পাকা ভবনের নিচে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা, টিকিট কাউন্টার এমনকি যাত্রীদের কেনাকাটার জন্য দোকানঘর সবই আছে। নেই শুধু বাস, আর যাত্রীদের কোলাহল। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাসট্যান্ডে গেলে এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে।
বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাসস্ট্যান্ডে নেই কোনো যানবাহন। গোটা বাসট্যান্ড খাঁ খাঁ করছে। ভেতরে বাসের কাউন্টার ও মাঠে গাড়ি রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকলেও, বাস থামে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে মহাসড়কের ওপর। ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরাও সেই সড়ক থেকেই গাড়িতে ওঠেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাসস্ট্যান্ডের যাত্রীছাউনীর মেঝেতে পড়ে আছে গরু-ছাগলের বর্জ্য, জমে আছে দূষিত পানি, সিগারেটসহ মাদকসেবনে নানা অনুষঙ্গ। কোনো বাস দাঁড়ায়ও না। অথচ বাসস্ট্যান্ডের সামনের ব্যস্ততম ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের ওপরই চলছে লোকাল ও দূরপাল্লার বাসসহ হাজারও যাত্রীবাহী যানবাহন। অযত্ন, অবহেলা আর অব্যবস্থাপনায় নষ্ট হচ্ছে এই বাসস্ট্যান্ড।
জানা গেছে, ২০০৬ সালে জেলা পরিষদের বাস্তবায়নে ৩ লাখেরও বেশি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় এই বাসস্ট্যান্ড। রেলওয়ের ৪০ শতাংশের বেশি জমির ওপর নির্মিত বাসস্ট্যান্ডটি গত ১৬ বছরেও ব্যবহারের আওতায় আনা হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৬ সালে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহ্ নূরুল কবির শাহিন বাসস্ট্যান্ডটির উদ্বোধন করেন।
শুরুর পর উপজেলা প্রশাসন ও ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভা কিছুদিনের জন্য পরিবহনগুলোকে এখানে নিলেও কয়েক বছরের মাথায় আবারও সেগুলো চলে যায় শহরের মধ্যে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে তীব্র যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহর।
মাজহারুল ইসলাম নামে এক যাত্রী জানান, বাইরে থেকে সবকিছু বেশ সুন্দর এবং পরিপাটি দেখা গেলেও বাসট্যান্ডের ভেতরের অবস্থা খুবই করুণ। সেখানে বখাটে ছেলে ও মাদকসেবীদের আবাসস্থল–রাতভর চলে মাদকসেবীদের বিচরণ। চাঁদাবাজি ও চুরি-ছিনতাইসহ নানা সমস্যার কারণে একটা সময় সাধারণ মানুষ এদিকে আসতেই চাইতো না।
স্থানীয়রা জানান, ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাসস্ট্যান্ডটি কার্যকর করতে পারলে মূল শহরের যানজট কমে আসবে। পথচারী ও পৌরবাসীদের ভোগান্তিও কবে যাবে। মূলত এ কারণেই এখানে বাসস্ট্যান্ডটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সব ধরনের সুবিধা থাকার পরও বাসস্ট্যান্ডটি পড়ে আছে। আর যানবাহনগুলো ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে, তৈরি হচ্ছে যানজট।
তবে চালকরা জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে ও বাসস্ট্যান্ড শহরের বাইরে হওয়ায় সেখানে যাত্রীরা যেতে চান না।
বাসস্ট্যান্ডের উদ্বোধক সাবেক সংসদ সদস্য শাহ্ নূরুল কবির শাহিন বলেন, পৌর শহরকে যানজট মুক্ত ও জনসাধারণের চলাচলের পথ সুগম করার জন্য ২০০৬ সালে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে পৌর বাজার থেকে একটু বাহিরে বাসস্ট্যান্ড স্থানান্তর করে নতুন বাসট্যান্ড করেছিলাম। কয়েক বছর ভালোই চলছিল। পরে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে নজরদারির অভাবে এটি অকেজো হয়ে পড়ে। সামনে সুযোগ পেলে বাসস্ট্যান্ডটিকে আবারও সচল করে তুলব।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পৌর প্রশাসক সালাউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। কেবলমাত্র পৌরসভার দায়িত্ব নিয়েছি। নথিপত্র দেখে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) সানজিদা রহমান বলেন, আমি যতটুকু জেনেছি এই বাসট্যান্ডে রাতের বাসগুলো থামে। তারপরও নথিপত্র দেখে এসিল্যান্ডকে ব্যবস্থা নিতে বলবো।
কেকে/এজে