রংপুরে প্রশাসনযন্ত্রে এখনো বহাল স্বৈরাচারের ছায়া
নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর
🕐 ৮:৪৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৪
শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও রংপুর বিভাগের শীর্ষ প্রশাসনিক পদগুলোতে এখনো বহাল রয়েছে আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট ও অনুগত কর্মকর্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিকাংশ জেলায় শুধুমাত্র পুলিশ বিভাগে রদবদল হলেও বহাল রয়েছে বিভাগীয় কমিশনারসহ ডিসি ও অন্যান্য প্রশাসনিক শীর্ষ কর্মকর্তারা। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের কেন্দ্রস্থল হিসেবে রংপুরের আন্দোলন যে নয়া ইতিহাসের সৃষ্টি করেছিলো গোটা বিশ্বময়, তা মলিন করে দিতে এখনো তৎপর রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ করা কর্মকর্তারা।
এদিকে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারসহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে এখনো হাসিনা সরকারের অনুগতরা যে বহাল আছেন এবং তাদের যে অপতৎপরতা রয়েছে তা বেশ কয়েকটি কর্মকাণ্ডে প্রমাণ হয়েছে। বিশেষ করে, গত সোমবার তথ্য অধিদপ্তরের রংপুর আঞ্চলিক অফিস থেকে হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বিভাগীয় কমিশনার ও সদ্য সাদেক জেলা প্রশাসকের পক্ষে প্রকাশ করা এক তথ্য বিবরণী নিয়ে তোলপাড় অবস্থার সৃষ্টি হয়। যদিও সমালোচনার মুখে তথ্য বিবরণী প্রকাশের দুই ঘন্টা পর সেটি পুনরায় প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গেল ১৯ জুলাই রংপুর সিটি বাজারের সামনে ছাত্র জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালায় সশস্ত্র পুলিশ। ওই গোলাগুলির ঘটনায় নিহত হন স্থানীয় ফল ব্যবসায়ী মুসলিম উদ্দিন। এই ঘটনায় মুসলিম উদ্দিনের স্ত্রী প্রথমে রংপুর কোতোয়ালি থানায় একটা হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন তার স্বামীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অন্যতম নির্দেশদাতা ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন ও তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান। এরই আলোকে গেল ২৭ আগস্ট নিহত মুসলিম উদ্দিনের স্ত্রী দিলরুবা সিএমএম আদালতে বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেনকে প্রধান আসামি করে তৎকালীন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ মোট ১৭ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালত বাদীর পূর্বের মামলাটি প্রত্যাহার পূর্বক ২৭ আগস্টের মামলাটিকে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করতে কোতোয়ালি থানাকে নির্দেশ দেয়।
আদালতের নির্দেশে মামলাটি কোতোয়ালি থানায় এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত হলে দৌড়ঝাপ শুরু করেন বিভাগীয় কমিশনার ও তৎকালীন জেলা প্রশাসক। এরই ধারাবাহিকতায় তারা বাদীকে ম্যানেজ করে মামলা থেকে তাদের নাম প্রত্যাহারের চেষ্টা চালাতে থাকেন। এক পর্যায়ে বাদীর মাধ্যমে ওই দুই কর্মকর্তার নাম প্রত্যাহারের এফিডেফিট সম্পন্ন করে আদালতে দাখিল করা হয়। যদিও এফিডেভিটের মাধ্যমে হত্যা মামলা থেকে আসামির নাম প্রত্যাহারের কোন আইনগত সুযোগ নেই। এই নাম প্রত্যাহারের বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে গত ২ সেপ্টেম্বর তথ্য অধিদপ্তরের রংপুর আঞ্চলিক অফিস থেকে তথ্য বিবরণী হিসেবে একটি সাফাই তথ্য বিবরণী প্রচার করা হয়। যার তথ্য বিবরণী নং ৫৭। তথ্য বিবরণটির নিচে চারজন কর্মকর্তার সংক্ষিপ্ত নাম উল্লেখ রয়েছে। তারা হচ্ছেন-মামুন, সুরভী, রুপালি ও আয়েশা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর আঞ্চলিক তথ্য অফিসের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ খোলা কাগজকে বলেন, তথ্য বিবরণীটি বিধিসম্মত না হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে তথ্য বিবরণী নীতি প্রচার করা হয়েছিলো মর্মে তাকে প্রশ্ন করলে, তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিসেবে এখন পর্যন্ত বিভাগীয় কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে। মামলার আসামি হয়েও সপদে বহাল থেকে তিনি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন সেটি কতটুকু বিধিসম্মত তা জানতে চাইলে রংপুর জেলা জজ ও আদালতের আইনজীবী পলাশ কান্তি নাগ খোলা কাগজকে জানান, তদন্ত শেষ হওয়া না পর্যন্ত যেকোনো আসামি ইনোসেন্ট। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার নামে চার্জশিট হবে তখন অবশ্যই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে হবে। অন্যদিকে আসামি যেহেতু প্রশাসনিক শীর্ষ কর্মকর্তা, তাই চাইলে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
হত্যা মামলার আসামি হিসেবে কেন এখনো বিভাগীয় কমিশনারের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বহাল আছেন জাকির হোসেন এবং তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুল হাসান ‘মন্ত্রণালয়ের এ পি ডি অনু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রউফ’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তিনি জানান, এটি তার কাজ।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রউফের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।