নেতৃত্বে ড. মুহাম্মদ ইউনূস
গণতন্ত্রের পুনর্যাত্রা
মাহমুদুল হাসান
🕐 ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ০৯, ২০২৪
প্রবল গণআন্দোলনে বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের নতুন এক অধ্যায় রচিত হওয়ার পর ‘তরুণদের দেখানো পথে’ বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে শপথ নিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে এই সরকারের নেতৃত্ব দেবেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস। এই যাত্রায় উপদেষ্টা হিসেবে তার সঙ্গে থাকছেন আরো ১৬ জন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান।
নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন ও গোপনীয়তার শপথ নেন ইউনূস। শপথ নেওয়ার পর রাষ্ট্রপতি তাকে অভিনন্দন জানান। এরপর ১৬ উপদেষ্টার নাম ঘোষণা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তদের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ১৩ জন একসঙ্গে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে শপথ নেন। শপথ নেওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী শপথ বইতে সই করেন সবাই।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের অন্য ১৬ সদস্যের মধ্যে গতকাল শপথ নিয়েছেন ১৩ জন। তারা হলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, মানবাধিকার সংগঠক আদিলুর রহমান খান, সিনিয়র আইনজীবী হাসান আরিফ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন, পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুর্শিদ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. এম সাখাওয়াত হোসেন, শিক্ষাবিদ ড. আ.ফ.ম খালিদ হাসান, উবিনীগ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদা আখতার, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরজাহান বেগম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদিপ চাকমা, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুকী আজম বীর প্রতীক পরে শপথ নেবেন।
শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। বীর শহীদ ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরুতে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শপথ অনুষ্ঠান শুরু হলেও রীতি অনুযায়ী গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক থেকে পাঠ করা হয়নি। এমনকি গত ১৬ বছরের রীতি ভেঙে অনুষ্ঠান পরিচালনার কোথাও শেখ মুজিবের নাম উচ্চারণ হয়নি। তবে সভার শুরুতেই মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের স্মরণ করেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব।
অনুষ্ঠানে সেনা বাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনীর প্রধান হাসান মাহমুদ খাঁন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনরাও উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, বঙ্গভবনের দরবার হলে দেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা যোগ দিলেও ছিলেন না আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতাদের কেউ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্যান্য উপদেষ্টাদের শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
শপথ অনুষ্ঠানে গিয়ে দরবার হলে প্রথম সারির মাঝখানে বসেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সহধর্মিনী অধ্যাপক আফরোজী ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার বাম দিকে বসেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, এরপর বসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এরপর অন্তবর্তীকালীন সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টারা বসেন।
প্রধান উপদেষ্টার ডান দিকে ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনীর প্রধান হাসান মাহমুদ খাঁন। এরপর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ।
দ্বিতীয় সারিতে রয়েছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, জয়নুল আবেদীন, শামসুজ্জামান দুদু, আমানউল্লাহ আমান, মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
একই সারিতে ছিলেন সিপিবির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, মোস্তাক হোসেন, এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, সাবেক অর্থনমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, বাসদের খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম। দ্বিতীয় সারিতে নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানও ছিলেন। হুইল চেয়ারে করে এ সারিতে বসেন ড. কামাল হোসেন। এরপর তৃতীয় সারিতে বসেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা। শপথ অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে দেখা যায়নি। তার আসনটি শূন্য ছিল।
অপরদিকে বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী বঙ্গভবনে আসলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের ‘ভুয়া, ভুয়া’ ধ্বনি আর তোপের মুখে প্রবেশ করতে পারেননি তিনি। ১/১১ এর পট পরিবর্তনের পর থেকে দীর্ঘ সময় পর বঙ্গভবনের কোনো শপথ অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াতসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের দেখা গেল। সবশেষ ২০০৭ সালে ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শপথ অনুষ্ঠান বিএনপি বর্জন করে।