ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পুঁটি মাছের পরিণতি

কিং সউদ
🕐 ২:০০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১

পুঁটি মাছের পরিণতি

গাছপালায় ঘেরা ছোট একটি শহর। এর পাশে দিয়ে বয়ে গেছে বড় একটি নদী। শহরটির ঠিক মাঝখানে একটি পুকুর। পুকুরটির পাশেই একটি গীর্জা। গীর্জায় চারপাশে নানা ধরনের উঁচু উঁচু গাছ। গাছগুলোতে সন্ধ্যাবেলায় অনেক বক এসে বসে। দূর থেকে তখন মনে হয় সবুজ পাতার গাছগুলো সাদা হয়ে গেছে। গীর্জার পাশের পুকুরটির নাম বিবির পুকুর। এই রকম নামকরণের একটি ইতিহাস মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। অনেককাল পূর্বে শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীতে বড় নৌকা করে একদল ডাকাত যাচ্ছিল। সেই নৌকায় ছোট্ট একটি সুন্দর মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছিল বিক্রি করে দেওয়ার জন্য!

তখন এ নদীর পারে বসে গীর্জার একজন ফাদার মেয়েটাকে দেখতে পায়। পরে ডাকাতদের কাছ থেকে মেয়েটাকে সে কিনে রাখে। মেয়েটি সে নিজের মেয়ের মতো বড় করে তোলে। আর তার নাম রাখেন বিবি। তখন এ শহরে মানুষের পান করার জল পেতে অনেক কষ্ট হত। সে জলের কষ্ট নিবারণের জন্য ফাদার একটি পুকুর খনন করে তার সেই পালক মেয়েটির নামে নামকরণ করেন বিবির পুকুর।

এখন আর এ পুকুরের জল কেউ পান করে না। সবাই এখন পাম্পের মাধ্যমে জল তুলে জল পান করে। শুকনো মৌসুমে পুকুরে তেমন একটা জল থাকে না। আবার বর্ষার সময় জলে টইটম্বুর হয়ে ওঠে পুকুরটি।
পুকুরে চারপাশে ছোট ছোট অনেক চায়ের দোকান। দোকানগুলোতে বিকেল হলে অনেক মানুষ এসে ভিড় করে। অনেক রাত পর্যন্ত তারা আড্ডায় মশগুল থাকে।
বিবির পুকুরে মধ্যে অনেক ছোট বড় মাছ আছে।
মাছগুলো সারাদিন ঘোরাফেরা করে জলে। এ পুকুরে ছোট একটি পুঁটি মাছ মন খারাপ করে এদিকে ওদিকে ঘুরে বেড়ায়। সে কারো সাথে মিশতে পারে না। কথা বলতে পারে না। সবাই কে সে দূর থেকে দেখে কিন্তু কারও সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে না।
চায়ের দোকানগুলোতে মানুষের আড্ডার কথা শোনে, গীর্জার ঘণ্টার ঢঙ ঢঙ শব্দ শোনে আর নিজের মতো কখন জলের ভিতরে ডুব দেয় আবার ভেসে ওঠে।
কেবলই তার চঞ্চলতা বাড়তে থাকে।
তার মা বাবার কথা শোনে না। ঠিকমতো পড়াশোনাও করে না।
একদিন তার সঙ্গে একটা কাতলা মাছের পরিচয় হয়। কাতলা মাছকে তার খুব পছন্দ হয়। কাতলা মাছেরও পুঁটি মাছকে ভীষণ ভালো লেগে যায়।
কিন্তু কাতলা মাছ তো অনেক গভীর জলে থাকে।
তবুও তাদের মাঝে বেশ ভালো একটা বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
তারা নানা বিষয় নিয়ে গল্প করে। আর জলের মধ্যে পাখা নেড়ে নেড়ে সাঁতরে বেড়ায়। কিন্তু কাতলা মাছ বেশ বুদ্ধিমান। সে তার মা বাবার কথা শোনে। ঠিকমতো পড়াশোনা করে।
যখন তখন ঘুরে বেড়ায় না।
কাতলা মাছ তার পুঁটি মাছ বন্ধুর চঞ্চলতা দেখে, তার পড়াশোনা না করা বিষয়ে অনেক কিছু বলে। কিন্তু সে শোনে না। এই নিয়ে পুঁটি মাছ কাতলা মাছের প্রতি বিরক্ত হয়। সে কাতলা মাছকে ফেলে রেখে একাই জলের ওপর ভেসে বেড়ায়।
একদিন কাতলা মাছ পুঁটি মাছকে বলে যে, তুমি যে জলের ওপর ঘুরে বেড়াও তোমার তো যেকোনো সময় বিপদ হতে পারে।
কিন্তু পুঁটি মাছ সে কথা শোনে না।
সে যখন তখন জলের ওপর ঘুরে বেড়ায়।
সেদিন হঠাৎ গীর্জার পাশের গাছগুলোতে বক বসে, সেখান থেকে একটি বক উড়ে এসে ছোঁ মেরে পুঁটি মাছটাকে ঠোঁটে করে নিয়ে উড়ে চলে যায়!
তখন বকের ঠোঁটের মধ্যে বসে তার বন্ধু কাতলা মাছের কথা মনে পড়ে। আসলে বন্ধুর কথা না শুনে সে এই বিপদে পড়েছে। গভীর জলের মাছ বলেই এই সতর্কতার কথা কাতলা মাছ বলেছিল।
না শুনে সে ভুলই করেছে।
সেই থেকে বিবির পুকুরে গভীর জলের মাছেদের কথা অল্প জলের মাছেরা শোনে।
আর যে না শোনে তার পরিণতি হয় পুঁটি মাছের মতো।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper