ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৬ ভাদ্র ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ক্ষোভে ‘আত্মহত্যা’

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
🕐 ৯:১২ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০২৪

বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ক্ষোভে ‘আত্মহত্যা’

জমি থেকে হাঁস তাড়ানোর মতো তুচ্ছ ঘটনায় প্রকাশ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইসরাত জাহান মৌফি। সবার সামনে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয় তাকে। এ ঘটনায় লজ্জায়, ক্ষোভে ‘আত্মহত্যার’ পথই বেছে নেন মেয়েটি। গত বুধবার দুপুরে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের গুড়িয়াদহ গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।

জানা যায়, মৌফির মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। লেখাপড়া শেষ করে মায়ের মতো শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। চলমান এইচএসি পরীক্ষাও দিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে ঘটে এ ঘটনা।

রোববার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে মাতম চলছে। সন্তান হারানো মা জহুরা খাতুন আহাজারি করতে করতে জানালেন এমন লোমহর্ষক ঘটনা কথা। এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইসরাত জাহান মৌফি (১৮) অপমান সইতে না পেরে নিজ ঘরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি বেঁধে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ তাদের।

মৌফির বাবা আব্দুল মতিন মণ্ডল বৃহস্পতিবার রাতে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পাঁচ-ছয় জনকে আসামি করে আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা করেছেন। তবে ঘটনার পাঁচদিন পার হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি। নিহত মৌফি কাউনিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।

মা জহুরা খাতুন পার্শ্ববর্তী সুকান দিঘী এলাকার অভয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁর ভাষ্য, ঘটনার দিন সকাল ৯টার দিকে প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও পরে মারধরের শিকার হন তারা। পরে বড় ছেলে ইউসুফ ইয়ম জোহান, ছোট মেয়ে জান্নাত ও স্বামী মতিন মণ্ডলকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে যান। এ সময় মৌফিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করলেও সে ঘর থেকে বের হতে রাজি হয়নি।

হাসপাতালে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর জানতে পারেন, মেয়ে ফাঁস নিয়েছে। জহুরা খাতুনের অভিযোগ, প্রতিবেশী রওশন ও মমতা তাঁর মেয়ের গোপনাঙ্গে ইট দিয়ে আঘাত করে জখম করেছে। আর বাবা মতিন মণ্ডল বলেন, দিনে-দুপুরে সবার সামনে বাড়ন্ত মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন মেনে নেওয়ার মতো নয়। এটি ধর্ষণের শামিল। তারা এর বিচার দাবি করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, প্রতিবেশী সিরাজ আলী মণ্ডল, সুলতান মণ্ডল ও শাহজাহান আলী মণ্ডলের মধ্যে রাস্তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। গত বুধবার সকালে স্থানীয় মন্জু আলী মণ্ডলের জমিতে কয়েকটি হাঁস নামে। তাঁর স্ত্রী নিহত মৌফির মা জহুরা খাতুনের কাছে হাঁসগুলোর মালিক কে জানতে চান। তিনি মালিক সিরাজুলের নাম বলে দেন।

এরই জেরে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে মতিন মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালান। মারধর করে আহত করেন বাড়ির লোকজনকে। এ সময় মৌফিকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেন তারা। শুধু এতে ক্ষান্ত হননি। বিবস্ত্র অবস্থায় তাঁর সঙ্গে আসামিরা অশালীন ও পাশবিক ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ মেয়েটির পরিবারের।

প্রতিবেশী মন্জু আলী মণ্ডলের অনার্স পড়ুয়া ছেলে সাগর আলী মণ্ডল বলেন, তাদের ধান ক্ষেত থেকে মা লাভলী বেগম হাঁস তাড়িয়ে দিয়ে মৌফির মায়ের কাছে মালিকের নাম জানতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে সুলতানসহ অন্যরা উত্তেজিত হয়ে প্রথমে কথা কাটাকাটি পরে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।

ঘটনার বিষয়ে বক্তব্য জানতে মামলার আসামিদের বাড়ি গেলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রতিটি ঘর ছিল তালাবদ্ধ। মোবাইল ফোনেও তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুখ বলেন, আত্মহত্যা প্ররোচণার মামলা হয়েছে। আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন গোকুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ সরকার টোটন। ঝগড়া-ঝাটির কারণে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছেন বলে তিনি শুনেছেন। তিনি বলেন, বিবস্ত্র করে নির্যাতন করায় মৌফি আত্মহত্যা করেছেন, এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করার বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জান্নাত আরা ফেরদৌস বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার্থী মৌফির আত্মহত্যার বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে তাঁর পরিবার আইনি সহযোগিতা বা পরামর্শ চাইলে তিনি তা করবেন।

 

 
Electronic Paper