমে ন্যায্য দামে সার পাচ্ছেন না কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষদের অভিযোগ, পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে নিয়োগকৃত সারের ডিলাররা কৃষি অধিদপ্তরের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চড়া দামে বিক্রি করছেন। এছাড়া এক ডিলার একাধিক লাইসেন্সের অধীনে সার উত্তোলন করে অনিয়মের মাধ্যমে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো কোনো ডিলার সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রতি বস্তা ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি ও এমওপি সারের জন্য অতিরিক্ত ৪০০-৬০০ টাকা বেশি নিচ্ছেন। বহু জায়গায় আবার নির্ধারিত পরিমাণ সরবরাহও মিলছে না। এতে কৃষকরা বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
জানা গেছে, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নতুন ব্রিজের মেসার্স আলহাজ মাসুক ট্রেডার্সের মালিক বর্তমান পলাতক আওয়ামী চেয়ারম্যান আপ্পান আলীর আত্মীয়। শ্রীমঙ্গল পৌর এলাকার জন্য মোমিনুল হোসেন সোহেল শ্রীমঙ্গল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও যুবলীগ নেতা। জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে নাশকতা মামলায় তিনি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেলা কারাগারে রয়েছেন। ১ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়নের ডিলার হাজী মস্তান মিয়া ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি, ২ নম্বর ভুনবীর ইউনিয়ন এলাকার ডিলার সুজিত দেবের পরিবার আওয়ামী লীগের সমর্থক। সুজিব দেবের স্ত্রী অর্পনা দেবের ছোট ভাই সুব্রত দেব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া সারা জেলায়ই বাকি ডিলারদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি বা সমমনা দলের কর্মী-সমর্থক। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলাররাই এখনো সিন্ডিকেটে সক্রিয়। তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কৃষকদের জিম্মি করে সিন্ডিকেট ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছেন।
শ্রীমঙ্গলের ভুনবীর ইউনিয়নের ভিমসি গ্রামের কৃষক মহরম আলী, নাসির, মান্নান, বেলাল ও অজিউল্লাহ ইউরিয়া সার না পাওয়ার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমন রোপণ শেষ হয়েছে অনেক আগেই; কিন্তু এখন টিএসপি সার মিলছে না কোথাও। তবে মোটা অঙ্কের টাকা দিলেই মিলছে সার। এগুলো বস্তাপ্রতি এক হাজার ৮০০ টাকা। এর জন্য ক্যাশ মেমো চাইতে গেলে ডিলাররা দিচ্ছেন না। সার চাইতে গেলে ডিলাররা বলেন বরাদ্দ নেই।’
কৃষকরা জানান, এক হাজার ৩৫০ টাকায় সার বিক্রি করার কথা থাকলেও তা ১৮০০-২০০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে; তাও এক থেকে দুই বস্তা। এর জন্য ডিলারদের সঙ্গে অনেক দেনদরবার করতে হয়।
মৌলভীবাজার সদরের জগৎপুর এলাকার কৃষক কয়েছ আহমদ বলেন, ‘আমাদের ধান এখন সার ছাড়া বাঁচানো কঠিন। কিন্তু বাজারে গেলেই নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম চাওয়া হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে নিতে হচ্ছে।’
ছাত্রজনতার গণঅভুত্থানের এক বছর পার হলেও আওয়ামী লীগ আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় ডিলারশিপ নিযোগপ্রাপ্তরা এখনো বহাল তবিয়তে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন কৃষক, ছাত্রজনতা ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও।
