ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নীড়

শাহেদ জাফর হোসেন
🕐 ৩:৪১ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৩, ২০২১

নীড়

রাজুর স্কুলের মাঠের ঠিক পাশেই আছে একটি প্রাচীন বটগাছ। তার ঠিক কিছুটা দূরে হাতের ডানদিকে এগিয়ে গেলে একটা বিশাল পুকুর। শীতের সময় দূরদূরান্ত থেকে কত পাখি আসে এই পুকুরপাড়ে। সারাদিন ঘুরে-ফিরে রাত হলে বটগাছের ডালে পাখিরা ঘুমিয়ে পড়ে। পুরনো এই বটগাছটার বয়স কত সে হিসাব এ অঞ্চলের কোনো মানুষ জানে না। এমনকি গ্রামের অনেক বয়স্ক মানুষও জানে না বটগাছটার জন্ম কতদিন আগে।

বটগাছের ছায়ায় শরীর জুড়ায়নি এমন কেউ নেই এই অঞ্চলে। তা হোক মানুষ আর হোক পশুপাখি। এজন্যই মাঠের সব ঘাস খেতে আসা পশু, স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে সবাই বটগাছটাকে ভালোবাসে। গ্রামের মানুষগুলোও বটগাছটার দেখভাল করে। যখন খুব রোদ ওঠে মাঠের গরু বা ছাগল গরমে ক্লান্ত হয়ে যায়, কৃষক ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে ওঠে। সবাই তখন বটগাছের ছায়ায় এসে শরীর জুড়ায়।
রাস্তার পথিক ক্লান্তি দূর করে। বাজার করতে আসা দূরের মানুষ বটগাছের ছায়ায় শীতল হাওয়ার আশায় পরম তৃপ্তি নিয়ে বসে। বিকেল হতে না হতেই সারা মুল্লুকের পাখিরা এসে জড়ো হয় গাছের ডালে। কলকাকলিতে ভরে ওঠে চারপাশ। আবার সকাল সকাল পাখিরা উড়ে চলে যায় খাবারের খোঁজে। এভাবেই চলছিল দিন। একদিন সবাই খেয়াল করে অপরিচিত কিছু মানুষ এসে জড়ো হয়েছে বটগাছের নিচে। কী যেন মাপজোক করছে তারা। খাতায় একজন কী যেন হিসাব লিখে রাখছে। মাপজোক শেষে সবাই আবার চলেও যায়। প্রথম প্রথম স্কুলের শিশুদের কেউ গায়ে লাগায় না এসব। তার মাসখানেক পর সেই মানুষগুলো আবার আসে।
রাজুরা তখন মাঠে ফুটবল খেলছিল সবাই একসঙ্গে। অচেনা মানুষগুলোর কিছু কিছু কথা কানে আসছিল ওদের। মানুষগুলোর মধ্যে মোটাকরে একজন বলছিল এই গাছ থেকে অনেক খড়ি পাওয়া যাবে। ইটভাটায় সব ইট পুড়তে এই গাছটি কালকেই কেটে নিয়ে যেতে হবে। এরকম একটা বুড়ো গাছ রেখে কী লাভ?
মোটা করে মানুষটার কথা শোনার পর থেকে রাজুর সব বন্ধুর মন খারাপ। খেলা বাদ দিয়ে সবাই গোল হয়ে বসে পড়ল মাঠে।
সবার কপালেই চিন্তার রেখা। সবাই যেন কথা বলতে ভুলে গেছে। নিস্তব্ধতায় ডুবে গেছে সবাই।
এতদিনের বন্ধু বটগাছ আর থাকবে না। তাকে কেটে ফেলা হবে। যে বটগাছ এতদিন সবাইকে আগলে রেখেছিল। বিপদে আপদে সবার পাশে ছিল। সেই বন্ধু বটগাছের আজ ঘোর বিপদ। এই বিপদে তার পাশে থাকতে হবে। বিপদে সাহস হারালে চলবে না। যেভাবেই হোক বটগাছকে বাঁচাতে হবে। প্রয়োজনে গ্রামের সব মানুষের কাছে যাবে রাজুরা। তাদের বোঝাবে। তবুও বটগাছকে কাটতে দেবে না। কিন্তু তারা যদি ওদের কথা না শোনে। তাই পরিকল্পনা হলো অন্য কিছু করতে হবে। সকাল সকাল কাল সবাই স্কুলের মাঠে আসবে। তারপর পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
পরদিন সকালে গ্রামের মানুষ, স্কুলের শিক্ষকসহ সবাই দেখল স্কুল ড্রেস পরা ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা বটগাছের গোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে হাতে হাত রেখে।
তাদের কারও কারও গলায় বড় বড় কাগজে আঁকানো আছে বটগাছের ছবি। কারও কাগজে কবিতা, কারও ছড়া, কারও সচেতনতামূলক লেখা। রাজু তার কাগজে লিখে এনেছে-
গাছ আমাদের বন্ধু
গাছ অক্সিজেন দেয়
গাছের প্রাণ যেন কেউ
না কেড়ে নেয়।
অন্য শিশুরা যারা ছবি বা ছড়া লিখে আনতে পারেনি তারা একসাথে সবাই বলতে লাগলÑ
শতবর্ষী বটগাছ কাটতে দেওয়া হবে না।
গাছ কেটে পরিবেশের ক্ষতি করা চলবে না।
কিছুক্ষণ পর স্কুলের শিক্ষক এবং গ্রামবাসীরা স্কুলের ছেলেমেয়েদের কাছে এসে জানালেন, প্রাচীন বটগাছকে আর কেউ কাটবে না। বট গাছ বিক্রির সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের এমন পরিবেশ সচেতনতা দেখে বড়রা লজ্জিত। এমন কাজ করার সিদ্ধান্ত তারা আর কোনোদিন নেবেন না।
শিক্ষক এবং গ্রামবাসীদের মুখে এমন কথা শুনে আনন্দ ফিরে এলে শিশুদের মনে। তারা খুশি হয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরল, নাচল, গাইল।
আবার যেন নতুন করে কলকাকলিতে মুখরিত হলো বটগাছ। বটগাছের ছায়ায় এসে বসল ক্লান্ত পথিক, মাঠের পশুরাও এসে ভিড় জমাল ছায়ার মায়ায়।
পাখিরা যেন ধন্যবাদ দিল স্কুলের খুদে শিক্ষার্থীদের।
ধন্যবাদ দিল বটগাছটাও তাদের।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper