অন্তু এখন অঙ্ক পারে
এস আর শাহ্ আলম
🕐 ১:১২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৩, ২০২১
অন্তু পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। সে বরাবরই অঙ্কে কাঁচা বলে, বাবা বাড়িতে বারো মাস আলাদাভাবে শিক্ষক রাখতেন। তবু তার মাথায় অঙ্ক ঢুকত না।
অঙ্ক না বোঝার ফলে অন্তু নিয়মিত স্কুলে যেত না। ঠিকমতো সহপাঠীদের সঙ্গে মিশত না। ফাইনাল পরীক্ষার মাস তিনেক বাকি আছে। বাড়িতে যে শিক্ষক অন্তুকে পড়াতেন, তিনি হঠাৎ চাকরির সুবাদে ঢাকা চলে যান। তাতে অন্তু পড়ে যায় মহাভাবনায়। একদিন অফিস থেকে ফিরে বাবা বললেন, আমি শংকর স্যারের সাথে কথা বলেছি। তুমি কাল থেকে তার বাসায় যাবে।
শংকর স্যারের নাম শুনে চমকে উঠে অন্তু। তিনি ছিলেন ওদের স্কুলের অঙ্কের টিচার। খুব তেজি ও মেজাজি স্বভাবের মানুষ। তার একটা বেতের আঘাত ক্লাসের কেউ সহ্য করতে পারত না। সে জন্য স্কুলের সবাই তাকে যমদূতের মতো ভয় পেত। সামনে ফাইনাল পরীক্ষার কথা ভেবে পরের দিন অন্তু চলে যায় শংকর স্যারের বাসায়। গিয়ে দেখে অদ্ভুত কাণ্ড স্যারের সামনে দুটি বেঞ্চে বসা দশজনই ছাত্রী। সে একাই ছাত্র। একসঙ্গে এতগুলো মেয়ের সামনে অঙ্ক কষতে না পারলে লজ্জায় সে কীভাবে পরের দিন মুখ দেখাবে! অন্তুর নীরবতা দেখে স্যার রসিকতা করে বললেন, অন্তু বাবু, তুমি কি আমাদের সবাইকে দেখতে এসেছ, নাকি অঙ্ক শিখতে এসেছ!
কথা না বাড়িয়ে বইখাতা হাতে নিয়ে অন্তু বসে পড়ল। স্যার সবাইকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। সবাই নিজ নিজ খাতায় লিখছে। অন্তুর মাথায় কিছুই ঢুকছে না। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। মূঢ়ের মতো বসে রইল সে। কিছুক্ষণ পর শুরু হলো খাতা দেখানোর পালা। এক এক করে স্যার সবার খাতা দেখে টিক চিহ্ন দিচ্ছেন। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটল অন্তুর খাতা হাতে নিয়ে। ভ্রু কুঁচকে স্যার অন্তুকে প্রশ্ন করলেন, তোর খাতা শূন্য কেন?
হকচকিয়ে উত্তর দিল সে, স্যার আমার মাথায় কিছু ঢোকেনি। কথাটা শোনামাত্রই স্যার চোখ মুখ লাল করে অন্তুর মুখের ওপর খাতাটা ছুড়ে মেরে বেত হাতে নিয়ে ঠাসঠাস করে অন্তুর পিঠে কয়েকটা বাড়ি বসিয়ে দিলেন। ধমকের সুরে বললেন, এতক্ষণ ধরে যা বোঝালাম, তা বিগত নয় মাস বুঝিয়েছি। বেতের আঘাতে অন্তুর চোখে জল এসে যায়। তা দেখে উপস্থিত অনেকেই মুচকি হাসি দিতে লাগল। সবাইকে শান্ত করে স্যার অন্তুকে বললেন, তুই অঙ্কে এতটা কাঁচা জানতাম না। এই লজ্জা শুধু তোর একার নয়, আমাদের স্কুলের বদনাম। তাই আজ তোকে এমন শিক্ষা দেব, যাতে তোর মন বলে অঙ্ক শেখা জরুরি!
স্যার অন্তুর দু’হাত দিয়ে দু’কান ধরিয়ে বেঞ্চের উপর একঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখলেন। এই লজ্জা অন্তুকে প্রকৃত ছাত্র হিসেবে গড়ে তোলে। সে পড়াশোনায় অনেক পরিশ্রমী হলো। দেখতে দেখতে পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। পঞ্চম শ্রেণির আশিজন শিক্ষার্থীর মধ্যে অন্তু প্রথম হলো। স্কুলের শিক্ষকরা অন্তুর রেজাল্টে আশ্চর্য হলেন। শংকর স্যার অন্তুর মাথায় স্নেহের পরশ দিয়ে বললেন, সত্যি তোর রেজাল্টে আমি মুগ্ধ হয়েছি।
স্যারকে কদমবুসি করে অন্তু বলল, আপনার সে দিনের শিক্ষাই আমাকে ভালো ছাত্র হওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। সে দিন যদি এমনটি না করতেন, তাহলে আমি হয়তো সারাজীবন পিছিয়ে থাকতাম। এরপর আর কখনই অঙ্ক দিয়ে অন্তুকে ঠেকিয়ে রাখা যায়নি!
বেড়া, পাবনা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228