হামলা-সহিংসতায় নিহত শতাধিক
অনলাইন ডেস্ক
🕐 ১০:২৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৪, ২০২৪
দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি অদায়ে ডাকা অসহযোগ আন্দোলন এবং আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে অগ্নিগর্ভ দেশ। বিভিন্ন স্থানে হামলা-আগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা ও গাড়িতে।
আন্দোলকারী-আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত রাজধানীতে ৯ জনসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অন্তত ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকার বাইরে ১৯ জেলায় পুলিশসহ অন্তত ৯১ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই হলেন শিক্ষার্থী। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীও আন্দোলনকারীদের হামলায় নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ ২৩, লক্ষ্মীপুরে ১০, ফেনীতে ৮, নরসিংদীতে ৬, কিশোরগঞ্জে ৪, মুন্সীগঞ্জে ৪, রংপুরে ৫, সিলেটে ৬, মাগুরায় ৪, পাবনায় ৩, বগুড়ায় ৪, কুমিল্লায় ৪, বরিশালে ২, শেরপুরে ২, ভোলায় ১, জয়পুরহাটে ১, সাভারে ১, হবিগঞ্জে ১, কক্সবাজারে ১ জন, কেরানীগঞ্জ ১ জন রয়েছেন।
১৪ পুলিশ নিহত
সারা দেশে ১৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন। কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জে নিহত হয়েছেন একজন।
সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ ২৩
সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ ২৩ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক। রোববার (৪ আগস্ট) বিকেলে এঘটনা ঘটে। ওদিকে সিরাজগঞ্জে দিনভর সংঘর্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে সিরাজগঞ্জ সদরে ৩ জন, রায়গঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার লিটনসহ ৬ জন ও শাহাদাতপুরে একজন রয়েছেন।
ঢাকায় ৯
সাইন্সল্যাবে ১ জনসহ ঢাকায় ৯ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে সাইন্সল্যাব এলাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সকাল ১১টার দিকে বাটা সিগন্যালের দিক থেকে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একটি মিছিল সাইন্সল্যাবের দিকে আসতে থাকে এবং আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আন্দোলনকারীরা পাল্টা ধাওয়া দিলে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখান থেকে পিছু হটে।
লক্ষ্মীপুরে ১০
আন্দোলনের মধ্যে লক্ষ্মীপুরে আন্দোলনকারী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় ১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক। রোববার দিনভর শহরে বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্যে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী এবং ছয়জন যুবলীগের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। তবে প্রাথমিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
রংপুরে ৫
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন।
মুন্সিগঞ্জে ৪
মুন্সীগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে ৪ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। গুলিবিদ্ধ একজন ঢাকায় আনার পথে সিরাজখানে মারা যান একজন। আজ রোববার সকাল পৌনে ১০টা থেকে পৌনে ১২ টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষ ঘটে।
মাগুরায় ৪
মাগুরা সদর ও মহম্মদপুর উপজেলায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতাসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। মাগুরা সদর হাসপাতালের কর্মব্যরক চিকিৎসক ডা. অমর প্রসদ তিনজনের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে আরো এক জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নিহতরা হলেন- জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী (২৫), মহম্মদপুরের বালিদিয়া গ্রামের যুবক সুমন শেখ (২৬), একই উপজেলার ইউনুস মিয়ার ছেলে আহাদ (১৮) এবং শ্রীপুরের রায়নগর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যুবদলকর্মী ফরহাদ (২২)।
পাবনায় ৩
পাবনার খেয়াঘাট মোড়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থানকালে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মিছিল থেকে গুলি চালানো হলে ৩ জন নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা এই গুলি চালান। বিক্ষোভকারীরা এরপর তার গাড়ি পুড়িয়ে দেন। এই ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল থেকেই পাবনা শহরের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। সকাল ১১টার দিকে শহরের টাউন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্র-জনতা। টাউন হল এলাকায় ঘণ্টাখানেক ধরে অবস্থান করে আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে গোলাগুলি শুরু হলে অতর্কিত গুলির আঘাতে ৩ জন নিহত হয়।
বগুড়ায় ৫
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে বগুড়ায় ৫ জন নিহত হয়েছেন। দুপুর ১টা পর্যন্ত সেখানে দুজন নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে। বগুড়ার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক অবরোধ করে রেখেছে হাজারো বিক্ষোভকারী। শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রাস্তায় আগুন দিয়েছে তারা।
কুমিল্লায় ৪
কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা বিক্ষোভ মিছিলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে কমপক্ষে ২০ জন। নিহত আব্দুর রাজ্জাক রুবেল দেবিদ্বার উপজেলার বাড়েরা গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে।
ফেনীতে ৮
ফেনীতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রোববার বেলা দুইটার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। সকাল থেকে বিক্ষোভকারীরা অসহযোগের সমর্থনে মহিপাল এলাকায় বিক্ষোভ করছিলেন। তবে দুপুর দুইটার দিকে মহিপাল সেতুর নিচে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা মিছিল নিয়ে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় মুহুর্মুহু গুলি, ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সংঘর্ষে নিহত পাঁচজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া তিন গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্তত ১০জন আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষে হতাহতদের ফেনী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আসিফ ইকবাল দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে বলেন, এ মুহূর্তে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঁচজনের লাশ রয়েছে। তারা সবাই মহিপালে সংঘর্ষের ঘটনায় মারা গেছেন।
রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা সদরের নিউমার্কেট এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।