ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মিন্তি

ব্রত রায়
🕐 ৪:২৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০২১

মিন্তি

: চাচি, কচুর লতি কত করে দিচ্ছেন ভাগা?
: ত্রিশ ট্যাকা।
: বিশ হয় না?
: ক্যামনে বাজান? এতক্ষুন বইসা বাছলাম যে তার মজুরি দিবেন না?
: আচ্ছা, দেন এক ভাগা।... ধইন্যা পাতাও দেন এক ভাগ।... কাঁচামরিচ কি ঝাল হবে?
: সেই ঝাল হইব মামা!
: তাহলে আড়াই শ’ গ্রাম দেন।

আদিত্য মিন্তিকে জিজ্ঞেস করে, ‘কচুর লতি খান?’ লোকটি গম্ভীর প্রকৃতির। জবাব দিল না। সম্ভবত রসিকতা ভেবে নিয়েছে।
লোকটি তার সঙ্গে আছে একটি ঘণ্টা যাবত। এর মধ্যে একটিও কথা বলেনি। কম কথার মানুষরা ব্যক্তিত্ববান হয়। আদিত্য নিজে প্রচুর কথা বলে। সেই হিসেবে সে ব্যক্তিত্বহীন। কম কথার লোককে সে ভয় ও সমীহ করে।

আদিত্য নিজের মনেই বলল, ‘ইচা মাছ দিয়ে কচুর লতি বেশি মজা।’ লোকটি চুপ রইল। ব্যক্তিত্ববান।
আদিত্য ঠিক করল আধাকেজি ইচা মাছ কিনবে।

এরপর সে বেগুন কিনল, পটল কিনল, মিষ্টি কুমড়ো কিনল। আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা কিনল। শসা, টম্যাটো, লেবু, কিনল সালাদের জন্য।

এর আগে মাছবাজারে গিয়ে ইলিশ, রুই, কই আর বাইন মাছ (নাকি বাইম?) কিনেছে। মাছ কাটিয়েছে। মুরগি কিনল একজোড়া। ডিম এক ডজন। শুঁটকি কিনল এক শ’ গ্রাম। চ্যাপা শুঁটকি।


মাছ কাটাতে দিয়ে দোতলায় গিয়ে পোলাওয়ের চাল, ডাল, মসলা, চিনি, লবণ, চায়ের পাতা, তেল, ঘি কিনেছে।
মিন্তি লোকটি সঙ্গে সঙ্গে আছে। লোকটি বিরক্ত হচ্ছে। আদিত্যকে বিদায় দিতে পারলে নতুন ক্লায়েন্ট পেত।
কিছু ফল কি কিনতে হবে না? আদিত্য কলা, আপেল আর একটা ছোট তরমুজ কিনল। মিন্তি লোকটির মুখের রেখা কঠিন হচ্ছে। তার ঝাঁকা ভরে গেছে। তবে এর চেয়ে বেশি বোঝা টানতেও আদিত্য দেখেছে লোকজনকে। এও পারবে।

আদিত্য লোকটিকে জিজ্ঞেস করল, ‘চা খাবেন এক কাপ?’
লোকটি মাথা নাড়ল, খাবে না। ‘ডাব?’
এতক্ষণে লোকটির মুখে ভাষা ফুটল, ‘কিচ্ছু খাইতাম না ভাইজান!’
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘এই-সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে দিতে হবে ভাষা
এই-সব শ্রান্ত শুষ্ক ভগ্ন বুকে ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা।’
কবিতার নাম ‘এবার ফেরাও মোরে’। আদিত্যকেও এবার ফিরতে হবে। প্রচুর বাজার হয়েছে।
ভালো কথা, রবীন্দ্রনাথ কি বাজারহাট করতেন? মনে হয় না। তাদের জমিদারিতে কর্মচারীরা এসব করত, সম্ভবত বাজার সরকার নামে একটি পদ ছিল সে আমলে।
আদিত্য লোকটিকে এবার জিজ্ঞেস করল, ‘কেন খাবেন না? তেষ্টা পায়নি?’
লোকটি এ প্রশ্নের আর জবাব দিল না।


সম্ভবত ক্ষুধা-তৃষ্ণাকে জয় করে ফেলেছে লোকটি। চমৎকার ব্যাপার। ব্যক্তিত্ববান এবং সিদ্ধপুরুষ। হাফ বয়েল্ড না, ফুল বয়েল্ড!

