নারীর অদৃশ্য শ্রমের স্বীকৃতি, জ্বালানি নীতিতে জেন্ডার দৃষ্টিভঙ্গির অন্তর্ভুক্তি, নেতৃত্বে সমান অংশগ্রহণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে উইমেন অ্যান্ড এনার্জি কার্নিভালে নারীদের শক্তিশালী অংশীজন হিসেবে বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)-এর উদ্যোগে আয়োজিত উইমেন অ্যান্ড এনার্জি কার্নিভালে বক্তারা বলেন, জ্বালানি খাতের নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীকে মূল অংশীজন হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) এমজেএফ-এর উইমেনস এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড এনার্জি (উই) প্রকল্পের উদ্যোগে উইমেন অ্যান্ড এনার্জি কার্নিভাল ২০২৫ আয়োজন করা হয়।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে উদ্ভাবক, উন্নয়ন সহযোগী, নীতি প্রভাবক, যুবনেতা ও তৃণমূল নারীরা এক স্থানে একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নারীর নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা করেন। একই সাথে নারীদের স্বীকৃতিও জানানো হয়।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এমজেএফ-এর পরিচালক (রাইটস অ্যান্ড গভর্ন্যান্স প্রোগ্রাম) বনশ্রী মিত্র নিয়োগী বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক জ্বালানি নিশ্চিত হচ্ছে কিনা তা দেখা জরুরি। পাহাড়ি এলাকার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, দেশে এখনো সব জায়গায় বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি না থাকায় নারীরা কাজের সময় নষ্ট করছেন, তাই টেকসই উন্নয়নের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে অগ্রসর হওয়া অপরিহার্য।
উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন এমজেএফ-এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। তিনি বলেন, “উইমেন অ্যান্ড এনার্জি কার্নিভাল নারীর কণ্ঠস্বরকে জোরালো করার একটি মঞ্চ এবং টেকসই ও সবুজ রূপান্তরের কেন্দ্রে নারীকে স্থান দেওয়ার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।” তিনি নারীর অদৃশ্য শ্রমের স্বীকৃতি দেওয়ার গুরুত্বও তুলে ধরেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি (পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন) নায়োকা মার্টিনেজ-ব্যাকস্ট্রম। তিনি জলবায়ু ও জ্বালানি নীতি প্রণয়নে নারীর সমান অংশগ্রহণের ওপর জোর দিয়ে বলেন, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে এখনই নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে মনোযোগ দেওয়ার সময়।
স্রেডার উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “জলবায়ু ইস্যুতে নারীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রিন ফাইন্যান্সের মতো ক্ষেত্রে অনেক সময় নারীর অবদান পুরুষদের থেকেও বেশি।” তিনি নারীদের শক্তিশালী স্টেকহোল্ডার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ভবিষ্যতে বিকেন্দ্রীভূত বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে এবং রক্ষণাবেক্ষণে নারীর ভূমিকা হবে অনস্বীকার্য। তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি কাঠামোয় জেন্ডার দৃষ্টিভঙ্গি অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন।
ধরা সংগঠনের সদস্য সচিব ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, সামাজিক আন্দোলনকে শুধু প্রজেক্ট আকারে দেখলে চলবে না। নারীর অংশগ্রহণকে অবশ্যই বাড়াতে হবে এবং কাজটি সবার সমন্বয়ে করতে হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (পরিবেশ ও জ্বালানি) তানজিনা দিলশাদ বলেন, নেতৃত্বের জায়গায় নারীর অংশগ্রহণ এখনো কম হলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে তাদের সম্পৃক্ততা বেশি, যা একটি ইতিবাচক দিক। তিনি নারীদের জ্বালানি রূপান্তরে পিছিয়ে না পড়তে দেওয়ার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
কেকে/এজে