মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার চারদিক থেকে মেঘনা নদী দ্বারা পরিবেশিত, মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এক জনপদ গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করেছে প্রশাসন। জেলা পুলিশের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিষয়টিকে গুয়াগাছিয়ার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করছে স্থানীয়রা।
খবর নিয়ে জানা যায়, সড়কপথে গজারিয়া উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা গুয়াগাছিয়া। ইঞ্জিন চালিত ট্রলার ছাড়া সেখানে যাওয়ার কোন উপায় নেই। সন্ধ্যার পর অথবা বৈরী আবহাওয়ায় ট্রলার বন্ধ হয়ে গেলে নদী পার হতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় বাসিন্দাদের। ইউনিয়নটিতে উন্নয়নের ছোঁয়া সেভাবে লাগেনি। রাস্তাঘাট না থাকার কারণে সেখানে পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকি কম থাকায় সেখানে তৈরি হয়েছে কয়েকটি নৌ ডাকাত গ্রুপ। নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, মেঘনা নদীতে চলাচলকারী নৌযান থেকে চাঁদা আদায়সহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত এ সকল নৌ ডাকাত গ্রুপের সদস্যরা।
সম্প্রতি অবৈধ বালুমহল পরিচালনা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধের জেরে নৌ ডাকাত নয়ন-পিয়াস বাহিনীর হাতে খুন হয় ডাকাত সর্দার বাবলা, স্যুটার মান্নান ও হৃদয় বাঘ। এরপর আবারো আলোচনায় আসে গুয়াগাছিয়ার নিরাপত্তার বিষয়টি। গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সেখানে একটি পুলিশ ক্যাম্প, একটি নৌ পুলিশ ফাঁড়ি এবং একটি কোস্টগার্ড স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগের কথা জানায় প্রশাসন। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সেখান একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প চালু করা হলো।
গজারিয়া থানা সূত্রে জানা যায়, অস্থায়ী এই পুলিশ ক্যাম্পটি মুন্সীগঞ্জ পুলিশ লাইন্স থেকে আগত ২৫জন পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক অবস্থান করবেন। গজারিয়া থানা থেকে ১৫জন পুলিশ সদস্য নিয়মিত সেখানে আসা-যাওয়া করবেন। সেই হিসেবে ৪০জন পুলিশ সদস্য সেখানে অবস্থান করবে। পাশাপাশি নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ড সদস্যরা নিয়মিত ক্যাম্প সংলগ্ন নদীতে নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনা করবে। পুলিশ ক্যাম্পটির দায়িত্বে থাকবেন গজারিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো.শহীদুল ইসলাম।
স্থানীয় বাসিন্দা নেয়ামত উল্লাহ বলেন, 'এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এই ক্যাম্পটি ঘিরে আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষা অনেক। সমগ্র ইউনিয়নে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে এ ক্যাম্পটি বিশেষ ভূমিকা পালন করবে'।
স্থানীয় বাসিন্দা সিয়াম বলেন, 'মানুষজন আমাদের ডাকাত বলে। পুলিশি তদারকি কম থাকায় বিভিন্ন এলাকার অপরাধীরা এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছে। কতিপয় কিছু লোকের কারণে আমাদের এলাকার মান সম্মান নষ্ট হচ্ছিল। দেরিতে হলেও এই উদ্যোগটি গ্রহণ করায় জেলা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই আমরা'।
এদিকে শুক্রবার (২২ আগস্ট) দুপুরে দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে ক্যাম্পটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালু করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম, গজারিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডা. হামিদা মুস্তফা, গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার আলম আজাদ, গজারিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো.শহীদুল ইসলাম।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, 'গজারিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল গুয়াগাছিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। যাক আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে অবশেষে আমরা কাজটি শুরু করতে পারলাম। আশা করছি এখন থেকে গুয়াগাছিয়ায় পূর্ণ শক্তি নিয়ে পুলিশ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন'।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, 'এই অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ করে রাতের আঁধারে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে এই ক্যাম্পটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা করি'।
বিষয়টি সম্পর্কে মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার বলেন, 'এবার গুয়াগাছিয়ায় সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা কমে আসবে। যেহেতু সার্বক্ষণিক পুলিশ এখানে অবস্থান করবে যেকোনো ঘটনা ঘটলে তৎক্ষণাৎ পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারবে'।
কেকে/এআর