ঢাকা, শুক্রবার, ২ জুন ২০২৩ | ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শাফিনের মুক্তিযোদ্ধা দাদা

ইমরান পরশ
🕐 ১:৪১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০২১

শাফিনের মুক্তিযোদ্ধা দাদা

শাফিনের দাদা শরীফ উদ্দিন মুন্সি। আশি বছর বয়সেও শরীরে জোর আছে। এলাকার স্কুল, কলেজ, সামাজিক কোনো অনুষ্ঠান হলেই সবাই অতিথি করে নিয়ে যান। শাফিনও মাঝে মাঝে দাদার সঙ্গে যায়। ফুল দিয়ে দাদাকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। বিশেষ করে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস এলে দাদাকে অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। সারাদিন শুধু অনুষ্ঠান আর অনুষ্ঠান।

দাদাকে সবাই বীরপ্রতীক বলে। শাফিন এর মানে বোঝে না। তবে তাদের বাড়িতে অনেক বড় বড় মানুষ আসে এটা বোঝে। জেলা প্রশাসক এসেছিলেন সেদিন। ঢাকায় বড় একটা অনুষ্ঠানে দাদাকে ডেকেছে। শাফিনও দাদার সঙ্গে যাওয়ার বায়না ধরল। কয়েকটা টেলিভিশনেও নাকি কথা বলতে হবে। দাদা সাধারণত টেলিভিশনে কথা বলতে চান না। অনেক সময় সত্য কথা নাকি এখানে বলা যায় না। এজন্য দাদাও এসব টেলিভিশন এড়িয়ে চলেন। শাফিনের দাদা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। একাত্তরে নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন।

নীরা শাফিনের ফুপাত বোন। ক্লাস টেনে পড়ে। একদিন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়তে গিয়ে নানার নাম দেখে তো অবাক! নীরার নানাই তো শাফিনের দাদা। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তিনি রেসকোর্স ময়দানে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু যখন ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন তখন তিনিও সেখানে ছিলেন।

তারপর বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে তিনি পালিয়ে এলাকায় চলে আসেন। এলাকায় এসে নিজে একটি বাহিনী গড়ে তোলেন। রাজশাহী, বগুড়া, গাইবান্ধার অনেক জায়গায় গিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছেন। পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন।

যুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে তিনি বইও লিখেছেন। সেই কারণে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে লেখার কারণে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ২০১৯ পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশের গ্রন্থমেলা উদ্বোধনের দিনে সম্মাননা পুরস্কার তুলে দেবেন। শাফিন সঙ্গে যাবে দাদার। একা একা কোথাও যাওয়াও এখন সমস্যা। কারও না কারও সাহায্য লাগে তার।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বক্তব্য রাখলেন। তারপর একে একে সবার হাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। শাফিনকে সঙ্গে নিয়েই দাদা মঞ্চে উঠলেন। পুরস্কার গ্রহণ করলেন। শাফিনের বুকটা আনন্দে ভরে গেল। সবাই যখন করতালি দিয়ে মুখরিত করল তখন কী যে ভালো লাগল শাফিনের।

প্রধানমন্ত্রী বললেন, আপনাদের মতো যোদ্ধারা ছিল বলেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। নতুন প্রজন্মকে একটা সুন্দর সুখী সমৃদ্ধ দেশ দিয়ে যেতে পারলেই শান্তি। তোমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়বে তখন বুঝতে পারবে মুক্তিযোদ্ধারা কী ছিলেন।

ট্রেনে করে দাদার সঙ্গে বাড়ি ফিরছে শাফিন। ট্রেনে দাদার কাছ থেকে ভাড়া নিল না। আরও অবাক হলো শাফিন। একবার তারা তিন বন্ধু মিলে কড্ডার মোড় থেকে ট্রেনে করে বগুড়া গিয়েছিল। কারও কাছে ভাড়া ছিল না। তাদের টিটি খুব বকেছিল। অথচ আজ দাদার সঙ্গে যাচ্ছে কিন্তু ভাড়া লাগছে না। কিছু লোক এসে খোঁজ নিচ্ছে দাদার কিছু লাগবে কি না। সুবিধা অসুবিধা খেয়াল রাখছে তারা। টিটি এসে বলে গেল, চাচা আমি নেমে যাব। সবখানে আমি আপনার কথা বলে রেখেছি। যখন যা লাগবে বলবেন। সব পেয়ে যাবেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের এত সম্মান দেয় লোকজন! গর্বে শাফিনের বুক ভরে গেল। স্টেশনে নেমে শাফিন, দাদার সঙ্গে বাড়ির দিকে রওনা দিল।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper