পুলিশের এতো কর্মকর্তারা গেলো কোথায়
মাহফুজুল আলম খোকন
🕐 ৮:৫৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০২৪
সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ পুলিশের বহু সদস্য নিহত হওয়ায় পুলিশের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। আর তাতে করে তাদের কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে অস্থিরতা দেখে দিয়েছে। এজন্য তারা দায়ী করছেন পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের। স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অব্যাহতি নিচ্ছেন কনস্টেবলরা।
গত ৫ আগস্ট দুপুর ১টা ৪৫ মিনিট, ততক্ষণে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে গেছে সর্বত্র। সকাল থেকেই নীরব ভূমিকায় ছিলো পুলিশ সদস্যরা। ২টার পর থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিজয় মিছিল করতে থাকে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ। বিকেল সাড়ে তিনটায় হটাৎ একযোগে উধাও হয়ে যায় উত্তরা পূর্ব থানার ইন্সপেক্টর থেকে শুরু করে সকল কর্মকর্তা। বিকেল ৪টা নাগাদ আরম্ভ হয় গুলির ঘটনা। বিষয়টি কিছুক্ষণের মধ্যেই ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
মুহুর্তের মধ্যেই বাড়তে থাকে লাশের সারি। পুলিশ খুঁজতে থাকেন সিনিয়রদের। কিন্তু কোনো অফিসারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। একসময় থানায় আক্রমণ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। আক্রমণ করা হয় থানায়, পিটিয়ে হত্যা করা হয় বেশ কিছু পুলিশ সদস্যকে। কোনো কোনো পুলিশ সদস্যদের মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয় থানার পাশের ল্যাম্বপোস্টের সাথে। যারা পালাতে পেরেছেন, পালিয়েছেন। বাকিদের ভাগ্যে জুটেছে নির্মম মৃত্যু। এমনটা ঘটেছে উত্তরাসহ ডিএমপির অধিকাংশ থানায়।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রের তথ্য মতে উত্তরা পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ এর কক্ষের পিছনের জানালা ভেঙ্গে সকল সিনিয়ররা পালিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কনস্টেবল বলেন, ‘আমার ডিউটি ছিলো গাবতলীতে। সন্ধা ৭টা নাগাদ আমাদের নিয়ে আসা হয় মিরপুর ১ নম্বর গোল চত্বরে। সেখান থেকে মিরপুর ২ নম্বর মডেল থানায় আনা হয়। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতার রোষানলে পড়লে আমরা থানায় অবস্থান নিই। এসময় আমরা বেশ কিছু সদস্য থানার ছাদে আটকা পড়ি। বিক্ষুব্ধ জনতা থানায় হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং নিচতলায় থাকা সাউন্ড গ্রেনেড আমাদের ওপর নিক্ষেপ করতে থাকে। আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট আসলে সাহস করে একজন পুলিশ সদস্য নিচে নেমে আসলে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এটি দেখে সরে যান ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট। এসময় আমরা সবাই দোয়া কালিমা পড়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেয়া আরম্ভ করি। বিষয়টি পুলিশ লাইনে জানালে কোন কমান্ডিং অফিসার আমাদের উদ্ধারে আসেনি। পরে পুলিশ লাইনসের কিছু সদস্য সিনিয়র অফিসারদের অনুমতি উপেক্ষা করে, কেউ লুঙ্গি কেউ খালি গায়ে প্যান্ট পরে, আবার কেউ জুতা ছাড়াই ব্যারাক থেকে অস্ত্র নিয়ে গুলি করতে করতে থানার সামনে এসে আমাদের উদ্ধার করে পুলিশ লাইনসের ব্যারাকে নিয়ে যায়। সেই স্মৃতি মনে হলে আর পুলিশের চাকরি করার ইচ্ছা হয় না। কান্নাজড়িত কন্ঠে এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন তিনি।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেক পুলিশ সদস্যদের লাইভে এসে ইস্তফা দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাদের দাবি, সেইসব বিসিএস অফিসারদের শাস্তি এবং আগামীতে পুলিশের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে তারা কর্মস্থলে ফিরবেন না।
এদিকে পুলিশ লাইনসে নিহত পুলিশ সদস্যদের কফিনের সামনে দাড়িয়ে প্রতিবাদ করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সেই ভিডিওটিতে বলতে শোনা যায়, পুলিশের বৈষম্য ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মস্থলে ফিরবেন না বলেও হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) বলেন, এই মৃত্যুর দায় অফিসাররা এড়াতে পারেন না। উনারা চাইলে উত্তরা পূর্ব থানার একশো জন পুলিশ নিয়ে একসাথে আর্মপুলিশ বা র্যাব-১ এ ফিরতে পারতেন। কিন্তু তারা নিজেদের জীবন বাঁচাতে থানার সকল সদস্যদের বলি দিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এদিকে গত শুক্রবার বাংলাদেশ পুলিশের নবনিযুক্ত আইজিপি মোহাম্মদ ময়নুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেছেন, তিনি নিজেও বৈষম্যের শিকার। বর্তমান আধুনিক পুলিশ ব্যবস্থায় বৈষম্য রাখা হবেনা, সবাইকে নির্ভয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।