জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে অসময়ের টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে কৃষকরা ভয়াবহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। টানা বর্ষণে উপজেলার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিশেষ করে আগাম আলু, রোপা আমন ধান ও মৌসুমি সবজির খেতে পানি জমে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। অনেক জমির আলুক্ষেত পানিতে ডুবে আছে কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে পানির উপর ভাসমান আলুর পাতা, কিছু কিছু জমিতে বৃষ্টির পানি নামার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে। ধানগাছ বাতাসে নুয়ে পড়ে পানিতে ভাসছে। আর সবজি খেতে পানি জমে বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, আবহাওয়া ভালো থাকায় ও আগাম আলু রোপনের আদর্শ সময় হওয়ায় কৃষকরা জমিতে আলু রোপন করেন। একই সাথে কৃষকরা ধান কাটা ও ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু কৃষকের সেই আশায় গুরে বালি। অসময়ের টানা ভারি বৃষ্টিতে আলুর জমি বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। আবার কোন কোন জমিতে পানি বেধে গেছে। এদিকে রোপা আমন ধান বাতাসে জমিতে একেবারে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। জমিতে বেধে যাওয়া পানি দ্রুত নেমে না গেলে গাছ পচে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। পানি নেমে যাবার পরও সেই সকল জমিতে ধানের স্বাভাবিক ফলন হবে না বলে ধারনা করছে কৃষকরা।
শুধু আলু ও ধান নয়, সবজি খেতেও দেখা দিয়েছে একই চিত্র।
উপজেলা কৃষি দপ্তর থেকে জানা গেছে, এ উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৫১৩ হেক্টর জমিতে আলু রোপন করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর এবং রোপা আমন ধান ১০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে রোপন করা হয়। কৃষি অফিস কৃষকদের জমে থাকা পানি জমি থেকে দ্রুত নিষ্কাশন ও ফসলের ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য পরামর্শ প্রদান করেছে।
সোনামুখী ইউনিয়নের কৃষক মাহমুদুল হাসান বলেন, গতবারের আলুতে লোকসান হয়েছে। তবু এই মৌসুমে আগের বারের লোকসান পুষিয়ে নেওয়া যায় এ আশা নিয়ে আগাম আলু লাগিয়েছিলাম। প্রতি বিঘায় প্রায় ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। টানা তিন দিনের আমার জমিতে পানি বেধে গেছে। চারা পচে যেতে পারে। এতে করে আলু না হওয়ার সম্ভবনাই বেশি।
একই এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার ধান আর কিছুদিন পর কাটা হতো,অসময়ের বৃষ্টিতে ধানের জমি ডুবে গেছে। দ্রুত পানি পানি না নামলে ধানগাছ পচে যাবে, পুরো বছরের পরিশ্রম শেষ। আমরা এখন দিশেহারা হয়ে গেছি। সার, বীজ, শ্রম সবকিছুতে খরচ করেছি ধার করে। যদি ফসল বাঁচাতে না পারি, তাহলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।” সরকারি যদি আমাদের সহায়তা দেই তাহলে হয়তো আমরা কিছুটা উপকৃত হবো।
আলু ক্ষেতে বৃষ্টির জমা পানি কেটে বেড় করে দিচ্ছিলেন কৃষক মো সাইফুল ইসলাম কথা হয়, তিনি জানান, আমি ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা খরচ করে আলু লাগিয়েছি। কয়েক দিনের বর্ষায় তা তলিয়ে গেছে। বছরের এই সময়ে এমন বৃষ্টি আগে কখনো দেখিনি। এছাড়াও রসুন পেয়াজ লাগিয়েছি। সেগুলোও পচে যাবে। আমি সর্বশান্ত হয়ে গেছি।
আক্কেলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ইমরান হোসেন বলেন, অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আগাম জাতের আলু, সবজি ও ধানের ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি যত দ্রুত সম্ভব পানিটি অপসারণ করার জন্য।
তিনি আরো বলেন, ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ণয়ের কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। নির্ণয় সম্পন্ন হলে মোট ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
উপজলার প্রায় ৭৫ শতাংশ মাঠজুরে দেখা যাচ্ছে পরিশ্রমী কৃষকদের মুখে হতাশা আর নিরাশার ছাপ। কেউ কেউ ফসল বাঁচাতে চেষ্টা করছেন, কেউ বা মাঠ ছেড়ে বাড়িতে বসে আছেন হাল ছেড়ে দিয়ে। ফসলের মাঠে এখন শুধু কাদা, পানি আর ভেসে থাকা চারা—যেন কৃষকের স্বপ্নের কবরস্থান।
নওগাঁ জেলার বদলগাছী আবহাওয়া অফিস জানায়, এ উপজেলায় রোববার (২ নভেম্বর) পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কেকে/এআর