ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মুক্তির কবিতা

শফিক শাহরিয়ার
🕐 ১২:৩৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ০৯, ২০২১

মুক্তির কবিতা

১৯৭১ সাল। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের গ্রামে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে আশপাশের গ্রামে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। আমার বাবা তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তেন। সবাই খুব আতঙ্কে দিন কাটাত। হানাদার বাহিনীর কথা শুনলে যে কেউ পালিয়ে বেড়ায়। এমন আতঙ্ক নিয়েই গ্রামের নিরীহ মানুষের কঠিন দুঃসময় কেটেছে। হানাদার বাহিনীর আতঙ্ক ছিল চারদিক। এমন আতঙ্কে মা সন্তান ছাড়ে, চাষি হাল ছাড়ে, জেলে জাল ছাড়ে। আতঙ্ক কেটে গেলে আবার তারা ঘরে ফেরে।

আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার মধ্যেই জীবন অতিবাহিত হতে লাগল। এখানে উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা না থাকায় দস্যুরা কম ধরপাকড় করেছে। আমাদের গ্রামে কেউ কেউ ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। তারা দেশের জন্য সংগ্রাম করেছেন। আবার কেউ রাজাকার ছিল। তারা হানাদারদের আশ্রয় দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কৌশল ব্যর্থ করার চেষ্টা করত। তবু যুদ্ধ থেমে থাকেনি। দেশের সকল স্তরের মানুষ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ছোটবেলা থেকেই বাবার মুখে অনেক গল্প শুনি। বাবাকে কখনো বিরক্ত হতে দেখিনি।

একদিন শুনলাম মুক্তিযুদ্ধের ভিন্ন কথা। অধীর হয়ে তার গল্প শুনছি। আমাদের পাশের গ্রাম বিল পাকুরিয়া। একবার হানাদার বাহিনী সেখানে আক্রমণের কথা শুনলাম। আতঙ্কে লোকজন এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে। আমি ও মা বাড়ি ছেড়ে যাইনি। কারণ, সবাই গেলে বাড়ি কে পাহারা দেবে? পরদিন সকালে শুনলাম, হানাদার বাহিনী ঠিকানা ভুল করে পাকুরিয়া গ্রামে প্রবেশ করেছে। পাকুরিয়া ও বিল পাকুরিয়া ভিন্ন দুটি গ্রাম। দুটি গ্রামের মাঝে কয়েক মাইল দূরত্ব। দস্যুরা সেখানে কয়েকটা বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে চলে যায়। অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়।

এরপর একদিন তারা হাট পাঁঠাকাটা গ্রামে কাপড়ের দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। কয়েকটা দোকান পুড়ে যায়। দোকানিরা নওগাঁর বিহারিদের কাছ থেকে কাপড় কিনত। মহাজনদের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়। তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিলেন। তারপর থেকে এই অঞ্চলে আর দস্যুরা আসেনি। তবে বহুবার আতঙ্কে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। আমাদের গ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ কবলিত অঞ্চলে যুদ্ধ করেছেন। রক্তে রঞ্জিত বাংলার মাটি। বীরের রক্তে স্বাধীন এদেশ। বাবার দুই চোখ দিয়ে পানির ফোয়ারা নামছে। তার চোখে লেখা মুক্তির কবিতা পড়লাম। মায়ের আঁচলে লিখলাম প্রেরণার কবিতা। তখনকার আতঙ্কে আজও গা শিউরে ওঠে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper