লক্ষ্মীপুরে মুজিব চত্বরকে ‘শহীদ আফনান’ চত্বর ঘোষণা
মো. ওয়াহিদুর রহমান মুরাদ, লক্ষ্মীপুর
🕐 ৭:০৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৬, ২০২৪
লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের উত্তর তেমুহনীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চত্বরকে ‘শহীদ আফনান’ চত্বর ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা। একইসঙ্গে ঝুমুর এলাকায় ইলিশ চত্বরকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র চত্বর ঘোষণা করা হয়। এসময় জুলাই মাসকে শোকের মাস ও আগস্টকে বিজয়ের মাস বলে আখ্যায়িত করেন তারা।
গতকাল সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের জনগণ বিজয় মিছিল করে। পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা লক্ষ্মীপুর প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে প্রেস ব্রিফিং করে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন ও কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
প্রেসক্লাবে সমন্বয়কদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলার প্রধান সমন্বয়ক এনামুল হক, আবদুর রহিম আসাদ, ইমাম মো. রায়হান ও নাসিরুজ্জামান রাহাদ প্রমুখ।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে লক্ষ্মীপুরের প্রধান সমন্বয়ক এনামুল হক বলেন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সালাহউদ্দিন টিপু একজন খুনি। তিনি আমাদের ৪ ভাইকে গুলি করে হত্যা করেছে। তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম রকি, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি অনেকের নাম উল্লেখ করে তাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।
এনামুল হক আরও বলেন, মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে শহরে বিজয় মিছিল করা হবে। সন্ধ্যায় জেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হবে। একই সঙ্গে ঝুমুর এলাকা আমাদের আন্দোলনের স্থান ছিল। ঝুমুরের ইলিশ চত্বরকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র চত্বর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
সমন্বয়ক আবদুর রহিম আসাদ বলেন, আমাদের আন্দোলনকে সংহতি জানিয়ে সর্বস্তরের মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছে। স্বৈরাচার পতন করতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। সারা দেশে বিজয় মিছিল হচ্ছে। চেয়ারম্যান টিপু আমাদের ভাইদের গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা তার ফাঁসি চাই। অতিদ্রুত তাকে গ্রেফতার করে ফাঁসি দিতে হবে।
অন্যদিকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর ও রামগঞ্জ থানা ভবনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত সোমবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত দুটি থানা, রামগঞ্জ উপজেলাসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর ৫০টি বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া রামগঞ্জ ও রায়পুর থানাসহ কয়েকটি গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়। এসব ঘটনায় লক্ষ্মীপুরে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন টিপুর বাসভবনে আগুন দেয় উত্তেজিত জনতা। এ ছাড়াও তারা লক্ষ্মীপুর পৌর মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূইয়া, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন ভূইয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাকিব হোসেন লোটাস, চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী মামুনুর রশিদ বাবলুর বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করে।
এদিকে লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী কারাগার থেকে নেতা-কর্মীদের শান্ত থাকার জন্য আহ্বান জানান। পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে নেতা-কর্মীদের শান্ত থাকা ও সহিংসতা না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই আহ্বান জানান জেলা জামায়াতের আমীর রুহুল আমিন ভূইয়া।
এ বিষয়ে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসান মোস্তফা স্বপন বলেন, আমাদের দুই থানায় অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। ক্ষয়ক্ষতি ও লুটপাটের ঘটনা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
রবিবার থেকে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় ১২ জন মারা গেছে। সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরুপ পাল নিহতদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর বাসা থেকে ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিহতদের মধ্যে আটজন ছাত্রলীগ-যুবলীগের সদস্য এবং চারজন আন্দোলনকারী।
আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু এবং জীবিত উদ্ধারকারীরা কে কোথায় আছেন তা জানা যায়নি।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরুপ পাল বলেন, নিহতদের মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহত শিক্ষার্থীরা হলেন- রায়পুর উপজেলার আবদুল গণির ছেলে ওসমান গণি, সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর গ্রামের কাওসার ওয়াহেদ, ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে ছাবির হোসেন। এ ছাড়া আফনান পাওয়ারী নামের এক শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যায়।
তার বাড়ি জেলা শহরের পৌর বাস টার্মিনাল এলাকায়। ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা হলেন- তাওহিদ কবির রাফি, আকিবুল হাসান সিফাত, হারুনুর রশিদ, আহমেদ শরীফ, মো. রাসেল ও অজ্ঞাত ৩ জন।
৪ আগস্ট রাত ২টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমঝোতা করে চেয়ারম্যান টিপুর বাসার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগেই তাদের দুটি ভবনের ৩ তলা পর্যন্ত সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এনআরবিসি ব্যাংকের উপশাখা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একই দিন দুপুর ১২টায় মাদাম ব্রিজ এলাকায় ও দুপুর ২টার দিকে তমিজ মার্কেট এলাকার বাসা থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর টিপুর নেতৃত্বে গুলি চালানো হয়।
আন্দোলনকারীদের দেওয়া আগুনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নের বাসার নিচতলা ও পঞ্চম তলা পুড়ে যায়। পাশে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি চৌধুরী মাহমুদুন্নবী সোহেলের বাসায় আগুন দেন আন্দোলনকারীরা।