পিকনিক হলো না
রুহুল আমিন রাকিব
🕐 ৩:৩৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৩, ২০২১
নিজের কাছে কিছুতে বিশ্বাস হচ্ছে না রোহানের।
এটা কী সম্ভব? দুজন মানুষ একজন ছেলে, অন্যজন মেয়ে মুখোমুখি বসে। চার-পাঁচ বছরের একটা ছেলেকে শুয়ে রাখছে। ছেলেটার বুক চিরে কলিজা, হৃৎপিণ্ড, রক্ত মাংস বের করে খাচ্ছে দুজন মিলে। জোছনা রাতের আলোয় রোহান একটু দূর থেকে স্বচ্ছ জলের মতো দেখতে পাচ্ছে। কী বীভৎস অবয়ব দুজনের! বড় বড় চোখ থেকে আগুন বের হচ্ছে। ছেলেটার তাজা রক্ত লেগে আছে মুখজুড়ে। কী ভয়ঙ্কর চাহনি! মাথার চারপাশে চোখ দুজনের। এমন দৃশ্য দেখে রোহানের কলিজা শুকিয়ে যায়। শরীরের লোমগুলো দাঁড়িয়ে উঠে। হাত-পা বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়। ইচ্ছে করছে দৌড়ে এখান থেকে পালিয়ে যেতে। জোরে চিৎকার করে মানুষ ডাকতে। তবে এসবের কিছু করার ক্ষমতা যেন এই মুহূর্তে রোহানের নেই। শরীরজুড়ে একটু শক্তিও নেই। বাবা-মা, আর বিড়াল বন্ধু পিউয়ের কথা খুব মনে পড়ল। দেখতেও ইচ্ছে হলো। রোহানের কাছে মনে হচ্ছে, আজ জীবনের অন্তিম সময় এসেছে। আর কোনোদিন দেখা হবে না কারও সঙ্গে।
রোহান কত কী স্মরণ করে। মনে মনে বলে, কেন যে এত দূরে স্কুলের পিকনিক আয়োজন করতে এসেছে? এত দূরের পথে এসেছে বলে আজ রাতে ওদের সবাইকে এই রিসোর্টে থাকতে হবে। বাড়িতে বাবা-মায়ের কাছে কল করে বলতে হবে আজ ওরা বাড়ি ফিরতে পারবে না। ওদের কাছে মোবাইল ফোন নেই বাজারে গিয়ে কল করতে হবে। কল করতে এসে মাঝপথে ঘটল ভয়ঙ্কর এই ঘটনা। অচেনা-অজানা এই পথে রোহান এখন কী করবে? আচ্ছা রাকিব, শাহিন ওরা দুজন আবার কোথায় লাপাত্তা হলো? রোহান কিছু ভাবতে পারছে না। হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখে বীভৎস শরীরের মানুষ দুজন। তার দিকে এগিয়ে আসছে। ভয়ঙ্করভাবে চিৎকার করে বলছে এবার তোমার পালা। পালাবে কোথায়? হা হা হো হো হি হি...!
গগনফাটানো হাসিতে রোহানের চিৎকার হয়তো কারও কানে যায় না। ওরা দুজন এক সময় রোহানের খুব কাছে চলে আসে। রোহান গলার সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেÑ না, তোমরা আমাকে খেয়ে ফেলো না। আমাকে ছেড়ে দাও। আমি বাবা-মায়ের কাছে যাব। আমি আমার পিউ বন্ধুর কাছে যাব। না না, তোমরা আর এক পা সামনে এগোবে না...।
হঠাৎ কারও হাতের পরশ পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় রোহানের। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে মা বলছে- এই, আর কত ঘুমাবে? এমন করে কাঁপছ কেন! তোমার কী হয়েছে? বাজে কোনো স্বপ্ন দেখেছ বাবা? উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও। আজ তোমাদের স্কুলের পিকনিক। তোমার কি মনে নেই?
মায়ের কথা শুনে রোহান কিছু বুঝতে পারে না। তবে একটু আগে যা ঘটল এসব কিছু স্বপ্ন ছিল? মাথা ঘুরতে লাগল। মাকে জানাল রোহান, এবছর সে পিকনিকে যাবে না।
দূর্গাপুর, কুড়িগ্রাম
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228