: ভাইজানের নাম কী?
দ্বিতীয়বার করতে হলো প্রশ্নটা। এবার জবাব এলো।
: ইদ্রিস মণ্ডল।
: বাড়ি কই?
: নওগাঁ।
: ঢাকায় কই থাকেন?
আবার মুখে তালা মেরেছে ইদ্রিস মণ্ডল। আদিত্য প্রশ্নটা রিপিট করল।
: আগারগাঁও বিএনপি বস্তিতে।
আর কোনো দলের নামে বস্তি আছে বাংলাদেশে? বিএনপির নামে আছে। বিরাট অর্জন এটা। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে জিয়ার নামের এয়ারপোর্টের নাম বদলে রেখেছে ‘হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর’। বিএনপি বস্তির নাম কেন চেঞ্জ করেনি? অবশ্যই এটা তাদের মহত্ত্ব। আদিত্য মনে মনে বাহ্বা দিল আওয়ামী লীগকে।
: কে আছে সেখানে?
: যাগো থাকনের কথা!
বাবা, বেশ তেজ আছে তো ইদ্রিস আলীর। না, আলী না। মণ্ডল। ঋজু ব্যক্তিত্ব।
: মানে কী? বউ-ছেলেমেয়ে-মা-বাপ?
: জে।
: কয়জন সদস্য পরিবারে?
: সাত।
: বউ, তিন বাচ্চা আর মা-বাপ?
: বাপ নাই। মা আছে খালি। বাচ্চা চাইরটা।
: চারটা? কী কন মিয়া? আপনার বস্তিতে কি ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের লোক যায় নাই?
লোকটি গম্ভীর হয়ে যায়। এসব রঙ্গ-রসিকতা ব্যক্তিত্ববানরা পছন্দ করে না।
একটু পরে মুখ খোলে।
: বউ দুইজন!
: দুইজন? সাবাশ! আপনি তো বাঘের বাচ্চা! এক ঘরে দুই বউ নিয়া থাকেন?
এই প্রশ্নের জবাব লোকটি দেবে না জানা কথা।

: একটু আগে যে বললেন, যাগো থাকনের কথা তারাই থাকে- দুই বউ কি থাকার কথা আপনার?
একটি গল্প আছে। কিন্তু গল্পটা বোঝা যাচ্ছে না। এ লোক আর কিছু বলবে না পেটে বোমা মারলেও।

আদিত্য গাড়ির দিকে হাঁটে। পেছন পেছন মিন্তি। মিন্তির মাথায় মালামাল তুলে লোকজন খুব টেনশনে থাকে- যদি পালায় পেছন থেকে! অবশ্য এরকম যে একেবারে ঘটে না তা তো নয়। আদিত্যর কোনো টেনশন নেই। যদি লোকটি পালায় সে খুশিই হবে। কেন? কারণ আছে। রিমোট চাবি চেপে গাড়ির পেছন খোলে আদিত্য। লোকটির ঝাকা নামাতে সাহায্য করে। পেছনে সব জিনিসপত্রের জায়গা হয়ে যায়। বালতিতে রাখা হয় মাছ। লোকটি অপেক্ষা করে। আদিত্য তার মজুরি বুঝিয়ে দেবে। কিন্তু আদিত্যর সেসব দিকে খেয়াল নেই যেন। সে গাড়ির দরজা খুলে ড্রাইভারের সিটে বসে। আর লোকটিকে বলে সামনের সিটে এসে বসতে। লোকটি তাকিয়ে থাকে।

আদিত্য বলে, আরে আমার বাসায় গিয়ে মালামাল নামিয়ে দিয়ে আসবেন। পারবেন না? লোকটি রাজি হয়। কিন্তু সে দরজা খুলতে পারে না। আদিত্য এসে খুলে দেয়। লোকটি সসংকোচে সিটে বসার পর সে দরজা লাগিয়ে দেয়। গাড়ি চলতে থাকে আগারগাঁওয়ের দিকে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper