তোমাদের প্রিয় লেখক রণজিৎ সরকার
শফিক হাসান
🕐 ৩:৪২ অপরাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০২১
তোমাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস লিখে পুরস্কার পেলেন রণজিৎ সরকার। এই পুরস্কার কি রণজিৎ ভাইয়া একাই পেলেন? উঁহু, এটা তোমাদের, আমাদের- সবার। একটি বই যখন পুরস্কার পায়, বুঝতে হবে সেটা ভালো বই, আলো বই। তখন নির্দ্বিধায় আমরা বইটির রসাস্বাদন করতে পারি। তোমরা নিশ্চয়ই বড়দের দেখেছ, ‘কালি ও কলম’ ম্যাগাজিন পড়তে! বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতিবিষয়ক ম্যাগাজিনটি তোমরাও পড়বে, বড় হয়ে। এই ম্যাগাজিনই সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে পুরস্কার দেয়, দিয়ে আসছে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত।
শিশু-কিশোর সাহিত্য শাখায় সম্মানজনক ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’ অর্জন করেছেন রণজিৎ সরকার। এই অর্জন আমাদের সবার। যেহেতু আমরা এই লেখকের পাঠক; তার চিন্তা-চেতনা সঞ্চারিত হয় আমাদের মাঝেও।
এই যা, তোমাদের তো বইয়ের নামটিই বলা হয়নি! বইটির নাম ‘স্কুলে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল’। নাম শুনে অন্যরকম একটি গল্পের গন্ধ পেলে? এখন নড়েচড়ে বসাটাই স্বাভাবিক! স্কুল তো পড়াশোনার জায়গা, সেখানে কেন যুদ্ধ হবে! সেটাই হয়েছিল ১৯৭১ সালের কালো দিনে। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তির জন্য যুদ্ধ। অর্থনৈতিকভাবে, সাংস্কৃতিকভাবে নানাভাবেই অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল আমাদের; এই ভূখণ্ডের বাঙালিকে। ও বাবা, মায়ের ভাষায় নাকি কথাও বলতে দেবে না; কেমন পাষ- পাকিস্তানি শাসকরা! তাই তো আমাদের দেশপ্রেমিক দামাল ছেলেরা পূর্ব পাকিস্তান নাম মুছিয়ে এই ভূখণ্ডের জন্য এনেছে নতুন নাম- বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ সৃষ্টির নেপথ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান, নতুন প্রজন্মের আগ্রহ, জানার ইচ্ছা- সামষ্টিক বিষয়ের গল্পই শুনিয়েছেন রণজিৎ ভাইয়া।
রণজিৎ সরকার প্রায় দশ বছর যাবত আমাদের দারুণ সব গল্প শুনিয়ে যাচ্ছেন। তার লেখার সঙ্গে সহজেই একাত্ম হওয়া যায়। যুক্তাক্ষরমুক্ত ছোট ছোট বাক্য। লেখেন প্রাঞ্জল ও প্রাত্যহিক ভাষায়। মজার লেখক হিসেবে গল্পের ছত্রে ছত্রে মজা ছড়িয়ে যান। তার গল্পে থাকে নিটোল একটি আখ্যান। গল্পের ছলে শিক্ষণীয় বিষয়ও উপস্থাপন করেন। এসব আমাদের মধ্যে সৃষ্টি করে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগ।
আমাদের জানতে হবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে কীভাবে সূচিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট। ইতিহাসের বাঁকগুলো কখন, কীভাবে মোড় নিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা কীভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিয়ে গেছেন স্বাধীন ভূখ-, লাল-সবুজের পতাকা। এসব বিষয় আমাদের জানতেই হবে। শেকড় সনাক্ত করতে না পারলে নিজেদের পরিচয়ই যে টলায়মান অবস্থায় পড়ে যায়!
‘স্কুলে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল’ উপন্যাসের গল্পটি আমাদের চেতনা ও শেকড়ের ভিত্তিমূলকে ঘিরেই বিস্তৃত। প্রবাসী বাংলাদেশি কিশোরী রায়না। সে জানতে চায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। স্কুলে কেন মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল! সেই উত্তাল সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রামের একটি স্কুলে ক্যাম্প করে। নানাভাবে নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতন চালায় নিরীহ মানুষের ওপর। হত্যাও করে অনেককে। শেষপর্যন্ত গ্রামে আসেন অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা। পাকিস্তানি বাহিনীকে হঠিয়ে বিজয় পতাকা ওড়ান স্কুলে।
এটা শুধু একটি উপন্যাস নয়, আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের একটুকরো ইতিহাসও। ৭১ সাল আমরা দেখিনি, কিন্তু গল্প-উপন্যাস এবং অন্য ধরনের লেখা পড়ে সেই সময়কার পরিস্থিতি অনুভব করার সুযোগ আছে। রণজিৎ সরকারের পুরস্কারপ্রাপ্ত বইটির প্রকাশক ‘অধ্যয়ন’। উপন্যাসটি পড়লে আমরা অনেক কিছুই জানতে ও বুঝতে পারব।
শুধু এই বইয়েই শেষ নয়, ভাইয়া তোমাদের জন্য লিখেছেন প্রায় ৫০টি বই। কয়েকটি বইয়ের নাম বলি- স্কুল ছুটির পর, স্কুল ছুটির দিনগুলি, মায়ের সাথে স্কুলে, শিশুতোষ মুক্তিযুদ্ধের গল্প, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ব, শিশুতোষ একুশের গল্প, ছোটদের মুক্তিযুদ্ধের অজানা গল্প, ভাষাশহীদদের গল্প, বীরশ্রেষ্ঠদের গল্প, গল্পে গল্পে জাতীয় চার নেতা, পরির সাথে দেশ ঘুরি, ভাষাশহিদ ও বীরশ্রেষ্ঠদের গল্প, গল্পে গল্পে বর্ণমালা, শিশুকিশোরদের বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে সুমনা, করোনাকালে ছুটির ঘণ্টা, মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প।
ছোটদের প্রিয় লেখক রণজিৎ সরকার পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করেন এভাবে- ‘কোনো লেখক হয়তো পুরস্কার পাওয়ার জন্য লেখেন না। তবে হ্যাঁ, কাজের স্বীকৃতি চায় প্রতিটি মানুষ। সেটি পেলে মন আনন্দে ভরে ওঠে। কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০২০ আনন্দের অনুভূতির অনুভব দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। পুরস্কারটি ঘোষণার পর মানুষের অনেক সাড়া পেয়ে বুঝলাম মানব জন্মের কখনো কখনো দ্বিতীয় জন্মও হয়!’
রণজিৎ সরকার পেশায় সাংবাদিক, নেশায় লেখক। জন্ম সিরাজগঞ্জে। বাবা নারায়ণ সরকার, মা শোভা সরকার। দুই বোনের তিনি একমাত্র ভাই। আমরা তার আরও লেখা পড়ব। বিশেষ করে যেসব লেখক মুক্তিযুদ্ধের গল্প লেখেন, স্বাধীনতার কথা বলেন তাদের লেখা বেশি বেশি পড়ব। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানলেই আমরা দেশকে জানতে পারব, ভালোবাসতে পারব।
অনন্য একটি মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস উপহার দেওয়ার জন্য রণজিৎ সরকারকে অভিনন্দন জানানোই যায়, কী বলো তোমরা!
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228