রাজধানীর উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ১৪ বছরের শিক্ষার্থী মাহতাব রহমান ভূঁইয়াকে বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লার দেবীদ্বারের চুলাশ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাত পৌনে ১০টার দিকে জানাজা শেষে মাহতাবের দাফন সম্পন্ন হয়। পরদিন শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় সরেজমিনে তার বাড়িতে গেলে দেখা যায়, বাড়ির আঙিনায় পড়ে আছে জানাজায় ব্যবহৃত খাটিয়া। তখন মা লিপি আক্তার ও বাবা মিনহাজুর রহমান ভূঁইয়া হাসপাতালে ছিলেন মেয়ে নাবিলার সঙ্গে।
মাহতাবের চাচা তানভীর হায়দার ভূঁইয়া জানান, ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে নাবিলা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিল। ভাইয়ের সুস্থতার জন্য মানত করে সে এক মাস রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় এবং দুর্ঘটনার দিন থেকেই রোজা শুরু করে। কিন্তু মাহতাব দুপুরেই চলে যায়।
ছবি : সংগৃহীত
বেলা পৌনে ১টার দিকে মাহতাবের বাবা মিনহাজুর রহমান বাড়িতে ফেরেন। তিন সন্তানের মধ্যে মাহতাব ছিল দ্বিতীয়। বড় বোন নাবিলা একই স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ে, আর মাহতাব ছিল ইংরেজি মাধ্যমের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মাহতাবের বাবা বলেন, আমরা অনেক জায়গায় খুঁজছিলাম। হঠাৎ অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। চিকিৎসক বলেন, আপনার ছেলের অবস্থা গুরুতর। পরে জানলাম, ছেলেটা নিজেই চিকিৎসককে বলেছিল, আঙ্কেল, আমার আব্বুকে একটা কল দেন। সে আমার নম্বর বলে দেয়।
তিনি বলেন, আমরা সেখানে পৌঁছালে ছেলেটা উলটো আমাদের সান্ত্বনা দিয়ে বলে, আমার সঙ্গে যারা ছিল সবাই মারা গেছে। তোমরা টেনশন করো না, আমি সুস্থ হয়ে যাব, ইনশাল্লাহ। ছেলেটার সেই কথাগুলো এখনো কানে বাজে।
আইসিইউতে ছেলেটি বারবার বলছিল, আমার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। আমি জুস খাব, পানি খাব। প্রথমেই সে মাকে দেখতে চেয়েছিল। পরে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে আমি তাকে জুস আর জমজমের পানি খাওয়াই।
ছবি : সংগৃহীত
আমার ছেলে বলেছিল, তোমরা টেনশন করো না, আমি শ্বাস নিতে পারছি। কিন্তু সে তার কথা রাখতে পারল না। আমাদের ছেড়ে চলে গেল।
মাহতাবের ফুফু আকলিমা ভূঁইয়া বলেন, আর ১০ মিনিট দেরি হলে হয়তো এমনটা হতো না। মাহতাবের ক্লাস পরীক্ষা ছিল, সে একাই স্কুলে যায়। আর সেদিনই এমন দুর্ঘটনা ঘটে গেল।
দাদা দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, নাতিটা গ্রামে আসতে পাগল ছিল। পুকুরে মাছ ধরত, গোসল করত, আমার সঙ্গে বাজারে যেত। সেই প্রাণবন্ত ছেলেটাকে আর কখনো দেখতে পাব না—এই শোক কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।
উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই বেলা সোয়া একটার দিকে মাইলস্টোন স্কুলের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩২ জন এবং চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫৭ জন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।