ঢাকা, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪ | ২২ আশ্বিন ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ ঘাটতির প্রবণতা বাড়ছে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
🕐 ৮:৩৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪

শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ ঘাটতির প্রবণতা বাড়ছে

উপমা (ছদ্মনাম) একজন ২৬ বছর বয়সী মেয়ে, রাজধানীতে সে একটা প্রাইভেট জব করে। ইদানিং সে একটুতেই ক্লান্ত হয়ে যায় এবং বিভিন্ন ঠাণ্ডাজনিত সমস্যাতে ভুগে। ডাক্তার তাকে ভিটামিন ডি লেভেল টেস্ট করতে দেন। টেস্টের পরবর্তী রিপোর্টে দেখা যায় সে ভিটামিন ডি এর অভাবে ভুগছে। রাজধানীর বারিধারাতে থাকে আরাফ ও তার পরিবার। আরাফ ৪ বছরের বাচ্চা। সারাদিনই জানালার কাঁচ ভেদ করে আসা সূর্যের আলোতে খেলে বেড়ায় সে। কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবত তার পায়ের হাড়গুলো নরম ও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, এবং রাতে তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে। আরাফের নানি তাঁকে দেখাশোনা করেন। ইদানিং তার শরীরটাও ভাল যাচ্ছে না। হাঁটু ভেঙ্গে তিনি কোনো কাজ করতে পারছেন না। তিনি ভাবছেন বয়সের কারণে হয়তো হাড় ক্ষয়ে যাচ্ছে। আরাফ ও তার নানী দুজনই ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার তাদের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষা করতে দেন। টেস্টের রিপোর্টে দেখা যায় তাদের শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ এর প্রচণ্ড ঘাটতি রয়েছে।

উপরের চিত্রটা শুধু গল্প নয়, বরং আমাদের আশেপাশের বাস্তব গল্পের একটা অংশ মাত্র। গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে ভিটামিন ‘ডি’ ঘাটতির প্রবণতা ব্যাপক। বাংলাদেশে শহর ও গ্রাম উভয় যায়গাতেই বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ জনগোষ্ঠীতে ভিটামিন ‘ডি’-এর ঘাটতি ২০ শতাংশের বেশি। আমাদের দেশে ভিটামিন ‘ডি’ টেস্টের খরচ তুলনামুলক বেশি হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষ টেস্ট করাতেও অনীহা প্রকাশ করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুস্থ হাড়, দাঁত এবং পেশির জন্য ভিটামিন ডি-র প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ভিটামিন ‘ডি’-র অভাবে শিশুরা রিকেটস রোগের শিকার হতে পারে এবং প্রাপ্তবয়স্করা অস্টিওম্যালাসিয়া নামক দুর্বল হাড়ের রোগে ভুগতে পারেন। এছাড়াও ভিটামিন ‘ডি’-র অভাবে মাতৃত্বজনিত জটিলতা যেমন- প্রি এক্লাম্পসিয়া, নবজাতকের জটিলতা যেমন- নবজাতকের হাইপোক্যালসেমিয়াজনিত খিঁচুনি, আবার দীর্ঘমেয়াদী অসংক্রামক রোগের ঝুঁকির সাথে সম্পর্কিত যেমন-কার্ডিওভাসকুলার রোগ, ডায়াবেটিস, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে।

এছাড়া শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, সংক্রমণ এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াইসহ নানা শারীরবৃত্তীয় কাজে লাগে ভিটামিন ডি। তাই শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকা প্রয়োজন। তবে শরীরে প্রয়োজনীয় এই ভিটামিন পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি না হলে বাইরে থেকে তা জোগান দিতে হয়। বেশ কিছু খাবার খেলে স্বাভাবিক ভাবেই শরীরে ভিটামিন ডি-এর জোগান দেওয়া সম্ভব।

সূর্য ভিটামিন ‘ডি’র অন্যতম উৎস হলেও, এর বাইরে দুধ, কুসুমসহ ডিম, চর্বিযুক্ত খাদ্য, মাছ, যকৃতে ভিটামিন ‘ডি’ থাকে। ভিটামিন ‘ডি’ দিয়ে সমৃদ্ধ করা হয়েছে এমন খাবার ভিটামিন ‘ডি’ ঘাটতি মোকাবেলায় অবদান রাখে। এ ক্ষেত্রে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ডি’ এর মতো চর্বিতে-দ্রবণীয় ভিটামিন সরবরাহের জন্য ভোজ্যতেল একটি উপযুক্ত বাহন হতে পারে, কারণ বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের ব্যবহার প্রায় সার্বজনীন।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ‘ভোজ্যতেল ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩” রয়েছে। ভিটামিন ‘ডি’-এর ঘাটতি প্রতিরোধ করতে একইভাবে ভোজ্যতেল ভিটামিন ‘ডি’ দ্বারা সমৃদ্ধকরণ হতে পারে একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর উপায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত, পাকিস্থান এবং ফিনল্যান্ডের মতো দেশগুলিতে পদ্ধতিগত ভিটামিন ‘ডি’ ফুড ফরটিফিকেশন বা সমৃদ্ধকরণ চালু করেছে। ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাব এড়াতে খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

 
Electronic Paper