চুরি হলো চাঁদের আলো
জনি হোসেন কাব্য
🕐 ৩:২৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৩, ২০২১
অনেক অনেক বছর আগের কথা। ঠিক কত বছর আগের তা কেউ জানে না। তখন সূর্যের মতো চাঁদের আলোও অনেক উজ্জ্বল ছিল। রাত ও দিনের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য করা যেত না। সারা দিনের কাজ ঠিকঠাকভাবে পালন করে ক্লান্ত সূর্য চলে যেত নীল সাগরে। সেখানে ডুব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ¦লন্ত শরীর ধপ করে নিভে যেত। অন্ধকার হানা দিত পৃথিবীতে। তখনই ঘুম ভাঙত চাঁদের। মেঘের লেপ সরিয়ে আকাশে ভেসে উঠত সে। ভয়ে অন্ধকার কেটে যেত। চারদিকটা ঝলমল করে উঠত।
হাই তুলতে তুলতে চাঁদটি নেমে আসত বাঁশবাগানের মাথার উপর। সেখানে অপেক্ষা করত জোনাক-বন্ধুরা। তখনকার জোনাকগুলো অন্যান্য পোকার মতোই ছিল। খুব সাধারণ। আলো ছিল না তাদের। চাঁদের উজ্জ্বল আলোয় বুঁদ হয়ে থাকত সবাই।
যতই দিন যাচ্ছিল ততই চাঁদের আলোর প্রতি জোনাকদের লোভ বাড়তে লাগল। তারা মনে মনে ভাবল, ইশ! চাঁদের মতো যদি আমাদেরও এমন সুন্দর আলো থাকত!
একদিন জোনাকপোকাদের মাথায় একটি দুষ্টু বুদ্ধি এল। তারা চাঁদের আলো চুরি করার পরিকল্পনা করল।
প্রতিদিনের মতোই সন্ধ্যা হলো। চাঁদ নেমে এলো বাঁশবাগানের মাথার ওপর। এসেই সে অবাক। দেখল, পৃথিবীর সকল জোনাকপোকা তার জন্য অপেক্ষা করছে। ভীষণ খুশি হলো চাঁদ।
পরিকল্পনা অনুযায়ী জোনাক-সর্দার তাকে বলল, ‘বন্ধু চাঁদ, আজ তোমাকে দারুণ একটি গল্প শোনাব।’
মুখে এক চিলতে হাসিমেখে চাঁদ জানতে চাইল, ‘তাই নাকি? কী সেই গল্প?’
‘খুবই মজার একটি ঘুমপাড়ানি গল্প।’
‘ঘুমপাড়ানি গল্প! সেটা আবার কী?’
‘গল্পটি শুনলে তোমার ঘুম চলে আসবে। গভীর সেই ঘুম।’
‘বলো কী! এও সম্ভব নাকি? শোনাও তো দেখি।’
জোনাক-সর্দার গল্প শোনাল। চাঁদ সত্যি সত্যিই ঘুমিয়ে পড়ল। সে কী ঘুম তার! সুযোগটি কাজে লাগাল জোনাকপোকারা। প্রত্যেকেই চাঁদের গা থেকে আলো চুরি করল। তারপর সেখান থেকে পালিয়ে অনেক অনেক দূরে অজপাড়া একটি গাঁয়ে চলে গেল।
ঠিক গভীর রাতে ঘুম ভাঙল চাঁদের। সে আশপাশে তাকিয়ে দেখল, একটি জোনাকও নেই। মনে মনে ভাবল, কী ব্যাপার! বন্ধুরা গেল কই? হঠাৎ তার আলোটাকে মলিন মনে হলো। সে তার শরীরের দিকে তাকাল। দেখল, সম্পূর্ণ আলো নেই!
চাঁদের আর বুঝতে দেরি হলো না- জোনাকপোকারা তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। গল্প শুনিয়ে কৌশলে ঘুম পাড়িয়ে আলো চুরি করে পালিয়েছে। কোনোভাবেই এমন প্রতারণা মেনে নিতে পারল না চাঁদ। অভিমানে সে আকাশে ফিরে গেল।
চাঁদের এমন সুন্দর উজ্জ্বল আলো মলিন হতে দেখে জোনাকপোকাদের ভীষণ খারাপ লাগল। তারা বুঝতে পারল, কাজটি মোটেও ঠিক করেনি। চাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়ে তার আলো তাকে ফেরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবল সবাই। কিন্তু সেটি করা সম্ভব হলো না। কারণ চাঁদ আর কখনোই বাঁশবাগানের মাথার উপর নেমে আসেনি।
জোনাকপোকাদের প্রতারণার কথা মনে পড়লেই মেঘের চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে নেয় চাঁদ। তখন পুরো পৃথিবী অন্ধকারে ঢেকে যায়। এমন দৃশ্য দেখে জোনাকদের খুব কষ্ট হয়। কারণ তারা প্রতারণা না করলে এমন রাত কখনও দেখতে হতো না। সে-জন্যই অন্ধকার দেখলে স্থির হয়ে বসে থাকতে পারে না জোনাকপোকারা। আলো নিয়ে এদিক-ওদিক ছুটে বেড়ায়।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228