জানা যায়, ২০০৯ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় শ্রীমঙ্গলের ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় বিসিআইসির সারের ডিলার নিয়োগ দেয় সরকার। এছাড়া সে সময়ে এসব এলাকার প্রান্তিক কৃষকদের সুবিধার্থে আরো ৬৪ জন খুচরা সার বিক্রেতাও নিয়োগ করা হয়। তৎকালীন নিয়োগ প্রক্রিয়ায়ও হয়েছিল বিশাল ঘাপলা। যারা ডিলার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের মধ্যে পাঁচ জনের বাড়ি ৩ নম্বর শ্রীঙ্গল ইউনিয়নে, এক জনের বাড়ি ২ নম্বর ভুনবীর ইউনিয়নে, এক জনের বাড়ি ১ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়নে, এক জনের বাড়ি ৫ নম্বর কালাপুর ইউনিয়নে এবং এক জনের বাড়ি ৬ নম্বর আশীদ্রোন ইউনিয়নে।
অভিযোগ রয়েছে, যে দশ জন সারের ডিলারশীপ নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের ছাড়া নিয়োগকালীন আর কাউকে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। যারা নিয়োগ পেয়েছিলেন তারা তৎকালীন সময়ের সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরীক জাতীয় পার্টির কর্মী-সমর্থক। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে। একই পরিবারের সদস্যরা একাধিক ডিলারশীপ নিয়ে সারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ওই দশ ডিলারের মধ্যে আবার একই পরিবারের একাধিক ডিলারও রয়েছেন। ৩ নম্বর শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের ডিলার অনুকুল চন্দ্র দাশের ভাই পরিমল দাশ ৯ নম্বর সাতগাঁও ইউনিয়নের ডিলার। এছাড়া ৬ নম্বর আশীদ্রোন ইউনিয়নের ডিলার স্বপন কপালী ও ৮ নম্বর কালিঘাট ইউনিয়নের ডিলার শান্ত কপালীও আত্মীয়।
বিসিআইসি সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণসংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯’-এর ৩ ধারার ৩.২ উপধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘নিজ মালিকানায় অথবা ভাড়ায় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভায় বিক্রয়কেন্দ্রসহ কমপক্ষে ৫০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন গুদাম থাকতে হবে।’
কিন্তু শ্রীমঙ্গলের কোনো ইউনিয়নেই কোনো বিসিআইসি সার ডিলারের বিক্রয়কেন্দ্র এবং ৫০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন গুদাম নেই। প্রায় সব ডিলারেরই বিক্রয়কেন্দ্র ও গুদাম পৌর এলাকায় অবস্থিত।
খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণসংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯ উপেক্ষা করে প্রায় সব ডিলারই তাদের বিক্রয় কেন্দ্র ও গুদাম পৌর এলাকায় স্থাপন করায় তারা (খুচরা বিক্রেতা) পৌর এলাকা থেকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে সার নিয়ে প্রান্তিক কৃষকদের কাছে বিক্রি করতে হয়। পরিবহন খরচ বহন করতে হয় তাদের। এতে সারের গড়মূল্য বৃদ্ধি পায়। আবার যখন কৃষির মৌসুম, তখন কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ডিলাররা তাদের সার সরবরাহ করেন না। ওই সময়ে তারা বাইরে সার অনৈতিকভাবে বিক্রি করেন। ফলে কৃষির মৌসুমে জেলার বাইরে থেকে অধিক মূল্যে তাদের সার ক্রয় করতে হয়। এতে পরিবহন খরচ করে মৌসুমে অনেক সময় ক্ষতির শিকার হন তারা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, গত সরকারের