ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জিম করবেট ও শিকারের গল্প

আবু আফজাল সালেহ
🕐 ৪:১১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০২১

জিম করবেট ও শিকারের গল্প

জিম করবেটের নাম শোনামাত্রই কেমন যেন রোমান্স লাগে। বনজঙ্গল আর পশুপাখির কথা মনে পড়ে। তার নান্দনিক কাহিনী-বর্ণনা অন্যরূপ দিয়েছে। তোমরা জেনে আশ্চর্য হবে- বুনো পশুপাখির অনুসরণ করে পরবর্তীকালে ডাক শুনেই পশুটির নাম বলতে পারতেন করবেট। তাছাড়া, কতদূরে প্রাণীটির অবস্থান, কী তার অবস্থা ইত্যাদি বলতে পারার সক্ষমতা তাকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা দিয়েছিল। তিনি শিকারবিদ ও প্রকৃতি-লেখক। পৃথিবীতে এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যারা স্বীয় যোগ্যতা, মেধা, সাহস, বীরত্ব ও দেশপ্রেমের জন্য অমর হয়ে আছেন। এদের মধ্যে দুঃসাহসী শিকারি জিম করবেটের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জিম করবেটের পুরো নাম এডওয়ার্ড জেমস করবেট। তবে তাকে জিম করবেট হিসেবে সকলেই আমরা চিনি।

জিম করবেট মাই ইন্ডিয়া (১৯৫২) নামে একটি বই লেখেন। সেখানে তিনি ভারতবর্ষের সহজ-সরল মানুষের কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি এ অঞ্চলের মানুষকে খুব ভালোবাসতেন। তাই তো আফ্রিকা মহাদেশের কেনিয়াতে যাওয়ার পরেও এদেশের মানুষকে মনে রেখে বই লিখেছেন। তাই ঝটপট এ বইটিও তোমরা পড়ে ফেলতে পারো। তার সব বই শিশু-বুড়ো সবাইকে খুবই আনন্দ দেবে। ওহ, একটা কথা বলাই হয়নি। তার জন্ম ইতিহাস। তার বাবা ছিলেন ব্রিটিশ। অর্থাৎ যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেছেন। যেমন আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দাদের আইরিশ বলা হয়। তিনি ব্রিটিশ আমলে ভারতের নৈনিতালের কাছে পোস্ট মাস্টারের চাকরি করতেন। সে সূত্রে করবেটের জন্ম ভারতের নৈনিতালে। আমাদের দেশভাগের পর অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের পর কেনিয়ায় গমন করেন এবং নাইরোবিতে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯ এপ্রিল, ১৯৫৫ সালের ঘটনা সেটি।

তোমাদের বলে রাখি, সে সময়ে ভারতের অনেক স্থানে বাঘ-লোপার্ডের উৎপাত ছিল। তখনকার ভারতবর্ষে আমরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানও ছিল। একথা অনেকেই তোমরা জানো। তো বাঘের উপদ্রব আমাদের দেশেও ছিল। যেসব প্রাণী মানুষ খেত বা হত্যা করত বা নেশা হয়ে যায় তাদের ‘মানুষখেকো’ বা ‘ম্যান-ইটিং’ বলা হয়। মানুষখেকো বাঘ বা লেপার্ড হত্যা করার জন্য করবেটকে দাওয়াত দেওয়া হতো। বলে রাখি, করবেটের জন্মস্থান নৈনিতালের চারিদিকে ঘন বনজঙ্গল ছিল। দারুণ লাগত বন ও পশুপাখি। এ নেশা থেকেই শিকারি হয়ে যান করবেট। তোমরা এটাও জেনে রাখো। মানুষখেকো বাঘ বা লেপার্ড না হলে তিনি কোনো প্রাণীকেই হত্যা বা গুলি করতেন না! অনেক মানুষখেকো বাঘকে গুলি করে অসংখ্য মানুষ বা এলাকাবাসীকে মুক্ত করেছেন করবেট।

