ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

লাল-সবুজের গল্পগুলো

আবেদীন জনী
🕐 ৩:৫৬ অপরাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২১

লাল-সবুজের গল্পগুলো

সোনামণিরা, শোনো, তোমাদের বলছি। তোমরা তো অনেক মজার মজার গল্পের বই পড়ো। রাজা-রানির গল্প। পরউর গল্প। ভূতের গল্প। ভিনগ্রহের এলিয়েনের গল্প। আরও কত কী। তোমরা যাতে সহজে পড়তে পারো, বুঝতে পারো, এমনকি পড়ে মজা পাও- এরকম ভাবনা থেকে তোমাদের জন্য লিখে যাচ্ছেন বেশ কয়েকজন ভাবুক লেখক। তারা এ বিষয়ে গবেষণাও করছেন। তাদের গল্পে জটিল কঠিন শব্দ নেই।

শব্দগুলো খুব তুলতুলে। বাক্যগুলোও ছোট ছোট। তোমাদের নরম সবুজ মনের জন্য একেবারে মানানসই। নতুন নতুন, আজব আজব, বিস্ময় জাগানো নানান রকম বিষয় নিয়ে লিখে চলেছেন তারা। জাদুমাখা গল্পগুলো পড়লেই মন ভালো হয়ে যায়। আর এই মন ভালো হয়ে যাওয়া গল্পগুলো যাদের কলমের ডগা থেকে অজস্র আলোর ফুল হয়ে ঝরে পড়ছে, অন্যতম প্রিয় লেখক হলেন মোজামে¥ল হক নিয়োগী। তিনি শুধু লেখক হিসেবে প্রিয় নন, একজন মহৎ মানুষ হিসেবেও প্রিয়। বিশিষ্ট মানুষ। আমরা যা কিছুই হতে চাই না কেন, তার আগে একজন ভালো মানুষ হয়ে ওঠা দরকার। এ লেখক তা হতে পেরেছেন বলেই মনে হয়। তার জানাশোনা বা অভিজ্ঞতার ঝুলিটাও অনেক বড়।

তিনি তোমাদের জন্য অনেক মজার মজার গল্প লিখেছেন। বই লিখেছেন একশ’রও বেশি। আজ তার লেখা যে গল্পের বইটির কথা তোমাদের জানাচ্ছি, সেটি কিন্তু রাজা-রানি বা দৈত্য-দানোর গল্পের বই নয়। ফুল, পাখি, পরী, এলিয়েন, সাগর, পাহাড়, আকাশ কিংবা পাতালপুরের কোনো অদ্ভুত কাহিনীও নয়। মায়ের ভাষা বাংলা ভাষা, ভয় তাড়ানো বাংলার দুঃসাহসী বীর আর বঙ্গবন্ধুর কথা লেখা সেই বইটির নাম হচ্ছে, ‘ভাষা ও মুক্তিযুদ্ধের গল্প’। এটি পড়লে জানতে পারবে, কেমন ছিল আমাদের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো। লেখক খুব পরিশ্রম করে, অত্যন্ত যতœসহকারে লিখেছেন স্বপ্ন-আশায় ভরা, আলোয় আলোয় ঝকমকে লাল-সবুজ দেশের গল্পগুলো।

আমাদের ভাষার নাম বাংলাভাষা। মায়ের কাছে শেখা। মা-বাবা যে ভাষায় কথা বলেন, আমরাও সেই ভাষায় কথা বলি। প্রাণ খুলে হাসি। গান গাই। পড়ালেখা করি। ছড়া লিখি। গল্প লিখি। এত প্রিয়, এত সুন্দর ভাষাটির ইতিহাস না জানলে কেমন হয় বলো তো? আরও একটি বিষয় হলো, আমাদের মায়ের মুখের এই বাংলাভাষা ভিনদেশিরা জোর করে কেড়ে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলা মায়ের দুঃসাহসী ছেলেরা তা মানতে পারেনি। মায়ের ভাষা রক্ষার জন্য তারা কেমন করে প্রাণ বাজি রেখে বন্দুকের নলের সামনে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেকথা জানতে পারবে বইটি থেকে। জানতে পারবে বঙ্গবন্ধুর কথা। ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ গল্পটিতে আছে ছোট্টমোট্ট এক কাজের ছেলে বাবলু। শহীদ মিনার এবং ভাষাশহীদদের প্রতি ওর ভালোবাসা সত্যিই তোমাদের অবাক করে দেবে। ‘একুশের ফুল’ গল্পটি পড়েও খুব মজা পাবে।

