টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ধান কাটার মৌসুমে কৃষকদের মুখে হাসির চেয়ে চিন্তার ভাঁজই বেশি। মাঠে সোনালি ধান পেকে গেলেও বাজারে দেখা দিচ্ছে এক অদ্ভুত চিত্র। ধানের চেয়ে গো-খাদ্য খড়ের দামই বেশি।
দেশের গবাদি পশুর প্রধান খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত খড়ের চাহিদা বর্তমানে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। কৃষি জমি দিন দিন কমে যাওয়া, বোরো মৌসুমে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং আবহাওয়াজনিত কারণে কৃষকরা পর্যাপ্ত পরিমাণ খড় ঘরে তুলতে পারেনি। ফলে বাজারে খড়ের সরবরাহ কমে গিয়ে দাম বেড়েছে কয়েকগুণ।
বর্তমানে গোপালপুরে ১ মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১,২০০ থেকে ১,৪০০ টাকায়, অথচ সেই ধানের খড় বিক্রি হচ্ছে ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকা মণে। এবং আঁটি হিসাবে বিক্রি হচ্ছে ১০/১২ টাকায়।
কৃষকরা বলছেন, এমন অবস্থা আগে কখনো দেখা যায়নি। ধোপাকান্দি ইউনিয়নের মুদিখানা এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে খড় বিক্রির ধুম পড়ে গেছে।
খড় বিক্রেতা মো. রফিকুল ইসলাম জানায়, তিনি কুড়িগ্রাম থেকে এক ট্রাক খড় এনে প্রতিটি আটি ১১ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করেন। সামান্য কিছু লাভ থাকে, কিন্তু চাহিদা এত বেশি যে পাইকাররা তার কাছ থেকে কিনে বিভিন্ন হাটবাজারে বেশি মূল্যে বিক্রয় করছে।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, আমরা ভেবেছিলাম ধান বিক্রি করে কিছু লাভ হবে, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে খড়ই যেন সোনার খড়। গরুর খাদ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সবাই খড় কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।
গরু খামারি আব্দুল মালেক জানায়, ৭টি গরু রয়েছে কিন্তু বোরো মৌসুমে খড় সংগ্রহ করতে না পারায় এখন বাজার থেকে বেশি দামে খড় কিনে খাওয়াতে হচ্ছে। এতে গরু লালন-পালনের খরচ বহুগুণে বেড়ে গেছে।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানায়, গবাদি পশুর খাদ্যের ঘাটতি এবং খামারি সংখ্যার বৃদ্ধির কারণে খড়ের চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন খড় সংরক্ষণ ও বিক্রির মাধ্যমে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ কাজে লাগাতে।
কৃষকরা আশঙ্কা করছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে মানুষ ধান উৎপাদনের চেয়ে খড় বিক্রিতেই বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে।
কেকে/বি