পটুয়াখালীর বাউফল পৌরসভার ময়লার ভাগারের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পৌরবাসী। থানার পিছনে রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় অপরিকল্পিতভাবে ফেলা ময়লা ও আবর্জনা পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। চারদিকে দুর্গন্ধ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। মশা-মাছি ও পোকামাকড়ের উপদ্রবে দিশিহারা হয়ে পড়েছে পৌরবাসী। বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে ভাগারের আশপাশ। এর থেকে বাঁচতে অনেকে বাড়ি ঘর বিক্রি করে অন্যত্র যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, বাউফল পৌরসভা ২০০১ সালে গঠিত হওয়ার পর বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এটি দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় উন্নীত হয়। এই পৌরসভায় মোট ৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। পৌরসভার মোট আয়তন-৩.১৭৫ বর্গকিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পৌরসভার মোট জনসংখ্যা ১৯ হাজার ৬০০। শিক্ষার হার-৬৯.৬৯। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ভূমি অধিগ্রহন ছাড়া উপরন্তু খোলা স্থানে বিপুল পরিমাণ ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
তবে বাউফল পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে খুব শিগগিরই এখানে পরিবেশবান্ধব গার্বেজ সেন্টারের কাজ শুরু হবে। তখন এ সমস্যা থাকবে না।
রোববার (১০ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বাউফল থানার পিছনে সড়কের পাশে বাজার এলাকা জুড়ে ময়লার স্তূপ। পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা থেকে ময়লা এনে ফেলা হয় এখানে। বিভিন্ন ধরনের পলিথিন, কাগজ, খাবারের উচ্ছিষ্ট, প্লাস্টিক পণ্যসহ নানা ধরনের ময়লা। ময়লার স্তুপের ওপর কুকুর, কাক ও বিভিন্ন ধরনের পাখি খাবার খাচ্ছে। দুর্গন্ধে নাক চেপে চলাচল করছেন পথচারীরা। প্রতিদিনই এমন চিত্র চোখে পড়বে ওই এলাকায় গেলে।
মো. সাইফুল ইসলাম নামে এক পথচারী বলেন, প্রতিদিন সকাল বিকাল কাজের জন্য এই পথ দিয়ে যাওয়া-আসা করতে হয়। এত দুর্গন্ধ যে নাক বন্ধ করে যেতে হয়। খুবই কষ্ট হয় আমাদের। শুধু আমি নয়, প্রতিদিন কয়েক শত মানুষ এভাবে কষ্ট পায়।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. মানিক বনিক বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে আমরা রোগাক্রান্ত হয়ে যাচ্ছি। শান্তিতে খাবার খাওয়ারও উপায় নেই আমাদের। বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে এই এলাকা। এমনকি এখানে হাসপাতালের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। বাউফলে যতগুলো ক্লিনিক আছে ক্লিনিকে যে সিজার হয়, সিজারের বিষাক্ত ময়লা এখানে ফেলা হয়। যা কুকুরে টেনে হিছরে রাস্তায় নোংরা করে থাক। এছাড়া বাজারে কুকুর বিড়াল মারাগেলে সগেুলোও এখানে ফেলে যায়। আমরা এ থেকে পরিত্রাণ চাই।
টুম্পা রাণী নামে এক নারী বলেন, দুর্গন্ধে দরজা জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। তাতেও গন্ধ কমে না। খুবই অসহায় লাগে তখন। মনে হয় ঘর-বাড়ি বিক্রি করে অন্য কোথাও চলে যাই।
গৌবিন্দ বনিক বলেন, ময়লা-আবর্জনা, মশা-মাছি ও পোকামাকড়ের উপদ্রবে মাঝে মধ্যে দিশিহারা হয়ে পড়ি। ময়লায় আগুন দিলে যে ধুয়া হয় তার গন্ধে খুব অসুবিধায় পরতে হয়। মনে চায় বাসা বাড়ি ছাইড়া অন্যত্র চলে যাই।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হুমায়ুন কবির বলেন, বাউফল পৌরসভার আবর্জনা অপসারণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য ডাম্পিং প্লেস না থাকায় ময়লা ফেলার স্থানে দুর্গন্ধ আসে। বৃষ্টির সময় ময়লা ও ময়লাযুক্ত পানি রাস্তায় চলে আসার পাশাপাশি স্থানীয়দের বাড়িতেও প্রবেশ করে। একটা বিরক্তিকর ও অস্বাস্থ্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। এখানে বসবাস করা খুবই কষ্টের হয়ে গেছে স্থানীয়দের। ইতি পূর্বে অনেক পথিক ও শিক্ষার্থীরা দুর্গন্ধেরর কারণ শ্বাষকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আাক্রন্ত হয়েছে। বাজার ব্যবসায়ীরা, বনিক পাড়ার বাসিন্দারা, সর্বজনীন কালি মন্দরী আসা ধর্মলম্বী ব্যক্তিবর্গ।
পরিবেশ অধিদপ্তর, পটুয়াখালী উপ-পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পৌরসভার নিজস্ব আইন দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। তারাই এর ব্যবস্থা নেবে। তবে কেউ অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা পৌরসভাকে চিঠি দেব।
পৌরসভার প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম জানান,বাউফল পৌরসভার আবর্জনা অপসারণ ও ব্যবস্থাপনার ডাম্পিং প্লেস নির্মাণের জন্য পৌরসভার নিজস্ব জমি না থাকায় এটা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমাদের জমি ক্রয়ের চেষ্টা চলছে।
বাউফল পৌরসভার (দায়িত্ব প্রাপ্ত পৌর প্রসাসক) ও বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, অচিরেই পৌরসভার নামে জমি ক্রয় করে ময়লা ও আবর্জনা অপসারণ পৌরসভার বর্জ্যকে আধুনিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা হবে। তিনি আরো বলেন, পৌরসভার বর্জের দুর্গন্ধ যাতে না আসে সেজন্য নিয়মিত ব্লিসিং পাউডার দেওয়া হয়। সময় সময় আগুন দিয়েও বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা হয়, যাতে অতিরিক্ত গন্ধ তৈরি না হয়। সব মিলিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতে কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে কাজ করা হবে। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট চালু হলে এসব সমস্যা থাকবে না। সেই সঙ্গে এলাকার মানুষও উপকৃত হবে বলে দাবি করেন তিনি।
কেকে/এআর