তাড়াশে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে নয়-ছয়ের অভিযোগ
তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
🕐 ৯:০১ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৯, ২০২৪
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাবিলুর রহমান হাবিবের বিরুদ্ধে সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা নয়-ছয় করার অভিযোগ উঠেছে। উন্নয়ন কাজের জন্য আসা গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর), কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) ও একই জায়গায় বার বার প্রকল্প দিয়ে অভিনব কায়দায় অর্থ আত্মসাত, ভূমিহীন পরিবার উচ্ছেদ করে সরকারি পুকুর দখল, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দে কাজ না করেই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাবিলুর রহমান হাবিব ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ইং অর্থ বছরে কোনো কোনো প্রকল্পে বরাদ্দকৃত টিআরের অর্থের পুরোটা আবার কোনো প্রকল্পে মাত্র ২০ থেকে ৩০ ভাগ কাজ করে বাকি টাকা আত্মসাত করেছেন।
সরজমিনে প্রকল্পগুলো ঘুরে দেখা যায়, চেয়ারম্যান মো. হাবিলুর রহমান হাবিব ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের টিআর, কাবিটা ও কাবিখা সাধারণ কর্মসূচির আওতায় মাধাইনগর ইউনিয়নের সরাপপুর পাকারাস্তা হইতে আসাবের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ৬ মে. টন চাউল/গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে ওই গ্রামের আব্দুল হাকিম নামের এক ব্যক্তি পুকুর খনন করার সময় তার নিজের সুবিধার জন্য সামান্য মাটি দিয়ে ড্রাম ট্রাক চলাচলের উপযোগী করেন। একই রাস্তায় চেয়ারম্যান সরাপপুর তালেবের জমি হতে আসাবের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৪৬ টাকা বরাদ্দ দেন। কিন্ত সেখানে কোনো কাজ হয়নি। বরাদ্দকৃত টাকা পুরোটাই তার পকেটে তোলেন।
স্থানীয় আব্দুল হাকিম, পলি খাতুন, লিজা খাতুন বলেন, এ সকল রাস্তায় যে প্রকল্প আছে তা আমরা জানি না। বরং আমাদের টাকায় আমরা রাস্তায় মাটি দিয়েছি।
এদিকে বেত্রাশীন আফসারের বাড়ি হতে কামালের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ১ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও কোনো কাজ করেননি। বরং গ্রামবাসীর কাছে থেকে ৩৬ হাজার টাকা নিয়ে চেয়ারম্যান নাম মাত্র মাটি ফেলেন। আর অনিময়মের প্রতিবাদ করলেই চেয়ারম্যানের রসানলের পরতে হয় বলে অভিযোগ করেন আব্দুল মোমিন।
কাস্তা মান্নানের বাড়ি হইতে জাফরের বাড়ির অভিমুখে রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে ৬ মে. টন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়। অথচ সেখানে আগেই অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে কাজ করেন। এ প্রকল্পের সভাপতি মাধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আব্দুল জলিল বলেন, নামেই আমি সভাপতি। সকল কাজ চেয়ারম্যান করেন। আমার কাছে স্বাক্ষর নেওয়ার সময় প্রকল্প প্রতি ৫ হাজার টাকা করে দেন। এতে চেয়ারম্যান কাজ করুক আর না করুক সে বিষয়টি আমার না।
অপর দিকে চেয়ারম্যানের নিজ গ্রাম কাস্তা উত্তরপাড়া জামে মসজিদের ওজুখানা নির্মাণ বাবদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও নির্মাণ না করে পুরো টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। তবে ওই মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ মো. ইউনুস আলী বলেন, আমাদের মসজিদে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে একটি মোটর, কিছু ইট ও পানির টাংকি দিয়েছেন। অজুখানা নির্মাণের বিষয়টি আমার জানা নাই।
শুধু তাই নয় চেয়ারম্যান মো. হাবিলুর রহমান হাবিবের স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে মো. বাছের আলী নামে এক ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদ করে সরকারি কোশাইগাড়ী নামক একটি পুকুর দখল করেন। সে পুকুরে তার নিজের যাতায়াতের জন্য কাগজ-কলমে কয়েকটি প্রকল্প দেন। আবার ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে কাস্তা আড়ংগাইল পাকারাস্তা হইতে কোশাইগাড়ি অভিমুখে বকারের জমি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। আবারও বকারের জমি হইতে কোশাইগাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ২ লাখ ১২ হাজার ৮৭১ টাকা বরাদ্দ দিয়ে অর্থ লোপাট করেন। অথচ কোশাইগাড়ি পুকুর খনন করে ওই রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে।
এ ছাড়াও এর আগে এলজিএসপি, ৪০ দিনের কর্মসূচি, উন্নয়নমূলক কাজে অর্থ লোপাট, দরিদ্রদের মাঝে ভিজিডির কার্ড দেওয়ার নামে অর্থ আদায় ও ইউপি সদস্য এবং সেবা প্রত্যাশীদের সাথে অসদাচারণের অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে ওই ইউনিয়নের ৯ জন নির্বাচিত ইউপি সদস্য (২০২২ সালের ২২ জুন) তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
মাধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হাবিলুর রহমান হাবিব বলেন, আমি আগে পিছে কম বেশি প্রকল্পের কাজ করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন অফিসসহ অন্যান্যদের ম্যানেজ করার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) ১০% উৎকোচ দিয়েছি।
তবে উৎকোচ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তাড়াশ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ লতিফ বলেন, খোঁজ-খবর নিয়ে কোনো প্রকল্পে অনিয়ম হলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আর তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুইচিং মং মারমা বলেন, আমি প্রকল্পগুলো না দেখে কিছু বলতে পারবো না। তবে বিল দেওয়ার আগে আমি দুই-তিনটা প্রকল্প দেখেছি এবং সেগুলো বিল দেওয়া হয়েছে। আর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) প্রকল্পগুলো শতভাগ দেখে বিল ছাড়ার কথা। তারপরও খোঁজ খবর নিয়ে কোনো প্রকল্পে অনিয়ম হলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ মুঠোফোনে জানান, আমার সংসদীয় আসনে উন্নয়ন কাজের জন্য আসা গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের প্রকল্পের কাজ না করে টাকা আত্মসাত করার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়াও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) নির্দেশ দেওয়া আছে কাজ না করলে কোনো বিল ছাড়া হবে না। আমার আসনে কেউ অনিয়ম দুনীর্তি করে ছাড় পাবে না।