রহস্যময় প্রাণী ইয়েতি
অলোক আচার্য
🕐 ১:৩৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৩, ২০২১
গল্প, উপন্যাস বা সিনেমায় এমন অনেক চরিত্র বা কাল্পনিক বিষয় উঠে আসে যার সত্যতা থাকে না। আবার দেখা যায়, কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব নিয়ে তুমুল আলোচনা, রহস্য যা নিয়ে রীতিমতো গল্প বা সিনেমা তৈরি হয়েছে আদতে যার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম প্রমাণ কেউ দিতে পারেনি। ঠিক এরকম একটি প্রাণীর নাম হলো ইয়েতি। প্রাণীটি এমন একটি রহস্য যা সারা পৃথিবীকে রহস্যের জালে বেঁধে রেখেছে। প্রাণীটিকে তুষারমানবও বলা হয়।
বিখ্যাত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পাহাড়চূড়ায় আতঙ্কে ইয়েতির রোমাঞ্চকর কথা রয়েছে। প্রাণীটির দেহ ধূসর কালো বা লালচে বাদামি পশমে ঢাকা। বেশ শক্তপোক্ত দেহ। মূলত বরফের স্থানেই বিশেষত হিমালয় অঞ্চলে (নেপাল, চীন,ভারত) প্রাণীটির অস্তিত্ব আছে বলে ধারণা করা হয় বলেই তুষারমানব নামটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ইয়েতি হিমালয় অঞ্চলে সীমাবদ্ধ না থেকে তা পশ্চিমাদেশেও পৌঁছে যায়। ইয়েতি অভিযান নামে কিন্তু একটা সিনেমাও রয়েছে।
আর হ্যাঁ, মানব শব্দটি দেওয়ার কারণ সম্ভবত প্রাণীটির আকৃতি মানুষের সঙ্গে মিলে যায়! মানে মানুষের মতো দুই পা আছে তবে দেহ আকৃতি পশমে ঢাকা ভালুকের মতো। অনেকে আবার ইয়েতিকে নরবানর জাতীয় কোনো প্রাণী মনে করেন। এটি হিমালয় অঞ্চলের কল্পিত জীব যা নিয়ে বহুযুগ ধরেই রহস্য ঘনীভূত হয়েছে। অর্থাৎ কেউ কেউ সত্যি সত্যি বিশ্বাস করেন যে প্রাণীটির অস্তিত্ব আছে। এরও কারণ আছে। প্রাণীটিকে দেখার দাবিও করেছে কেউ কেউ। অর্থাৎ প্রত্যক্ষদর্শী আছে! এমনকি বিরাট আকৃতির প্রাণীর পায়ের ছাপের ছবি তোলা হয়েছে যাকে অনেকেই ইয়েতির পায়ের ছাপ বলে থাকেন। অনেকে আবার অস্বীকার করেন। প্রমাণের অভাবে দ্বিধান্বিত থাকে সবাই।
উইকিপিডিয়ার তথ্যে দেখা যায়, ১৮৩২ সালে দিকে অভিযাত্রী হাডসনের বর্ণনার পর ইয়েতির ব্যাপারে সারা বিশ্ব আগ্রহী হয়ে ওঠে। এরপর ১৮৯৯ সালে লরেন্স ওয়েডেল নামের এক অভিযাত্রী দাবি করেন তিনি ইয়েতির পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ইয়েতি প্রসঙ্গে আবারো বিশ^জুড়ে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। ১৯১৩ সালে একদল চৈনিক শিকারি হিমালয়ের তুষার ঢাকা অঞ্চলে সারা শরীর কয়েক ইঞ্চি লম্বা রূপালি হলুদ চুল বা লোমে ঢাকা বানরের মতো কুৎসিত থ্যাবড়া মুখাকৃতির বিকট একটি প্রাণী দেখেছে। তাদের বর্ণনা মতে, প্রাণীটি অনেকটা মানুষের মতোই চলাফেরা করে। প্রাণীটির পায়ের ছাপ দেখা কর্নেল লি কেক হাওয়ার্ড বেরির নেতৃত্বে একদল অভিযাত্রীর বর্ণণাও রয়েছে।
এরপর ১৯২২ ও ১৯২৩ সালেও প্রাণীটিকে দেখার বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে আলোড়ন সৃষ্টি হয় যখন এক হিমালয় অভিযাত্রী অতিকায় প্রাণীর পদচিহ্ন দেখতে পেয়ে তার ছবি তুলে আসেন এবং সেই ছবি তুলে আনেন। ১৯৮৬ সালে অ্যান্থনি উলরিজ নামক একজন হাইকার ইয়েতি দেখেন বলে দাবি করেন। ছবিও তুলেছিলেন। পরে অবশ্য সেই স্থানে গিয়ে বোঝা যায় সেটি ছিল একটি পাথুরে পৃষ্ঠের ওপরের অংশ।
তবে বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। যাই হোক ইয়েতি বা তুষারমানব আসলে এখন পর্যন্ত কল্পিত একটি প্রাণী যারা নিভৃত গুহায় বসবাস করে। যদি কখনো ইয়েতি বা তুষারমানব থাকলেও যতদিন তা সত্যি প্রমাণিত না হয় ততদিন তা বাস্তব এবং কাল্পনিক এ দুইয়ের মধ্যেই থাকবে। রহস্য সৃষ্টি করবে। হয়তো সত্যি কোনো ইয়েতির অস্তিত্ব না থেকেও অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গেই ইয়েতির নাম থেকে যাবে!