চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই আলোচনায় রয়েছে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি গঠনের পর থেকেই জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্ন ও বিতর্ক। কখনো বলা হচ্ছে- ‘কিংস পার্টি’, কখনো বা ‘জামায়াতে ইসলামী বি-টিম’। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থান ও বক্তব্যে দলটির ওপর সেই অভিযোগ যেন আরো জোরালো হয়েছে। বিশেষত জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট ইস্যুতে এনসিপি যখন জামায়াতের সুরেই কথা বলছে, তখন এমনটাই মনে করছেন অনেকে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর পল্টনে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে তরুণ আলেমদের ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিএনপির সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। তিনি বলেন, যে রাজনৈতিক দলের জন্ম গণভোটের মাধ্যমে, তারা কীভাবে গণভোটের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়? বিএনপির এই অবস্থান আত্মঘাতী।
তুষারের অভিযোগ, বিএনপির নেতারা আলোচনার টেবিলে এক কথা বলছেন, কিন্তু জনগণের সামনে এসে ভিন্ন কথা বলছেন। তিনি বলেন, বিএনপির অ্যাকটিভিস্টরা ‘না ভোট’-এর নামে হুমকি দিচ্ছে, তারা ঘরের শত্রু বিভীষণ।
তুষার দাবি করেন, বিএনপির ৩৫ শতাংশ নেতাকর্মী ‘না’ ভোটের পক্ষে থাকলেও ৬৫ শতাংশ তৃণমূল কর্মী ‘হ্যাঁ’ ভোট দেবেন। তার ভাষায়, বিএনপির জন্মই তো গণভোটের মাধ্যমে, তাহলে তারা কীভাবে গণভোটের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়?
তিনি আরো বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধান সামরিক শাসনের পথ তৈরি করেছিল। বাহাত্তরের সংবিধান বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে এক ধরনের জুলুম। অথচ কিছু রাজনৈতিক দল এখনো সেটি টিকিয়ে রাখতে মরিয়া।
এ সময় জুলাই সনদকে ‘অভ্যুত্থানের অর্জন রক্ষার একমাত্র পথ’ বলে উল্লেখ করেন সারোয়ার তুষার। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি, তবে যা রক্ষা করা সম্ভব, তা জুলাই সনদের মধ্য দিয়েই সম্ভব। এজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, যেন কোনো একক রাজনৈতিক দল এর বাস্তবায়ন ঠেকাতে না পারে।
এদিকে এনসিপির বক্তব্যের মাত্র একদিন আগেই প্রায় একই ভাষায় কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। গত শুক্রবার কুমিল্লার পদুয়ার বাজার এলাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে সবাই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু এখন হঠাৎ করেই বিএনপি পল্টি মেরেছে। বিএনপি এত দিন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে থেকে সনদে সই করেছে, এখন বলছে তারা এটা মানে না- এটা দায়িত্বহীনতা ও রাজনৈতিক সংকট তৈরির চেষ্টা।
তাহের বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই বলেছে গণভোটের বিরোধিতা করবে। অথচ শুরুতে সবাই একমত ছিল- সংস্কার জনগণের রায়ের মাধ্যমেই হবে। বিএনপি এখন বলছে, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে করতে হবে। এটা তালের রস আর আমের রস একসঙ্গে মেশানোর মতো কথা।
তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি পরিকল্পিতভাবে দেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে এবং আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঘিরে জনগণের মনে সন্দেহ তৈরি করছে।
এ সময় তাহের বলেন, যদি সরকার বিএনপির চাপে নতি স্বীকার করে, তাহলে বোঝা যাবে সরকার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। কোনো সরকারের যদি নিরপেক্ষতা না থাকে, তবে তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
এদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সমালোচনা করে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি নির্বাচন চায় না। তারা চায় যেই সরকার আছে সেই সরকারই চলুক। সরকারের সঙ্গে থেকে তারা যত সুযোগ সুবিধা আছে তা নিতে চায়।
গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার জয়ধরকান্দি ও তেলিকান্দি এলাকায় পৃথক তিনটি সমাবেশে জামায়াত ও এনসিপিকে নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে যেন নির্বাচন না হয় সেই চেষ্টা হচ্ছে। বিএনপি ছাড়া অন্য দলগুলো নির্বাচন পেছাতে চায় তাদের লাভে। তারা সঙ্গে থেকে যতরকম সুযোগ সুবিধা আছে নিবে। কিন্তু আপনারা কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে পা দিবেন না। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হতে হবে। ফেব্রুয়ারিতে যদি নির্বাচন না হয় সেটা আমরা মেনে নেব না।
কেকে/এআর