শপথ অনুষ্ঠিত হবে রাত ৮টায়
অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ আজ
সফিকুল ইসলাম সবুজ
🕐 ১২:১০ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ০৮, ২০২৪
শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ছাড়ার পর এক সংকটকালীন সময় পার করছে বাংলাদেশ। দেশে কোনো সরকার না থাকায় অনেকটা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে রাষ্ট্র। ফলে গত দুদিন ধরে সর্বোচ্চ আলোচনায় ছিলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিষয়টি নিয়ে জনমনে ছিলো নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর শঙ্কা। অবশেষে সেই জল্পনা-কল্পনার অবসান হচ্ছে আজ। শপথ নিতে যাচ্ছে কাঙ্খিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে সেনাসদরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। এর আগে মঙ্গলবার রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কবৃন্দের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ সময়ের সেই বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মনোনীত করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ হতে পারে বলে জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আশা করি আগামীকাল রাত ৮টায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠিত হবে। এই সরকারের সদস্য হতে পারে ১৫ জন। তবে এ সংখ্যা বেশি বা কমও হতে পারে।’ তিনি জানান, সময় কম হলেও বৃহস্পতিবার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য চেষ্টা চলছে।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে আমার ড. ইউনূসের সঙ্গে কথা হয়েছে। উনার সঙ্গে কথা বলে আমার খুব ভালো লেগেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি এই কাজটা (প্রধান উপদেষ্টা) করতে অত্যন্ত আগ্রহী। আমি নিশ্চিত তিনি আমাদের সুন্দর একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন এবং এ কাজে আমরা উপকৃত হবো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক আলোচনা করে ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করেছি। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এবং শিক্ষার্থীদের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আলোচনা করে আমরা সর্বসম্মতভাবে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি রাজি হয়েছেন।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘ড. ইউনূস আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) দেশে আসবেন। আমি তাকে বিমানবন্দরে রিসিভ করবো। আমি আশা করি উনি সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা পাবেন। আমি নিশ্চিত যে উনি সফলভাবে উনার কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।’
জেনারেল ওয়াকার বলেন, ‘অনেক ধরনের গুজব চলছে। জনগণকে আহ্বান করবো তারা যেনো গুজবে কান না দেয়। আমরা চমৎকার পরিবেশে সুন্দরভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সেনানিবাসে বিভিন্ন কিছু হচ্ছে এমন গুজব চলছে। এগুলোতে কান দেবেন না এবং এগুলো ছড়াতে সাহায্য করবেন না।’
পরিস্থিতি অনেক শান্ত হয়ে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ এখন ডিউটিতে নাই। পুলিশে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। সেনাবাহিনীর স্ট্রেংথ দিয়ে এটা পূরণ করা সম্ভব না। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনেক পুলিশ, সরকারি কর্মচারীদের আমরা রেসকিউ করেছি। বিমানবন্দর, ডিপলোম্যাটিক এরিয়া, সচিবালয়, বিচারকদের বাসভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আমরা নিরাপত্তা দিচ্ছি। আমরা টহল দিচ্ছি। তারপরও কিছু জায়গায় হামলা হয়েছে। আমরা এতে দুঃখিত ও বিব্রত।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি দেখছি শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবকরা খুব ভালো কাজ করছে। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ ছিলো না, তারা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন, রাস্তা পরিষ্কার করছেন, যেসব স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, সেগুলো পরিষ্কার করছেন। আমি তাদের অনুরোধ করবো তারা যেনো এই ভালো কাজ চালিয়ে যায়।’ বিভিন্ন জায়গায় লুটতরাজ হচ্ছে- উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘এগুলো প্রতিরোধ করার জন্য আমি শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেছি। তারা সেই কাজ করছেন। আমি নিশ্চিত, আমরা সবাই মিলে সুন্দর-স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে যাবো।’
প্যারিস থেকে ঢাকার পথে ড. ইউনূস : এদিকে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে ঢাকার পথে রওয়ানা হয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল চার্লস দ্য গল বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করেন তিনি। বিমানবন্দরে তাকে কড়া নিরাপত্তা দেন ফ্রান্সের বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা।
আজ দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকায় পৌঁছাবেন বলে জানিয়েছে ইউনূস সেন্টার। বুধবার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনূস সেন্টার জানায়, ‘নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুবাই থেকে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে (ইকে-৫৮২) বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ১০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন।
ছয় মাসের সাজা বাতিল : এদিকে শ্রম আইনের মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছয় মাসের সাজা বাতিল করেছেন আদালত। বুধবার ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) এম এ আউয়াল (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) এ রায় দেন।
গত ১ জানুয়ারি ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান শেখ মেরিনা সুলতানা এক মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনুস এবং এর পরিচালক আশরাফুল হাসান, নুরজাহান বেগম ও এম শাহজাহানকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।
রায় ঘোষণার পরপরই পৃথক জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত চারজনকেই এক মাসের জামিন দেন। ছয় মাসের কারাদণ্ড ছাড়াও আদালত চারজনকেই ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ২৫ দিন কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি আদালত তাদের এক মাসের মধ্যে শ্রম আইন ২০০৬ এর প্রাসঙ্গিক ধারাগুলো মেনে চলার নির্দেশ দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন ড. ইউনূস।