কালো টাকা সাদা করতে হাউজিং ব্যবসার আদলে সমিতি
আ.লীগে ভর করে ‘কোটিপতি’ চাল মজিবুর
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪
টঙ্গী বাজারের একজন সাধারণ চাল ব্যবসায়ী থেকে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ১৫ বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন মজিবুর রহমান ওরফে চাল মজিবুর। আওয়ামী লীগের শাসনামলে অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থেই তার ব্যবসা-বাণিজ্য ফুলে-ফেঁপে ওঠেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
টঙ্গী বাজার এলাকায় দখলবাজি, চাঁদাবাজি, কালোবাজারি, চাল বাজারের সিন্ডিকেট করে কোটি কোটি টাকা উপার্জনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার আস্থাভাজন হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পেতেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও টঙ্গী অঞ্চলের শীর্ষ সন্ত্রাসী কাজী চঞ্চলের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এই মজিবুর। সাবেক কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন সরকারের সাথে দেশ বিদেশে ভ্রমণের সফরসঙ্গী হওয়া বেশকিছু ছবিও ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, টঙ্গী বাজার সোনাবান কমপ্লেক্সের সামনে ১৬ বছর আগেও ভ্রাম্যমাণ চাল ব্যবসায়ী ছিলেন মজিবুর রহমান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতার আস্থাভাজন হয়ে ওই মার্কেটে দোকান মালিক হন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার। বাজার কেন্দ্রিক সকল চাঁদা উত্তোলনের দায়িত্ব নিয়ে রাতারাতি বনে যান কোটিপতি। এরপর একেরপর এক দোকান পজিশন কিনতে থাকেন তিনি। কাউন্সিলরের আস্থাবাজন হওয়ার তাকে করা হয় টঙ্গীবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতি সাধারণ সম্পাদক। এরপর চাল বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন টাকার পাহাড়। বৈশ্বিক করোনা মহামারিকালীন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালের দাম বাড়িয়ে অবৈধভাবে চালের বাজার অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জানা যায় টঙ্গীর ভরান এলাকায় তার রয়েছে একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট। থাকেন একই এলাকার বিলাসবহুল ভবন রিয়ারভিউ টাওয়ারে। সেখানে দুই ইউনিটের একটি আলিশান ফ্ল্যাটের মালিক তিনি।
এছাড়াও মজিবুর রহমান কালো টাকা সাদা করতে সম্প্রতি নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন। হাউজিং ব্যবসার আদলে গড়ে তুলেছেন সমিতি ব্যবসা। এই সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় প্লট কিনে বহুতল ভবন নির্মাণ করে তা বিক্রি করেন তিনি এবং তার ঘনিষ্ঠ সহচররা। টঙ্গী অঞ্চলে এমন বহুতল ভবনের সংখ্যা প্রায় একডজন। টপটেন টাওয়ার, রিয়ারভিউ টাওয়ারসহ একাধিক ভবনের কাজ শেষ করে বিক্রি করেছেন তিনি।
এছাড়াও শেরে বাংলা রোডে খান টাওয়ার, মধুমিতা রোডে সাদেক বাসেত টাওয়ার ও কালবার্ট রোডে খায়ের টাওয়ার নামে তিনটি ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান আছে। এর বাইরেও তার নামে বেনামে রয়েছে অসংখ্য ফ্ল্যাট ও প্লট। অভিযোগ আছে স্থানীয় কাউন্সিলরের যোগসাজশে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়েই এই ব্যবসা পরিচালনা করেন তিনি। এছাড়াও পরিত্যক্ত ঘোষিত সোনাবান কমপ্লেক্সে তার রয়েছে তিনটি দোকান, চাল বাজারে দুইটি আড়ৎ পারিবারিকভাবে আছে একটি পাঁচতলা ভবন।
চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিরোধকারী হিসেবে অবস্থান নেওয়ায় ৫ আগস্টের পর তার নামে একাধিক মামলাও হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে মজিবুর রহমানকে কল দিলে মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা লিখে পাঠালে তিনি সিন করলেও কোনোধরণের মন্তব্য করেননি।