কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নের দ্বাড়িয়াকান্দি গ্রামের একমাত্র মাটির রাস্তার বেহাল দশায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ১.৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রাস্তাটি বহুদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে তা কাদামাটিতে পরিণত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার (২৩ মে) দুপুরে সরেজমিনে কুলিয়ারচর-দ্বাড়িয়াকান্দি ডিসি রোডের তায়েব উদ্দিন মিয়ার দোকান হতে কমিউনিটি ক্লিনিক ভায়া ভৈরব-ময়মনসিংহ বিশ্ব রোড পর্যন্ত ১.৩৫ কি.মি. রাস্তায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটি বর্তমানে চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মাটি ও বৃষ্টির পানির সংমিশ্রণে কাদার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অনেক ড্রেইন ও গর্তের। এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ চলাচল করে থাকে। কিন্ত কোনো প্রকার যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ওই গ্রামের শতাধিক পরিবারের মানুষ এলাকার বাইরে যাওয়ার অন্যতম রাস্তা এটি। ফলে চাকরিজীবী থেকে শুরু করে স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা সবাই এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। জরুরি রোগী নিয়ে যেতে হলে কোনো যানবাহন এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে না পারায় রোগী নিয়ে যেতে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। রাস্তার বেহাল দশার কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, একাধিকবার স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে রাস্তাটি সংস্কারের জন্য দাবি জানিয়ে আসলেও কেউ কোনো কাজ করেননি। প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে থাকে। তাদের চলতে খুবই সমস্যা হয়। প্রায় সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে এ রাস্তাতে। অসুস্থ কোনো ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই অনেক ভোগান্তি নিয়েই এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয় গ্রামবাসীর। বিশেষ করে বৃষ্টিতে রাস্তাটি একদম চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তারপরও শত ভোগান্তি নিয়েই এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে গ্রামবাসীর।
গ্রামের অনেকেই বলেন, এ গ্রামে ছয়সূতী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মোসলিম উদ্দিন রতন মিয়ার বাড়ি। যে কারণে দীর্ঘ ১৭ বছর এই গ্রামের রাস্তাটির কোনো কাজ বা সংস্কার করা হয়নি। বর্ষা বা সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি ভেঙে প্রায় ৫-৭ হাজার মানুষের চলাচলের বিঘ্ন ঘটে। প্রতি বছর গ্রামবাসীর অর্থায়নে ভাঙা রাস্তা কোনোরকম সংস্কার করে পায়ে হাঁটার উপযোগী করা হয়। দ্রুত এ রাস্তাটি মেরামত করার ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানান এলাকাবাসী।
দ্বাড়িয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ও ছয়সূতী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মোসলিম উদ্দিন রতন বলেন, প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে থাকে। তাদের চলতে খুবই সমস্যা হয়। প্রায় সময়ই দুর্ঘটনার শিকার হয় এ রাস্তাতে। অসুস্থ কোনো ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই অনেক ভোগান্তি নিয়েই আমাদের এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এ রাস্তার পাশে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। ডাক্তার ও নার্স আস-যাওয়া, শিশুদের পলিও টিকাসহ গ্রামের সাধারণ মানুষের সর্দি, কাশি ও জ্বরের ঔষধ আনতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি দ্রুত এ রাস্তা মেরামত করার ব্যবস্থা করেন।
একই গ্রামের বাসিন্দা ও ছয়সূতী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল মিয়া বলেন, প্রতিদিনই আমাদের এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। বৃষ্টিতে রাস্তাটি একদম চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তারপরও শত ভোগান্তি নিয়েই এ রাস্তা দিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে হয়। রাস্তাটি সংস্কার করা অতীব জরুরি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ছয়সূতী ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সদস্য সচিব মো. বুরহান উদ্দিন বলেন, ছয়সূতী ইউনিয়নের মধ্যে মনে হয় এত খারাপ রাস্তা আর কোথাও নেই। এ রাস্তার মধ্যে সরকারি একোয়ার আছে আধা কিলোমিটার বাকিটুকু জনগণের দেওয়া। এ রাস্তাটি দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার না হলে এলাকায় মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হবে।
এ বিষয়ে ছয়সূতী ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড সদস্য মো. আমিনুল ইসলাম রুমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সপ্তাহ খানেক আগে এ রাস্তা সংস্কারের বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের একটি মিটিংয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে আশ্বস্ত করেছেন কিছু দিনের মধ্যে এ রাস্তাটির সংস্কার কাজ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন।
এ বিষয়ে ছয়সূতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কেকে/এএম