ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কুসুমপুরের ছেলেটি

মশিউর রহমান
🕐 ৩:৫৩ অপরাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২১

কুসুমপুরের ছেলেটি

ছেলেটির নাম নয়ন। সে গ্রামে থাকে। গ্রামের নাম কুসুমপুর। পাখির ডাক শোনে। আকাশে মেঘের লুকোচুরি খেলা দেখে। ধানখেতে বয়ে যাওয়া বাতাস তার দুচোখে খেলা করে। এলোমেলো বাতাসে ধানশীষ দুলছে। ওর দু গালে যেন মাঠের সবুজ রঙ মেখে যায়। এসব দেখে দেখে তার মন ভরে যায়।

দুই.
নদীর ধারে নয়নদের গ্রাম। ডিঙি নৌকা বেয়ে সে নদী এপার-ওপার করে। নদী ভাঙনে একবার ওদের গ্রামটা তলিয়ে যায়।
নয়ন বাবার সঙ্গে শহরে আসে। থাকে বস্তির একটা স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে। হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হয় সেই ঘরে। ছোট ছোট জানালা। মাথার উপরে টিনের চাল। তাও আবার ফুটো। ফুটো দিয়ে আকাশ দেখা যায়।
ছেলেটি গ্রাম থেকে কিছুই আনেনি। এনেছিল মেলায় কেনা একটা বাঁশের বাঁশি। বাঁশিটা তার খুব প্রিয়। বাবা তাকে বাঁশিটা কিনে দিয়েছিল।
নয়ন কখনো কখনো বাঁশিটা বাজায়। তখন ওর বুকের ভেতরটা ছলকে ওঠে। বুকের ভেতর দুঃখের ঢেউ বয়ে যায়। ওর গ্রামের কথা মনে হয়। আঁকাবাঁকা মেঠোপথের কথা মনে হয়। নদীর ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ের কথা মনে হয়।
রাতের বেলা নয়ন বস্তিতে ঘুমায়। ঘরের ভাঙা ছাউনির ভিতর দিয়ে সে আকাশ দেখে। আকাশে গোল থালার মতো চাঁদ দেখে সে খুশিতে নেচে ওঠে। তার দু’চোখে গ্রামের ছবি ভেসে ওঠে। চাঁদের ভেতর চরকাকাটা বুড়ির ছবি দেখে ওর পাশের বাড়ির বুড়ি দাদির কথা মনে পড়ে।

তিন.
নয়নের শহর একটুও ভালো লাগে না। এখানে তার বন্দি জীবন। ও মুক্ত পাখির মতো ডানা মেলে উড়ে বেড়াতে চায়। ওর নদীতে সাঁতার কাটতে ইচ্ছে হয়। পাখির ডাক শুনতে ইচ্ছে করে। গ্রামের মেঠোপথে হাঁটতে ইচ্ছে করে। পারে না। শহরের ধোঁয়ার গন্ধ নয়নের ভালো লাগে না। ধানখেতের মিষ্টি সুবাস তাকে কাছে টানে। এখানে সে ঘুঘুর ডাক শুনতে পায় না। নদীর ঢেউ তার বুকে আছড়ে পড়ে না। তাই সে গ্রামে ফিরে যেতে চায়। এখন আর বাঁশি বাজাতেও তার ভালো লাগে না। বাঁশিতে যে সুর আসে না। বাঁশির সুর যে গ্রামের মেঠোপথ, নদীর ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ের সাথে মেলানো।

চার.
নয়ন রোজ রাতে স্বপ্ন দেখে একটা নদীর। সেই নদীতে গাঙচিল উড়ছে। মাছরাঙা ডুব দিয়ে মাছ ধরছে। সাদা বকের সারি উড়ছে। কিন্তু এসব কিছুই সে স্বপ্নে অথবা কল্পনায় দেখে। বাস্তবে এসব থেকে সে অনেক দূরে। বাস্তব হলো বস্তির ঘরে সকালের সূর্য আলো ছড়ায়। নয়নের স্বপ্নের ঘোর কাটে। সে ঘুম থেকে ওঠে। তারপর কাগজ কুড়োতে বেরিয়ে যায়। সন্ধ্যায় নয়ন ঘরে ফেরে। ঘরে শুয়ে সে আকাশের পানে তাকায়। আকাশের মাঝে নদীর ছবি ভাসে।
কুসুমপুরের ছোট নদীর কথা মনে হয় তার। নদীতে সে শাপলা তুলছে। নদী সাঁতরিয়ে এপার-ওপার করেছে। তখনই তার দু’চোখ বেয়ে কান্না গড়িয়ে পড়ে। চোখের জল মুছতে মুছতে সে ভাবেÑ শহরটা যদি নদী হতো! শহরটা যদি কুসুমপুর গ্রাম হতো। তাহলে অনেক মজা হতো!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper