ঢাকা, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪ | ২২ আশ্বিন ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ

মুন্সীগঞ্জে ভিন্ন মোড়কে রাজনৈতিক মাঠ দখল

মাহমুদুল হাসান
🕐 ১২:৩৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২৪

মুন্সীগঞ্জে ভিন্ন মোড়কে রাজনৈতিক  মাঠ দখল

গণভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পালাবদলে মুন্সীগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতির ‘পালেও হাওয়া’ লেগেছে। ‘ভিন্ন মোড়কে চলছে চাঁদাবাজী, দখল এবং আধিপত্য বিস্তার’। এর নেপথ্যে স্থানীয় রাজনীতিতে ‘প্রভাবশালী’ একটি মহলের হাত রয়েছে। যা এখন অনেকটাই প্রকাশ্য। দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামী লীগ থেকে সুবিধা নিয়ে চলা নেতাদের কর্মকাণ্ডে এখন সাধারণ মানুষ ব্যাপক ক্ষুদ্ধ। দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, সরাসরি অভিযোগ পেলে নেওয়া হবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা।  

স্থানীয় রাজনীতিক এবং ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই বেপরোয়াড়া হয়ে উঠেছে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলী আজগর রিপন মল্লিক ও তার পরিবারের লোকজন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ৫ আগস্ট ২৪ পর্যন্ত উপজেলা বিএনপি ‘পাঁচ মিনিটের’ জন্য কোন মিছিল করেনি, এত বছর রিপন মল্লিক আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমযোতা করে ভাগ-বাটোয়ারায় অংশিদার হয়েছেন। পট-পরিবর্তনের পরপরই বেপরোয়া হয়ে উঠে রিপন মল্লিক ও তার অনুসারীরা। উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বাদ দিয়ে নিরাপরাধ লোকজনকে হামলাসহ বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। করা হচ্ছে আর্থিক লেন-দেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বারেক শেখ, সাধারণ সম্পাদক লিটন মাঝি, সিনিয়র সহ-সভাপতি বাচ্চু মাঝি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কাজী ওয়াহিদসহ বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে মামলার আসামি থেকে বাদ দেওয়া হয়। এদিকে বিভিন্ন ইউনিয়নের ভুঁইফোড় কর্মী ও নিরীহ লোকজনকে মামলা দেওয়া হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ সদর থানা একটি হত্যা মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করলে কিছু নাম পাওয়া যায়, যারা ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা।ওই মামলার ১২৪ নাম্বার আসামি বাবুল শেখ। তিনি ২৯ জুলাই থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত পবিত্র উমরা পালনের জন্য সৌদি আরবে ছিলেন। এছাড়া কামারখারা ও দিঘীরপাড় ইউনিয়নের রিপন মল্লিকের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শামীম মোল্লা এলাকার অসংখ্য নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় আসামী করেছে। যারা মামলার বেশিরভাগই ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে আসামী হয়েছেন। গত ২৯ আগস্ট আউটশাহী ইউনিয়নবাসী কিশোরগঞ্জ জেলার সদ্য বিদায়ী পুলিশ সুপার রাসেল শেখের বাড়িতে মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব মল্লিকের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে হামলা চালানো হয় ও ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। যাার সিসি ফুটেজ আছে। পরবর্তীতে রাসেল শেখের ছোট ভাইকে হত্যা মামলায় আসামী করা হয়। সুবচনি বাজারে নোঙর করে রাখা গাজী গ্রুপের ৪টি ট্রলার রিপন মল্লিকের নির্দেশে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মফিজ খান দখলে নেয়। 

এখানেই শেষ নয়, উপজেলার দিঘীরপাড় ইউনিয়নের অবস্থিত পদ্মা নদীতে বালু মহলও দখল করতে মরিয়া রিপন মল্লিকের নেতৃত্বে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনিস বেপারী ও দিঘীরপাড় ইউনিয়নের বিএনপির আহবায়ক শামীম মোল্লা। এই নিয়ে যে কোনো সময় রক্তখয়ী সংঘর্ঘ হতে পারে বলে জানা গেছে।

উপজেলার বেশ কয়েকজন নেতার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রিপন মল্লিক পরিবারের প্রভাব খাটিয়ে বিগত প্রতিটি নির্বাচনে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ঢাকা বিনিময়ে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে। আজকে পট পরিবর্তিনের পর তাদেরকে মামলা থেকে বাঁচিয়ে নিরীহ লোকদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এখানে দলীয়(বিএনপি) লোকদের নামেও মামলা দেওয়া হচ্ছে। যারা টাকা দিচ্ছে তাদের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে, যারা টাকা দিতে পারছে না তাদের মামলায় নাম ঢুকিয়ে দিচ্ছে। মামলা বাণিজ্য করে ইতোমধ্যে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। 

এসপি রাসেল শেখের পরিবারের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা আতঙ্কে আছি। আমাদের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। আমার মায়ের কাছে গিয়ে বলে আসছে ৫০ লাখ টাকা দিলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালা খুলে দেবে।

উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘প্রতিটি আন্দোলনে রিপন মল্লিক দেশের বাইরে থাকে। এবারও আন্দোলন শুরু হলে তিনি সিঙ্গাপুরে চলে যান। কিন্তু তার নির্দেশেই ৫ আগস্ট থানায় হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুট করা হয়। অনেক অস্ত্র এখনও উদ্ধার করা যায়নি। 

অভিযোগের বিষয়ে জানাতে চাইলে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলী আজগর রিপন মল্লিক বলেন, যে সব অভিযোগ আসছে এগুলো একদমই সঠিক নয়। আমরা নিরপরাধ মানুষকে মামলা দেওয়ার একদমই পক্ষে নই। এসব ঘটনার সঙ্গে আমি এবং আমার লোকজন জড়িত নয়। আমি এতই পাওয়ারফুল বিদেশে থেকেও ঘটনা ঘটিয়েছি। আমাকে এসব কথা শুনতে হচ্ছে। 

তিনি বলেন, আমি নিজ দায়িত্ব থানা ঠিক করা জন্য ১ লাখ টাকা দিয়েছি, এখন আরও ২ লাখ টাকা চাচ্ছে। আমি ২৫হাজার টাকার হাড়িপাতিল কিনে দিয়েছি। ডিসি, এসপিকে নিয়ে আমি থানার অস্ত্র উদ্ধার করে দিছি। হোন্ডা, স্বর্ণ অলঙকার টাকার উদ্ধার করে দিছি। 

বালু মহল দখল প্রসঙ্গে রিপন মল্লিক বলেন, এটা আমার নলেজে নেই। কিছু ছেলেপেলে ট্রলার ভাড়া করে বালু নেয়...। 

পুলিশ সুপার রাসেল শেখের বাড়িতে হামালা ও চাঁড়া দাবি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা আমি বলতে পারবো না। মাহবুবকে জিগাস করে বলতে হবে।

জানতে চাইলে মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মহীউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা মন্দির পাহারা দিয়েছি। কোনো জায়গায় যাতে কোনো অপ্রতিকর ঘটনা না ঘটে তার চেষ্টা অব্যহত আছে। তারপরও কিছু জায়গার ঘটনার অভিযোগের কথা শুনছি। কিন্তু আমাদের কাছে এখনও কোনো সরাসরি অভিযোগ আসেনি।

তিনি বলেন, রিপন মল্লিকের নামে কিছু অভিযোগ নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি বলছেন, ‘আমি টাকা নেইনি, আমি কোনো টাকা খাই না।’ কেউ যদি সরাসরি অভিযোগ দেন তাহলে আমরা সেণ্ট্রালে রির্পোট পাঠাবো। নিরীহ মানুষের নামে মামলা প্রসঙ্গে মহীউদ্দিন বলেন, ভুল-ক্রটি দুই একটা হয়ছে, যাচাই-বাছাই করতেছি।

গত ৫ আগষ্ট মুন্সীগঞ্জে সদর ও টঙ্গিবাড়ী থানা দুইটি থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করা হয়। পরিবর্তিতে গত ১৮ আগস্ট বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে সেনাবাহিনী। এখনও অনেক অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার বাকি আছে। যা উদ্ধারে অভিযান চলমান আছে বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার শামসুল আলম সরকার।

তিনি বলেন, লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ এখনও সব উদ্ধার হয়নি। আমাদের তৎপরতা অব্যহত আছে। যৌথ বানিহীর চলমান অভিযান চলমান রয়েছে।

 
Electronic Paper