সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের প্রায় ১৮ বিঘা কৃষিজমি টেন্ডার ছাড়াই মাত্র ৭০ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। নাম মাত্র ইজারা দেওয়ায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারিয়েছে। রাতের অন্ধকারে কীভাবে ইজারা দেওয়া হয়েছে সেটি জানে না কলেজের টেন্ডার ও ক্রয় কমিটি। এর আগে গত ৫/১/২৫ তারিখে কলেজের লেক, পুকুর, বিশাল আম বাগান নামমাত্র টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ১৮ বিঘা জমি নামমাত্র মূল্যে ইজারা দেওয়ায় জনসাধারণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এলকাবাসী জানান টেন্ডার ছাড়াই একই ব্যক্তির কাছে ইজারা দেওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এলাকাবাসী আরো জানান কলেজের একজন স্যার অধ্যক্ষকে ভুল বুঝিয়ে এসব করছে। তিনি এর আগেও একই ভাবে কলেজের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। এলাকাবাসী পুনরায় যাতে দরপত্র আহবান করা হয় সেজন্য সরকারের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, একটি চক্র দীর্ঘদিন কলেজের লেক, পুকুর, কৃষিজমি, আম বাগান ভোগ দখল করত কোনো রকম টেন্ডার ছাড়াই। কলেজের সব কিছু একক নিয়ন্ত্রণ করতেন কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বদরুল মিল্লাত। আবারও তিনি কলেজের অধ্যক্ষকে ভুল বুঝিয়ে সব কিছু নাম মাত্র মূল্যে ইজারা দিয়েছেন তার পছন্দের লোকদের। কলেজের টেন্ডার ও ক্রয় কমিটি থাকলেও তারা পুতুলের মতো ভূমিকা পালন করেছেন।
এলাকাবাসী আরো জানান, গত ৫/১/২৫ তারিখে কলেজের টেন্ডার হয় সেখানে কলেজের লেক ও পুকুর মাত্র ৭০ হাজার টাকায় বিএনপি নেতা মতিনুর রহমানকে ইজারা দেওয়া হয়। কলেজের আম বাগান ইজারা দেওয়া হয়েছে মাত্র ৯৫ হাজার টাকায়। ওপেন দরপত্র আহ্বান করা হলে সব কিছু তিনগুণ দামে ক্রয় হতো বলে এলাকাবাসী জানান। আর কোনো রকম টেন্ডার ছাড়াই ১৮ বিঘা কৃষিজমি মাত্র ৭০ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে আব্দুর রাজ্জাক নামে এক ব্যক্তির কাছে। শুধু তাই না রাতের অন্ধকারে বদরুল মিল্লাত হোস্টেল সংলগ্ন মাছ বিক্রি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিনুর রহমান কচি বলেন, আমি কলেজের খাল ও ছোট পুকুরটি লিচ নিয়েছি। হোস্টেলের পুকুর লিচ নেয়নি। সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বদরুল মিল্লাতের কাছ থেকে শুধুমাত্র মাছগুলো ৫০ হাজার টাকায় কিনে নিয়েছি। আমি উক্ত পুকুর টেন্ডার নেয়নি। কীভাবে উনি মাছ বিক্রি করলেন তার সদুত্তর দিতে পারেননি।
বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বদরুল মিল্লাতের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আমি পুকুরের মাছ বিক্রি করার কে। কলেজের অধ্যক্ষ ও ক্রয় ও টেন্ডার কমিটি আছে। আমি কোন মাছ বিক্রি করিনি। আমাকে জড়িয়ে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন তা সম্ভব না।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ক্রয় ও টেন্ডার কমিটির আহবায়ক ও ব্যবস্থাপন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মোন্তাজাবুর রহমান বলেন, কলেজে শুধুমাত্র খাল ও ছোট পুকুর ও আম গাছগুলে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। কৃষিজমি টেন্ডার হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন এখনও হয়নি। ইজারা দেওয়া হয়ে গেছে তিনি জানেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন সেটা কলেজের অধ্যক্ষ বলতে পারবেন আমি জানি না। সব কিছু এত কম দামে ইজারা দেওয়ার কারণ বললে তিনি বলেন আপনি অধ্যক্ষ মহোদয়ের কাছে শোনেন।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল হাসেম জানান, কলেজের খাল ও ছোট পুকুরও আম বাগান কৃষিজমি লিচ দেওয়া হয়ে গেছে। সব কিছু এত কম মুল্যে ইজার দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে তো মোটেও ইজারা হতো না। আমি আসার পর সব কিছু ইজারা দিয়ে সরকার কিছু রাজস্ব পাচ্ছে। ১৮ বিঘা জমি মাত্র ৭০ হাজার টাকায় ইজারা দিয়েছেন সেখানে কলেজের টেন্ডার ও ক্রয় কমিটি জানে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন তুমি কলেজে এসো কাগজপত্র দেখে যাও। কলেজের একজন শিক্ষক সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন সেটা সম্ভব না।
কেকে/এএস