ঢাকা, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছাত্র আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
🕐 ১২:৫৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৪, ২০২৪

জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছাত্র আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে ছাত্রদের এই যৌক্তিক, ন্যায় সংগত, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছি। আজ আমারা তাদের নতুন ঘোষণাকে সমর্থন জানাচ্ছি এবং এই ভয়াবহ দানবীয় খুনী শাসকগোষ্ঠীর পতনের লক্ষে সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি, পেশাজীবি, শ্রমিক, কৃষকসহ আপামর জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে এই অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের পতন নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।

আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।

মির্জা ফখরুল বলেন, জাতির এক চরম ক্রান্তিলগ্নে আপনাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার যে নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা আশ্রয় নিয়েছে তা উপমহাদেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। ছাত্র আন্দোলন দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী এবং ছাত্রলীগ যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা পাখি শিকারের মত নির্বিচারে গুলি করে লাশের পর লাশের পর লাশের স্তুপ সৃষ্টি করেছে, ব্যাপক রক্তপাত ঘটিয়েছে, হাজার হাজার মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন। সরকার তাদের এই বর্বরতা আড়াল করতে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে কিছু স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে, এর দায় বিরোধী দলের উপর চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, সরকার প্রথম থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের যৌক্তিক দাবি অস্বীকার করে নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে দেশকে ধ্বংস ও নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে গেছে। ছাত্র আন্দোলন বলপূর্বক দমন করতে রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে চলছে নজিরবিহীন তৎপরতা। দেশে আজ অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জনগণের ওপর যুদ্ধ ঘোষনা করেছে সরকার। চারিদিকে শুধু অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা। এর সম্পূর্ণ দায় রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ আওয়ামী লীগ সরকারের।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন দমনে গণহত্যা, নৈরাজ্য, ধ্বংস, দমন, নিপীরণ দেখে সারা বিশ্ব স্তম্ভিত। সরকার ছাত্র, যুবক, শিশু, নারীসহ জনতাকে নির্বিচারে নির্দয়ভাবে হত্যা করে মানবতাকে হত্যা করেছে। সরকারের মানবতাবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হয়েছে। দেশ বিদেশে সরকার ধিকৃত ও ঘৃণিত।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের সকল মানুষ এবং গণতন্ত্রকামী বিশ্ব গণহত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং আটককৃত নেতা-কর্মীসহ নিরীহ ছাত্র জনতা কে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানালেও সরকার কূটকৌশল করে পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। এসব দাবীতে ছাত্র জনতার কর্মসূচি বানচাল করতে সরকার আবারও নিরাপত্তা বাহিনীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদেরকে ছাত্র জনতার উপর লেলিয়ে দিয়ে আরো হত্যা, নির্যাতন, দমন, নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। যার ফলশ্রুতিতে সমগ্র দেশ আজ অগ্নিগর্ভ। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সকল জনপদ ছাত্র জনতার বিক্ষোভ বিদ্রোহে মুখরিত। সমগ্র দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ, সুশীল সমাজ, শিক্ষক, অভিভাবক, সাংবাদিক, আইনজীবী, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, শ্রমজীবী মানুষসহ ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে শামিল হয়ে গণজাগরণের সৃষ্টি করেছে। গড়ে উঠেছে অভাবনীয় জাতীয় ঐক্য, জনগণের ঐক্য। সমগ্র দেশ আজ গণহত্যাকারী সরকারের বিরুদ্ধে এক একাট্টা। গ্রাম ও শহরের ঘরে ঘরে আর্তনাদের সাথে উচ্চারিত হচ্ছে খুনী সরকারের পদত্যাগের দাবি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এমন পরিস্থিতিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গতকাল এক দফা দাবি অর্থাৎ স্বৈরাচার সরকারের পদত্যাগের দাবি সম্বলিত : এক দফা ঘোষণাপত্র' উত্থাপন করে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল আগে থেকেই গণতন্ত্র হত্যাকারী, ভোটাধিকারসহ জনগণের মৌলিক অধিকার হরণকারী, জাতীয় স্বার্থ বিপন্নকারী, জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী লুটেরা দুর্নীতিবাজ আওয়ামী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। সেই আন্দোলনও দমন করতে সরকার হত্যা, গুম, দমন, নিপীড়নের স্টিমরোলার চালিয়ে ফ্যাসিবাদী ও কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসন কায়েম করেছে।

তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ গতরাতে সন্ত্রাস চালিয়ে আতঙ্ক সৃস্টি করে। আমরা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী তৎপরতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলতে চাই, এসব করে তারা সরকারের পতন ঠেকাতে পারবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে আজ এক গণ অভূত্থানের সূচনা হয়েছে। ছাত্রদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সাঈদ, মুগ্ধসহ শত নিরীহ ছাত্র শিশু ও জনতার রক্তে অবৈধ শাষকগোষ্ঠীর হাত রঞ্জিত হয়েছে। জনগণ এই ভয়াবহ গণহত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় বেরিয়ে আসছে। ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবী, চাকুরীজীবী, মা বোন, পিতা-মাতা, শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী, লেখক আজ এক কাতারে। দলমত, বয়স, ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষ ফুলে উঠেছে ক্রোধে। দ্রোহের মিছিলে শরীক হচ্ছে সকল স্তরের সকল শ্রেণীর সকল বয়সের মানুষ। আমি তাদের অভিবাদন জানাই।

মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল শহীদ মিনারে জনতার উত্তাল সমুদ্রে সামনে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বায়কারীরা এই অবৈধ খুনি সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবী করেছে এবং অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবী জানিয়েছে। দেশের সকল মানুষ এই দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। আমরা ২০১২ সাল থেকে এই সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবী করে আসছি। অবৈধ সরকার ক্ষমতায় চিরস্থায়ী করার লক্ষে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা বাতিল করে চিরস্থায়ীভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। দেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো ধ্বংস করেছে নজীর বিহীন দূর্নীতির মাধ্যমে অর্থনীতি ধ্বংস করেছে।

তিনি বলেন, এখন ছাত্রদের ন্যায় সংগত দাবী কোটা ব্যবস্থায় ব্যক্তিক সংস্কারের আন্দোলনকে নির্মম নিষ্ঠুর ভাবে দমন করতে গিয়ে শত শত তাজা প্রাণের রক্ত ঝরিয়েছে, শত শত মায়ের বুক খালি করেছে, শত সন্তানরা পিতাকে হরিয়েছে। এমনকি ৪ বছরের শিশুও রেহাই পায়নি। গণহত্যার মাধ্যমে ছাত্রদের আক্রমণকে দমন করতে ব্যর্থ হয়ে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। ছাত্র জনতার ঐক্যের মধ্য দিয়ে যে চূড়ান্ত আন্দোলন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত, তাকে স্তব্ধ করার ক্ষমতা কারও নেই।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বেগম সেলিমা রহমান।

 
Electronic Paper