আমলে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা এলাকার জন্য বিসিআইসি সারের ডিলারশীপ পেয়েছিলেন মোমিনুল হোসেন সোহেলের মালিকানাধীন সোহেল এন্টারপ্রাইজ, ১ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়ন এলাকার জন্য হাজী মস্তান মিয়ার মালিকানাধীন জলি এন্টারপ্রাইজ, ২ নম্বর ভুনবীর ইউনিয়ন এলাকার জন্য সুজিত দেবের মালিকানাধীন ইকো এগ্রিকালচার স্টোর, ৩ নম্বর শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন এলাকার জন্য অনুকুল চন্দ্র দাশের মালিকানাধীন জননী এন্টারপ্রাইজ, ৪ নম্বর সিন্দুরখান ইউনিয়ন এলাকার জন্য পলাশ দেবের মালিকানাধীন মিতালী এন্টারপ্রাইজ, ৫ নম্বর কালাপুর ইউনিয়ন এলাকার জন্য দিপলু আহমদের মালিকানাধীন সায়মা ট্রেডার্স, ৬ নম্বর আশীদ্রোন ইউনিয়ন এলাকার জন্য স্বপন কপালীর মালিকানাধীন মনমোহন ট্রেডার্স, ৭ নম্বর রাজঘাট ইউনিয়ন এলাকার জন্য ওয়াহিদুজ্জামানের মালিকানাধীন জামান ট্রেডার্স, ৮ নম্বর কালিঘাট ইউনিয়ন এলাকার জন্য শান্ত কপালীর মালিকানাধীন উত্তরা ট্র্রেডার্স এবং ৯ নম্বর সাতগাঁও ইউনিয়ন এলাকার জন্য পরিমল দাশের মালিকানাধীন রাহুল ট্রেডার্স। পরবর্তী ২ নম্বর ভুনবীর ইউনিয়ন এলাকার ডিলার সুজিব দেব মৃত্যুবরণ করলে তার স্ত্রী অর্পনা দেবের নামে এবং ৭ নম্বর রাজঘাট ইউনিয়ন এলাকার ডিলার ওয়াহিদুজ্জামান মৃত্যুবরণ করলে তার স্ত্রী আবিদা সুলতানা চৌধুরীর নামে ডিলারশীপ পরিবর্তন করা হয়। এসব পাইকারি সার ডিলার ছাড়াও নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকায় আরো ৬৪ জনকে খুচরা সার বিক্রেতা হিসেবে লাইসেন্স দেওয়া হয়।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার ৫৩ ডিলারের মধ্যে রয়েছে মৌলভীবাজার সদরের শেরপুরের মেসার্স রহমান বীজঘর অ্যান্ড কৃষি মেডিসিন সেন্টার, সরকার বাজারের রাহী এন্টারপ্রাইজ, নতুন ব্রিজের আলহাজ মাসুক ট্রেডার্স, কাগাবালা বাজারের সানি এন্টারপ্রাইজ, কাজির বাজারের তন্ময় ট্রেডার্স, একাটুনার রুহিদ পোলট্রি ফিড অ্যান্ড তানিম এগ্রো ফার্ম, শিমুলতলা বাজারের সারঘর, দিঘীরপাড় বাজারের মাহবুবুর রহমান, গোবিন্দপুর রাজারের তাওসি ট্রেডার্স, কোদালীপুলের ইমরান অ্যান্ড ব্রাদার্স, গিয়াসনগরের মনু এন্টারপ্রাইজ, সৈয়দ কুদরত উল্ল্যা সড়কের এম এগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্ট, শ্রীমঙ্গল মির্জাপুরের জলি এন্টারপ্রাইজ, ভূনবীরের ইকো এগ্রিকালচার স্টোর, শ্রীমঙ্গল শহরের জননী এন্টারপ্রাইজ, সিন্দুরখানের মিতালী এন্টারপ্রাইজ, কালাপুরের সায়মা ট্রেডার্স, আশিদ্রোনের মনমোহন ট্রেডার্স, রাজঘাটের মেসার্স জামান ট্রেডার্স, কালিঘাটের উত্তরা ট্রেডার্স, সাতগাঁওয়ের রাহুল ট্রেডার্স, পৌরসভার সোহেল এন্টারপ্রাইজ, রাজনগর মুন্সিবাজারের অর্নব এন্টারপ্রাইজ, গোবিন্দ বাটির পিআর এন্টারপ্রাইজ, সদরের ফরাজী এন্টারপ্রাইজ, হরিপাশার আরক অ্যান্ড ব্রাদার্স, তারাপাশার গৌরাঙ্গ অ্যান্ড সন্স, কমলগঞ্জ বাবুবাজারের রাফি এন্টারপ্রাইজ, নয়াবাজারের মুক্তা এন্টারপ্রাইজ, শমসেরনগর বাজারের এম হাসান এন্টারপ্রাইজ, ভানুগাছা বাজারের চৌধুরী ট্রেডার্স, শমসেরনগর বাজারের কৃষি ঘর, আদমপুর বাজারের মেসার্স খান অ্যান্ড সন্স, নাঈম এন্টারপ্রাইজ, ভানুগাছ বাজারের জননী এন্টারপ্রাইজ, মুন্সিবাজারের আকবর হোসেন, কুলাউড়ার দক্ষিণ বাজারের ডিলমন স্টোর, চৌমুহনার নেছার এন্টারপ্রাইজ, নবাবগঞ্জ বাজারের খান ট্রেডার্স, বরমচাল বাজারের মেসার্স মিন্টু