সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
দেশজুড়ে
তাঁতশিল্পী খ্যাত বাবুই পাখি এখন বিলুপ্তির পথে
মাসুম বিল্লাহ, শালিখা (মাগুরা)
প্রকাশ: শনিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৫, ২:০৮ পিএম আপডেট: ০৫.০৪.২০২৫ ৫:১১ পিএম
আড়পাড়া ইউনিয়নের আনন্দনগর গ্রামের মাঠ থেকে তোলা।

আড়পাড়া ইউনিয়নের আনন্দনগর গ্রামের মাঠ থেকে তোলা।

বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্রালিকার পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি ঝড়ে। বাসা তৈরিতে যার নিপুণ কাজ সে তো শিল্পের বড়াই করতেই পারে। 

কিন্তু কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী কবিতাটির নায়ক গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বাবুই পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। প্রতিকূল পরিবেশ, বৈরী আবহাওয়া, শিকারীর উপদ্রব ও নির্বিচারে বৃক্ষ রোধনসহ নানা কারণে তাঁত পাখি নামে পরিচিত এই নিপুণ নীড় তৈরির গারিগরগুলো আজ হুমকিতে। এক সময় গ্রাম্য বাড়ির বাইর উঠানে তালগাছের পাতায় পাতায় দেখা যেত বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা। কিন্তু গ্রামের পথ ধরে অনেকসময় হাঁটলেও এখন বাবুই ও তার বাসা চোখে মেলা ভার।

নিখুঁত শিল্পের কারুকাজ মন্ডিত নীড় তৈরির জন্য বাবুই পাখিকে শিল্পের কারিগর বলা হয়। নানা কারণেই পাখিদের মধ্যে বাবুই পাখিই সেরা। এক সময় ঐতিহ্যবাহী মাগুরা তথা শালিখা উপজেলার বসতবাড়ি কিংবা সড়কের পাশে উঁচু নারকেল, খেজুর, রেইনট্রি, সুপারী, তালগাছসহ বিভিন্ন গাছের মগডালে অসংখ্য বাবুই পাখি ও দৃষ্টিনন্দন বাসার দেখা মিলত। 

কালের বিবর্তণে এসব পাখির উপস্থিতি আর তেমন চোখে পড়েনা। বিভিন্ন তথ্যমতের ভিত্তিতে জানা গেছে, পৃথিবীতে প্রায় ১১৭ প্রজাতির বাবুই পাখি রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে ৩ প্রজাতির বাবুই পাখির বাস রয়েছে। এগুলোর মধ্যে দেশী বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই। দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও এ ধরণের বাবুই পাখির বিচরণ নেই।

বাংলা ও দাগি বাবুই এর দেখা না মিললেও মাঝেমধ্যে শোনা যায় দেশি বাবুইপাখির মন মাতানো কিচিরমিচির শব্দ। কথিত আছে পুরুষ বাবুইর তৈরি বাসা পছন্দ হলেই স্ত্রী বাবুই ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে। বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো রাতের আঁধারে বাসা আলোকিত করার জন্য জোঁনাকি পোকা ধরে বাসায় এনে রাখে। নিজের ঠোঁট দিয়ে তৈরি বাসাটিকে সর্বোচ্চ আগলে রাখে ঝড় বৃষ্টির সময়। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ভাটোয়াইল, গঙ্গারামপুর, শ্রীহট্ট, বইখোলা, কুয়োতপুর, শরশুনা, আনন্দনগরসহ  বিভিন্ন এলাকার বসতবাড়ি কিংবা সড়কের পাশে উঁচু গাছে বাবুই পাখির বাসা। এর মধ্যে বেশিরভাগ তালগাছের পাতায় বাবুইরা বাসা বেঁধেছে। শুরুতে বাসায় দুটি নিম্নমুখী গর্ত রাখে। মাত্র চার দিনে বাসা বাঁধার কাজ শেষ করে। বাসার নিম্নমুখী একটি গর্ত বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গা করে নেয়। অন্যটি খোলা রাখে প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য। বাসার ভেতরে-বাইরে কাদা লাগিয়ে রাখে। ফলে প্রবল ঝড়ে বা বাতাসেও টিকে থাকে বাসা। 

সাধারণত মে থেকে আগস্ট মাস বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। বাবুই পাখি দুই থেকে চারটি ডিম দেয়। স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা ফোটে। তিন সপ্তাহ পর বাচ্চা উড়ে যায়। এরা মূলত বীজভোজী পাখি। এরা সাধারণত খুঁটে খুঁটে বিভিন্ন ধরনের বীজ, ধান, ভাত, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু-রেণু ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে। বাবুই পাখিরা তালগাছ-খেজুর গাছে বাসা বাঁধতে পছন্দ করলেও এসব গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে অন্যান্য গাছেও বাসা বাঁধতে দেখা গেছে। তবে পাখি শিকারীদের দৌরাত্ম্যে বাবুই পাখিগুলো এখন চরম হুমকিতে। স্থানীয়রা বলছেন, বর্তমানযুগে কোনো কোনো স্থানে বাবুই পাখি দেখা তার সংখ্যা খুবই কম। 

কালের বিবর্তণে ঐতিহ্যবাহী বাবুই পাখি দিনদিন বিলুপ্তির পথে। কারণ হিসেবে দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, বৈরী আবহাওয়া,  বিরুপ পরিবেশ, উচু গাছের সংখ্যা হ্রাস বলে মনে করছেন সচেতল মহল।

এ ছাড়াও পাখি শিকারীর  কবলে পড়ে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামগঞ্জের চিরচেনা রূপ। আনন্দনগর গ্রামের ইকতার লস্কার বলেন, দীর্ঘ ছয় মাস ধরে আমার একটি তালগাছে বাবুই পাখি বাসা বেঁধেছে তবে শিকারীদের উৎপাতে তারা সেখান থেকে চলে যাচ্ছে।

আড়পাড়া ইউনিয়নের শ্রীহট্ট গ্রামের রাজু আহমেদ বলেন, আমাদের বাড়ির পাশে একটি গাছে বাবুই পাখি বাসা বেঁধেছে যা দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্র-ছাত্রী ও পাখি প্রেমী মানুষরা দেখতে আসত, কিন্তু এখন আর সেখানে কোনো বাবুই পাখি নাই। একই ইউনিয়নের আনন্দনগর গ্রামের বিল্লাল হোসেন বলেন, আগে আমাদের বেশ কয়েকটি তালগাছে বাবুই পাখির বাসা ছিল, কিন্তু শিকারীদের তাণ্ডব ও গাছগুলো কেটে ফেলার কারণে এখন তা অনেক কমে গেছে। বিলুপ্ত প্রায় এই প্রাণীগুলোর অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন পাখি প্রেমী মানুষেরা।

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

মধ্যরাতে ঢাবি ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ
ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে : তানভীর হুদা
পাল্লা বাজারে রক্তলাল শাপলার মনভোলানো সমাহার

দেশজুড়ে- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close