১৮৭৫ সালের ২৫ জুলাই বর্তমান ভারতের উত্তরখ-ের কুমায়ুনের নৈনিতালে জন্মগ্রহণ করেন। দেশান্তর হওয়ার পর তিনি কেনিয়ার নাইরোবিতে অবসর কাটাতেন। এসময়ে তার অনেক বন্ধু শিকারকাহিনী লিখতে অনুপ্রাণিত করেন। সে হিসেবে তিনি বেশ কিছু শিকারকাহিনীর বই লেখেন। এসব বই শুধু তোমাদের নয়, বড়দেরও যথেষ্ট আনন্দ দেয়। আমি তো প্রায় পড়তে চাই তার শিকারকাহিনী। চমৎকার শব্দবুনন, সহজ ভাষায় নিখুঁত বর্ণনা তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গেছে। তার মতো সুন্দর শিকারকাহিনী খুব কম লেখকই লিখতে পেরেছেন। তাই বলা যায়, দক্ষ এ শিকারবিদ সার্থক লেখকও বটে। তার ছিল চমৎকার দৃষ্টিভঙ্গি, তীক্ষ শোনার ক্ষমতা এবং প্রখর স্মরণশক্তি। আর ছিল প্রচণ্ড সাহস ও মনোবল ছিল দৃঢ়। এসব কারণেই সাফল্যের স্বর্ণশিখরে সহজেই পৌঁছাতে পেরেছেন।

ছোটবেলা থেকেই করবেট শিকার করতেন। বড় হয়ে তিনি বিখ্যাত শিকারি হয়ে উঠলেন। তবে, তিনি এসব শিকারকাহিনী মোটেও লিখতে চাননি। কিন্তু বন্ধুদের বিশেষ অনুরোধে তিনি লিখে ফেললেন তার জীবনে ঘটে যাওয়া সব রোমাঞ্চকর ঘটনা। তিনি সহজ করেই লিখে বসলেন ভয়ঙ্কর সব মানুষখেকোদের কথা, যাদের তিনি শিকার করেছেন। ১৯৪৬ সালে ম্যান ইটার্স অফ কুমায়ুন নামে শিকারকাহিনী নিয়ে লেখা তার প্রথম বইটি প্রকাশিত হয়। বইটি খুব দ্রুত সারাবিশ্বে শিকারকাহিনী হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এর পর তিনি শিকার কাহিনী নিয়ে একে একে লিখে ফেললেন ম্যান ইটিং লেপার্ড অব রুদ্রপ্রয়াগ (১৯৪৮) জঙ্গল লোর (১৯৫৩), দ্য টে¤পল টাইগার অ্যান্ড মোর ম্যান ইটার্স অব কুমায়ুন (১৯৫৪)-এর মতো লোমহর্ষক সব শিকারকাহিনী। বইগুলো পড়ে ফেলতে পারো। এক নিমেষেই পড়া যায় বাস্তব কাহিনী নিয়ে করবেটের বইগুলো। বইগুলোতে বনজঙ্গল, বিভিন্ন প্রাণীর বৈশিষ্ট্য-আচরণ ইত্যাদি জানতে পারবে। যা তোমাদের খুব কাজে লাগবে। শিকারকাহিনীগুলো গা শিউরে দেবে। আর বুঝবে কতটা ধৈর্যশীল ছিলেন তিনি। সফলতার পেছনে ধৈর্য যে কত দরকার করবেটের কাহিনীগুলো পড়লেই বোঝা যাবে!

আর একটা কথা বলে রাখি। তিনি প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি একজন ভালো সৈনিকও ছিলেন। তিনি অনেক পদক আর পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা ভারতবর্ষের লোকজনের অকৃত্রিম ভালোবাসা পেয়েছেন। এখনো বিশ্বে অনেক পরিবেশবাদী বা প্রকৃতিপ্রেমীর ভালোবাসায় সিক্ত তিনি। ভারতের একটি সাফারি পার্কের নামাকরণ করা হয়েছে তার নামে। নৈনিতালের কাছে ‘করবেট ন্যাশনাল পার্ক’।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper