গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সেনা নিপীড়নের মুখে পড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় লাখ লাখ রোহিঙ্গা। সেই থেকে টানা আট বছর পার হলেও এখনো তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। ফলে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির গড়ে উঠেছে।
কিন্তু পরিস্থিতি এখানেই থেমে নেই। মিয়ানমারের ভেতরে এখনো চলছে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তীব্র সংঘাত। এর কারণে রাখাইন অঞ্চলে অবস্থানরত লাখ লাখ রোহিঙ্গা আবারও বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তে ঠায় বসে আছে। সীমান্ত ঘেঁষে থাকা গ্রামগুলোতে নতুন করে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
আট বছর ধরে আশ্রয় নিলেও দিনের পর দিন সীমান্তঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সংকট বাড়ছে। স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ, রোহিঙ্গারা ক্লান্ত, আন্তর্জাতিক মহলও আশ্বাসের বাইরে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
গত (১৪ মার্চ ২০২৫) রমজানের উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে এসে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করে প্রত্যাবাসনের বাণী শুনিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরানোই হবে চূড়ান্ত সমাধান। তিনি এই বলেছিলেন যে, আগামী রমজানের ঈদ মিয়ানমার করার মতো একটা আশার বাণী শুনিয়েছিলো। তবে সেই বক্তব্যের পর এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।
কিন্তু কক্সবাজারে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে রোহিঙ্গা বিষয়ে ৩ দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এই সম্মেলনে ৪০টি দেশ অংশে নেবেন বলে জানা গেছে। এতে আজ প্রধান উপদেষ্টাও অংশ নিবেন। এ নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। এবারও তিনি কী আশার বাণী শোনাবেন? সেটাই এখন দেখার অপেক্ষায় রয়েছে শরণার্থী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।
রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, তারা ভিক্ষুক নয়, অনাহারী নয় তারা শুধু নিজ দেশে ফিরতে চান মর্যাদা ও নাগরিক অধিকার নিয়ে। শরণার্থী শিবিরে বসে তারা স্বপ্ন দেখছেন একদিন মিয়ানমারের রাখাইনেই ফিরবেন পরিবার-পরিজনসহ।
স্থানীয় জনসাধারণ মনে করছেন, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান কক্সবাজারের ভারসাম্য নষ্ট করছে। অপরাধ, মাদক, অস্ত্র, অপহরণ ও মানবপাচারের মতো বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো এখন বিতর্কিত হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল এখনো মিয়ানমারের উপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসের কোন কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এমনটাই মনে করছেন রোহিঙ্গা বিশ্লেষকরা।
উখিয়ার ক্যাম্পে থাকা মোহাম্মদ নুর নামে এক রোহিঙ্গা যুবক বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে শান্তিতে আছি, কিন্তু এ দেশে আমরা অতিথি মাত্র। আমরা চাই মিয়ানমারে নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হোক।’
রোহিঙ্গা সংকটের আট বছর পেরিয়ে গেলেও সমাধানের কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই। উল্টো নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা সীমান্তে ঘনীভূত হচ্ছে। মানবিকতার দায়ে বাংলাদেশ আশ্রয় দিলেও এখন সময় এসেছে আন্তর্জাতিক মহলের শক্তিশালী হস্তক্ষেপের, যাতে রোহিঙ্গারা তাদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, ‘বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ৮ এপিবিএনর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমাদের আওতাধীন সকল ক্যাম্পে অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে অস্ত্র ও মাদকের বিরুদ্ধে ৮ এপিবিএন জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে।’
কেকে/ এমএস