ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জমে উঠেছে শতবর্ষী জিয়সতলা মেলা

মাহবুব আলম প্রিয়, রূপগঞ্জ
🕐 ৪:০৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪

জমে উঠেছে শতবর্ষী জিয়সতলা মেলা

রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া গ্রামের জিয়সতলা গ্রামে মেলাটি বসছে শত বছরের বেশি সময় ধরে। চার দিনের এই মেলাটি প্রতিবছর ৮ ফাল্গুন বসে। আশপাশের দশ গাঁয়ের মানুষ আসে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা এই মেলার অংশ নিতে। এবারও মেলাটি বসেছে বুধবার থেকে। শেষ হবে আগামী রবিবার। মাঘীপূর্ণিমা উপলক্ষ্যে এ মেলায় চলে কীর্তন।

বুধবার রাতে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, পণ্যের পসরা নিয়ে এসেছেন নানা স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। মিষ্টান্ন, খেলনা, চুড়ি, ফিতা, আলতা থেকে ঘর গৃহস্থালির বিচিত্র জিনিস। জিলাপিই ভাজা হচ্ছে কয়েকটি দোকানে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে নাগরদোলা। মেলাটা শুধু মেলা প্রাঙ্গনেই সীমিত নয়, এ উপলক্ষে জামাতা ও আত্মীয়স্বজনকে আমন্ত্রণ করে আপ্যায়ন করার রেওয়াজও যথারীতি চলেছে। বাড়িতে বাড়িতে বানানো হয়েছে খই, মুড়কি, নারকেলের ও চালের আটার নাড়ু।

মেলায় ঘুরতে আসা মাহমুদুল হাসান নয়ন বলেন, ‘মেলা থেকে আগে পেতাম মাটির হাঁড়ি ঝুলিয়ে রাখার জন্য পাটের তৈরি শিকি (শিকা)। সেই শিকি এখন আর নেই।’

মেলাটির আয়োজক কমিটির সভাপতি বাবু সুনীল সরকার, শংকর চন্দ্র সরকার, সুশীল সরকার, হরি চন্দ্র সরকার বললেন, ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে একই দিনে মেলাটি বসছে। দূরদূরান্তের মানুষ এখনো আসছে মেলায় যোগ দিতে। সে কারণে সব রকমের সুবিধা রাখতে আয়োজক কমিটি প্রায় এক মাস আগে থেকে সব প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। এবারও সে রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশপাশের মুসলমানরা মেলায় সহযোগীতা করে থাকেন। মেলা উপলক্ষ্যে প্রতিদিন কীর্ত্তনের আসর বসবে। শনিবার রাতে বসবে অষ্টকালীন লীলা কীর্তন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুম আহম্মেদ বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মেলার ইতিহাস ধরে রাখতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছে কায়েতপাড়া গ্রামের লোকজন। প্রতিবছর তাঁরা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে অব্যাহত রেখেছেন এই মেলাটির আয়োজন।

মেলায় দেখা যায়, নানা বয়সী মানুষের পদচারনায় মুখর। গ্রামীণ মেলার মুখোরচোক খাবার থেকে শুরু করে খেলনা, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, নাগরদোলায় চেপে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা মেলেছিল শিশুর দল। গৃহবধূরাও ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন মেলা প্রাঙ্গণে। সভ্যতা, সংস্কৃতি আর শেকড়ের টানে সবাই ছুটে এসেছিলেন মেলায়। যে কারণে এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎসবের আমেজ। উপজেলার কায়েতপাড়া গ্রামবাসীর উদ্যোগে এই মেলা চলে আসছে শত বছরেরও বেশি সময় ধরে।

নগরপাড়া থেকে এসেছে রাশেক আহমেদ রাহিদ ও রওনক আহমেদ রাশিদ দুই ভাই। তারা বলে, প্রতি বছর এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করি। গ্রামীণ মেলায় সবার সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। মেলায় গ্রামীণ ঐতিহ্যের জিনিসপত্র, খাবার দাবার পাওয়া যায়। ভাল লাগে। খাবার বিক্রেতা ইনার উদ্দিন বলেন, নিমকি, জিলাপি, মন্ডা, মিঠাই, বিন্নি ও খইসহ হরেক রকম গ্রামীণ খাবার বিক্রি করতে মেলায় এসেছি। প্রতি বছর আসি। আমার বাপ-দাদারাও এ মেলায় আসতেন।

কায়েতপাড়ার জনপদ উৎসবের আমেজে রঙিন হয়ে ওঠেছে। দোকানিরা জিয়সতলার শ্রী শ্রী বনদূর্গা আশ্রম মেলার মাঠে পসরা সাজিয়ে বসেছে। প্রায় শত বছরের পুরনো জিয়সতলার বটতলার এ গ্রামীণ মেলা। শুরুতে মেলাটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও বর্তমানে তা সব ধর্মের মানুষের উৎসবে পরিণত হয়েছে। তিলা, কদমা, নিমকি, শখের মিঠাই, চানাচুর, মাসের বোরা, খই, বাতাসা ও হরেক রকম খাবারের ঘ্রাণে ভারি হয় মেলার প্রান্তর। মেলা হবে আর চটপটি-ফুচকা হবে না, তা কি হয় ? আলু-ডাবলির সঙ্গে তেঁতুলের পানি মেশানো ঝাল-টক চটপটি নস্টালজিক বয়স্কদের জিভেও পানি আসে। তাই মেলায় চটপটি-ফুচকা ছাড়া কল্পনাও করা যায় না। কায়েতপাড়া এলাকার মিতু সরকার বলেন, বিকালে মেলার চটপটি ফুসকা না খেলে মনই ভরে না। দল বেঁধে প্রতিদিন চটপটি খাবো। এ মেলাটি আমাদের ঐতিহ্য।

রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র বলেন, মেলায় যাতে কোনো প্রকার জুয়া বা অসামাজিক কার্যক্রম এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি না হয় সে জন্য সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মেলা কর্তৃপক্ষ অনুমতিও নিয়েছে।

 
Electronic Paper