ট্রেডার্স, ব্রাহ্মণ বাজারের কৃষি বিতান, টিলাগাঁও বাজারের সৈয়দ এন্টারপ্রাইজ, রবির বাজারের শাপলা অটো রাইস মিল, পীরের বাজারের তাহির ট্রেডার্স, উত্তর কুলাউড়ার বেলাল ট্রেডার্স, কটারকোণা বাজারের রুহিন ট্রেডার্স, ভাটেরা স্টেশন বাজারের কাদির মিয়া অ্যান্ড সন্স, দক্ষিণ শাহবাজপুরের মেসার্স রাজ ট্রেডং, সুজানগরের জমির ট্রেডার্স, কাঠালতলী বাজারের হাসান ট্রেডার্স, দক্ষিণভাগ বাজারের কৃষি এন্টারপ্রাইজ, বড়লেখার পকুয়া এন্টারপ্রাইজ ও ভবানীগঞ্জ বাজারের মেসার্স মিতালী স্টোর অ্যান্ড বীজ ঘর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, এ বছর জেলায় ৯৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮০ হাজার হেক্টরে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাস পর্যন্ত সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ইউরিয়া চার হাজার ২৯৬, টিএসপি ৫৯০, ডিএপি এক হাজার ৪১৯, এমওপি ৮ ৪০ মেট্রিক টন।এর মধ্যে ডিলাররা উত্তোলন করেছেন ইউরিয়া দুই হাজার পাঁচ, টিএসপি ৩৩৮, ডিএপি ৭২০, এমওপি ৪৭১ মেট্রিক টন। মজুত আছে ইউরিয়া এক হাজার ২৬, টিএসপি ১৭০, ডিএপি ২১৫, এমওপি ২০৮ মেট্রিক টন সার।
অনুকুল চন্দ্র দাশ দুটি ডিলারশীপ লাইসেন্স এককভাবে পরিচালনার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমার ভাই পরিমল দাশের প্রতিষ্ঠান রাহুল ট্রেডার্সের নামে ৯ নম্বর সাতগাঁও ইউনিয়নের ডিলারশীপ লাইসেন্স রয়েছে। সে কানে কম শুনে। তাই ভাইয়ের সারের ব্যবসাটিও আমি পরিচালনা করি। দুই ইউনিয়নের কোথাও আমাদের গুদাম নেই। শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের সবুজবাগ এলাকায় গুদাম ও বিক্রয়কেন্দ্র করেছিলাম। কিন্তু সার বিক্রি হয় না। তাই আমরা নতুন বাজার এলাকায় সার রাখি। এখান থেকে সহজেই সবাই সার নিতে পারেন। সারের কোন সঙ্কট নেই। যখন যার যতটুকু সার প্রয়োজন তা আমরা সরবরাহ করি।’
৪ নম্বর সিন্দুরখান ইউনিয়নের বিসিআইসি সারের ডিলার পলাশ দেব বলেন, ‘সিন্দুরখানে আমার কোন গুদাম ঘর নেই। শ্রীমঙ্গল শহরের ভানুগাছ রোডে আমার সারের দোকান রয়েছে। আমি আমার ইউনিয়নের সব সাব ডিলারকে এখান থেকে দিয়ে দিই। আজও দিছি, আর শ্রীমঙ্গল পৌরসভার বিসিআইসি ডিলার এর নামে উনার স্ত্রী সার উত্তোলন করেছেন। আমি শুধু উনাকে সহযোগীতা করি।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘এটা সত্য যে, গত সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় কিছু ডিলারদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। যে কারণে বাজারে কিছুটা সমস্যা। তবে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে নতুন ডিলার নিয়োগে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘বাজারে সারের বড় কোনো সংকট নেই। জেলার সবগুলো উপজেলায় পর্যাপ্ত সার মজুত রয়েছে। দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট ভাঙতে আমরা চেষ্টা করছি। যদি সার বিতরণ বা বরাদ্দে কোনো অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়, বেশি দামে সার বিক্রি হয় বা এক ব্যক্তি একাধিক ডিলারশিপ নিয়ে থাকেন, তবে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘সারের ডিলাররে বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও রাজনৈতিক বিবেচনায় ডিলারশিপ কেউ পেয়ে থাকলে তদন্তসাপেক্ষে ডিলারশিপ বাতিল করে নতুন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হবে।’
কেকে/ এমএ