ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের কাজী হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে পরকীয়াসহ নারী কেলেঙ্কারি হাতে নাতে ধরা পড়ার ভিডিওসহ একাধিক অভিযোগ প্রশাসনের কাছে দেয়া লিখিত আকারে পেশ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টম্বর) উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর এলাকাবাসী এ অভিযোগ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বহু বাল্যবিবাহ রেজিস্ট্রেশন করার কারিগর ও কোটিপতি কাজী হেলাল কাজী গত ২৫ জুন গভীর রাতে সোনারামপুর ইউনিয়নের চরমরিচাকান্দির গ্রামের বিলপাড় মহল্লার ট্রাক চালক সুলতান মিয়ার স্ত্রীর সাথে অনৈতিক কাজ করতে গেলে এলাকাবাসী হাতেনাতে ধরে ফেলে। পরে, এলাকাবাসী তাকে উত্তম মাধ্যম দেয়। কাজী হেলাল কতিপয় যুবককে ম্যানেজ করে সেখান থেকে পালিয়ে চলে আসতে সক্ষম হয় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন ।
জেলা রেজিস্ট্রার, দুদক ও ইউএনও এর কাছে দেয়া অভিযোগ সূত্রে বলা হয়েছে , অতীতে বিভিন্ন মহিলার সাথে অনৈতিক কাজ করার সময় একই কায়দায় ধরা পড়ার পর, বিয়ে করে উদ্ধার হন।এভাবে কাজী হেলাল উদ্দিন ৩ টি বিয়ে করেছেন।
এবিষয়ে চরমরিচাকান্দি গ্রামের মহিলা ওয়ার্ড মেম্বার হনুফা বেগম বলেন, কাজী হেলাল একজন দুশ্চরিত্র কাজী। তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া দরকার।
স্থানীয় আরেক ওয়ার্ড মেম্বার জামাল মেম্বার বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে নিকাহ রেজিস্ট্রার পদ বাতিল করা দরকার।’
অভিযোগসূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবেক আওয়ামী লীগের এমপি ক্যা. তাজের ভাগিনা জনি চেয়ারম্যানকে ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পায়।
গত ৫ আগস্টের পর তিনি নিজেকে বিএনপি ঘরানার কাজী হিসেবে দাবি করে নানান অনিয়ম, দুর্নীতি ও নারীঘটিত কেলেঙ্কারি করতে থাকেন। এ নিয়ে একাধিকবার সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও জেলা রেজিস্ট্রার অদৃশ্য কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত থাকেন।
উল্লেখ্য, বিবাহের নামে নিকাহ রেজিস্ট্রারের (কাজি) বিরুদ্ধে বাল্যবিবাহ নিবন্ধনসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন যাবত দাবি করে আসছে এলাকাবাসী।
সোনারামপুর ইউনিয়নের দুই যুবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, আমরা কাবিননামা তুলতে চাইলে একজনের কাছ থেকে ১১ হাজার ও অন্যজনের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন কাজী হেলাল উদ্দিন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহের স্বীকার হন সোনারামপুর ইউনিয়নের মেয়েরা। তারপর রয়েছে, উজানচর ও ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়ন।
জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী নরসিংদী ও সোনারামপুরে তার বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ব্যালেন্স।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বলেন, হেলাল কাজীর বিষয়টিকে আমরা শক্তিশালী তদন্ত কমিটির মাধ্যমে ব্যবস্থা নিব। বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও জেলা রেজিস্ট্রারকে জানানো হবে।
আজ মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা রেজিস্ট্রার খালিদ মোহাম্মদ বিন আসাদ মুঠোফোনে বলেন, এতদিন লিখিত অভিযোগ পাইনি, আজ পেয়েছি। আগামী সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) অভিযুক্ত কাজী হেলাল ও অভিযোগকারীদের প্রতিনিধিকে জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে আসতে বলেছি। সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস আরা বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। জেলা রেজিস্ট্রারের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগকারীদের পক্ষে জয়নাল আবেদীন বলেন, বাল্যবিবাহ ও নানা অবৈধ উপায়ে আওয়ামী দোসর এই হেলাল কাজী ১০ কোটির মালিক। তার বিরুদ্ধে প্রশাসন যদি এবার ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ আমলে “নিকাহ নামা ও কোটিপতি কাজী”র নামে নানা অনিয়ম করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া হেলাল কাজীর বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও উপর মহল সামাল দিতে তিনি 'ম্যানেজ মাস্টার' হিসেবে সিদ্ধ বলে অভিযোগ রয়েছে।
কেকে/এজে