নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় বুধবার সকল কারখানা বন্ধ ছিল। ইপিজেড এলাকায় নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ফলে সেখানে দিনভর ছিল না শ্রমিক কর্মচারীদের আনাগোনা। নিত্যদিনের জনসমাগমের এলাকা পরিণত হয় জনশুণ্যে।
গত মঙ্গলবার সকালে সংঘর্ষে ওই ইপিজেডের এক শ্রমিক নিহতের ঘটনার পর থেকে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। শ্রমিক অসন্তোষের জেরে এদিন (মঙ্গলবার) সকালে সড়ক অবরোধ করে এভারগ্রিন নামের একটি কারখানার শ্রমিকরা। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধলে মো. হাবিব ইসলাম (২১) নামের এক শ্রমিক নিহত হন।
তিনি ওই ইপিজেডের ইকু ইণ্টারন্যাশনাল নিটিং নামের একটি কারখানায় শ্রমিক এবং জেলা সদরের সংগলশী ইউনিয়নের মাছিরচাক গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে। ওই কারখানায় রাতে কাজ করেছিলেন হাবিব। সকালে কারখানা থেকে বেরিয়ে আসার সময় গুলিতে নিহত হন বলে জানান তার সহকর্মী মিলন ইসলাম (২৫)।
শ্রমিক নিহতের ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিক্ষুদ্ধ শ্রমিক ও যৌথবাহিনীর মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় যান চলাচল বন্ধ থাকে নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কে। প্রায় সাড়ে ছয়ঘণ্টা পর পরিস্থিতি শান্ত হলে যান চলাচল শুরু হয় সড়কটি দিয়ে। সংঘর্ষের ওই ঘটনায় এজন নিহত ছাড়াও ৭জন শ্রমিক, ২জন আনছার সদস্য, ৭ জন পুলিশ সদস্য, ৪ জন সেনা সদস্য ও ১ জন বেপজার সদস্য সহ ২১ জন আহত হয়।
ঘটনার পর থেকে বন্ধ হয় ইপিজেডের সকল কারখানা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেখানে দুই প্লাটুন বিজিবি, পুলিশ ও সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়। এদিকে, বুধবার বিকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর এসব সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
সৃষ্ট ঘটনা তদন্তে বেপজার পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শ্রমিক নিহতের ঘটনায় বুধবার বিকাল পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়নি। তবে পুলিশের পক্ষে একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে থানায়।
সূত্র জানায়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে কারখানাগুলো খুলে দেয়ার জন্য বেপজা, জেলা প্রশাসন, শ্রমিক প্রতিনিধি, কারখানা মালিক, পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে বুধবার বিকেলে একটি সভা শুরু হয় ইপিজেডের ভেতরে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে কারখানাগুলো চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান।
নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম আর সাঈদ বলেন, ইপিজেডের মঙ্গলবারের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তবে এঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী হয়েছে। সংঘর্ষে আহত হয়েছে পুলিশের সাত সদস্য।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান জানান, সমস্যা নিরসনে গত মঙ্গলবার দুপুরে আর্মি, বিজিবি, ইপিজেড, এভারগ্রিন কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শ্রমিকদের ২৩ দফা দাবির বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে।
পরিস্থিতি শান্ত করে দ্রত সকল কারখানা খোলার ব্যাপারে বুধবার সন্ধ্যায় ইপিজেডে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে কোন সিন্ধান্ত জানা সম্ভব না হলেও বৃহস্পতিবার থেকে কারখানাগুলো খোলার সম্ভাবনার কথা জানান সভার একটি সূত্র।
উল্লেখ্য, ইপিজেডের এভারগ্রিন নামের একটি প্রতিষ্ঠানে সম্প্রতি ৫১ জন শ্রমিককে ছাটাই করা হয়। এ নিয়ে সেখানে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে গত মঙ্গলবার সকালে (২ সেপ্টেম্বর) অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিশ টানায় কর্তৃপক্ষ। সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসে হঠাৎ কারখানা বন্ধের নোটিশে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। তারা ইপিজেডের ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে সামনের নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়ক অবরোধ করে। এ সময় তাদেরকে সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে গেলে যৌথবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনী গুলি চালালে হাবিব ইসলাম নামের ওই শ্রমিক নিহত হন। পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বজনরা হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক নিহত হাবিবের লাশ নিয়ে যায় বাড়িতে। এরপর ময়নাতন্ত ছাড়াই রাত সাড়ে আটটার দিকে জানাজার নামাজ শেষে দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে।
এ বিষয়ে জানার জন্য ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল জব্বারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
কেকে/ আরআই