তোমরা শুনলে বিস্মিত হবে, স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের গল্গগুলো লিখতে নিষ্ঠাবান বিশিষ্ট লেখক মোজাম্মেল হক নিয়োগী এ বিষয়ক শতাধিক বই পড়েছেন। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন বাস্তব ঘটনা জানার জন্য। নির্ভুল তথ্য সংগ্রহের জন্য পাশের দেশ ভারতও ভ্রমণ করেছেন তিনি। এই যে শ্যামল সবুজ দেশ। লাল-সবুজের দেশ। আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। বাংলাদেশ। এই রূপঝলমল সোনার দেশটির কীভাবে জন্ম হলো, স্বাধীনতা শব্দটি কীভাবে আমাদের হলোÑ এইসব গল্পগুলো নিটোল ভাষায়, মনের তুলির টানে টানে, উৎকৃষ্ট শব্দরঙে সার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।

তোমরা তো গল্প পড়ে অনেক বীর পালোয়ানের কথা জেনেছ। তারা ভীষণ সাহসী। কোনো কিছুতেই ভয় নেই তাদের। ওইসব বীর পালোয়ানরা যতটা সাহসী, তারচেয়েও অনেক অনেক গুণ সাহসী বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা। মৃত্যুভয়কে তুলোর মতো এক ফুঁ-তে উড়িয়ে দিয়ে ভয়াল রণাঙ্গনে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তারা। বইটিতে রয়েছে রক্ত টগবগ করে ওঠা এমনই দুঃসাহসের গল্প। জীবন দিয়ে মা ও মাতৃভূমির স্বাধীনতা অর্জনের গল্প। স্বদেশকে ভালোবাসার গল্প। যুদ্ধদিনের তুমুল কষ্টের কথা। যুদ্ধজয়ের আনন্দের কথা।

‘বাবু স্বাধীনতা আনতে গেছে’ গল্পটিতে আন্নার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি যখন যুদ্ধে যান, আন্না অপেক্ষা করে পতাকার জন্য এবং বাবার জন্য। বাবা তার ছোট্ট খুকিমার জন্য লাল-সবুজ পতাকা পাঠিয়ে দেন ঠিকই কিন্তু তিনি দেশকে ভালোবেসে শহীদ হয়ে যান। ‘আমার মা’ গল্পে কুড়িয়ে পাওয়া ছোট্ট তুলতুলে এক শিশু বেড়ে ওঠে আপন মায়ের মতো অন্য এক নারীর আদরে। ‘একাত্তরের ছবি’ গল্পে খুকি রাফসানা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ছবি এঁকে এবং ‘যুদ্ধগল্প’ নামের গল্পটিতে ছোট্টমোট্ট অনুপম মুক্তিযুদ্ধের গল্প লিখে হয়ে যায় সেরাদের সেরা। সে কী আনন্দ! গল্পগুলো পড়লে তোমরাও সেরাদের হওয়ার জন্য কিংবা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করার জন্য বুকের ভেতর প্রগাঢ় সাহস সঞ্চয় করতে পারবে।

গল্পগুলোতে যেমন হাসি-আনন্দ আছে, তেমনই বুকভাঙা করুণ কান্নাও আছে। একটি নিখাদ সত্য হলো, বইটির প্রায় প্রতিটি গল্প পড়তে গিয়েই বারবার থেমে গেছি আমি। কেননা, যথাযথ শব্দ বুননে বিনির্মিত মাটির কথাগুলো এমন করে হৃদয়ের গহিনে নাড়া দিয়েছে, হারিয়ে ফেলেছি বাকশক্তি। অঝোরে কেঁদেছি অনেকক্ষণ ধরে। অশ্রুতে দু’চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে। ভেসে গেছে চোখের পাতা। কী জাদু আছে গল্পগুলোর পরতে পরতে? দেশের প্রতি কী গভীর ভালোবাসা? জানতে হলে পড়ে দেখো বইটি। তোমরাও চোখের জল ধরে রাখতে পারবে না, সে আমি নিশ্চিত বলে দিতে পারি। ১৬টি গল্প দিয়ে সাজানো নিটোল অলঙ্করণে অফসেট কাগজে মুদ্রিত ৯২ পৃষ্ঠার শিশু-কিশোর উপযোগী ‘ভাষা ও মুক্তিযুদ্ধের গল্প’ মোজাম্মেল হক নিয়োগীর অসাধারণ বই।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper