ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভোরের পাখি মদনমোহন

ইচ্ছেডানা ডেস্ক
🕐 ৩:০৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৮

পাখী সব করে রব, রাতি পোহাইল
কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল।
রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে
শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে।

 

 

গোলাপি কভারের পাতলা ‘শিশু-শিক্ষা’ বইটি আজও আমাদের স্মৃতিকাতর করে তোলে। ওপরের ছড়াটি যেন সকালের সূর্য; রাত শেষে দিন হয়েছে, এবার উঠো, যার যার কাজে মন দাও। যার পড়া কাজ সে পড়তে বসো। যার মাঠে কাজ মাঠের উদ্দেশে বেরিয়ে যাও। কবিতার মৃদুমন্দ তাল জলে ভাসা ভেলার মতো দুলিয়ে ভাসিয়ে আমাদের ছোট গায়ে নিয়ে যায়। এই ঝড়ঝঞ্ঝার জীবন ছেড়ে আমরা তখন কবিতার তালে তালে আমাদের চিরচেনা সেই গায়ে এসে উপস্থিত হই। যে গায়ের পাশ দিয়ে ছোট নদী বয়ে চলে। গাছে গাছে পাখির কলরব। ফসলের ক্ষেতে ক্লান্ত চাষি। সব এসে আমাদের মনের নয়নে এসে দৃশ্যায়িত হয়ে ওঠে। যেখানে আমিও খুব সকালে উঠে পড়ি এবং দ্রুত বই নিয়ে পড়তে বসে যাই। বইটি মদনমোহন তর্কালঙ্কারের ‘শিশু শিক্ষা’।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরও লেখাপড়ার গোড়াপত্তন যার বই দিয়ে। তিনি বিদ্যাসাগরের বন্ধু ছিলেন। বাংলার নারী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের যার বিরাট অবদান তিনি পণ্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কার। তো, চলো আজ আমরা তাকে নিয়ে আলোচনা করি। ১৮১৭ সালের ৩ জানুয়ারি নদিয়ার নাকাশিপাড়ার বিল্বগ্রামে মদনমোহনের জন্ম। ১৮২৯ সালে সংস্কৃত কলেজে পড়তে গিয়ে বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। ইয়ং বেঙ্গলের প্রতিষ্ঠাতা ডিরোজিওর উদ্যোগে তখন দেশজুড়ে চলছে কুসংস্কার, নানা সামাজিক অসাম্যের বিরুদ্ধে ও ইংরেজি স্ত্রী শিক্ষার প্রসারের জন্য আন্দোলন। ইয়ংবেঙ্গলের অন্যতম সদস্য রামতনু লাহিড়ীর (রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ বইটি বড় হলে পড়ে নিও) বাড়িতে থাকার সুবাদে মদনমোহনও সেই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
১৮৪২ সালে হিন্দু কলেজের পাঠশালার প্রধান শিক্ষক হিসেবে মদনমোহন কর্মজীবন শুরু করেন। ১৮৪৬ থেকে ১৮৫০ পর্যন্ত তিনি সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৮৫৫-তে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হন। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে মুর্শিদাবাদ এবং কান্দিতে দাতব্য চিকিৎসালয়, মেয়েদের স্কুল, রাস্তাঘাট নির্মাণ করেন। সেকালে শিক্ষা সংস্কারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজে নির্মাণেও ছিল তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। ১৮৪৯ সালে বেথুন সাহেব যখন এ দেশের মেয়েদের জন্য ‘ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল’ স্থাপন করেন মদনমোহন হন তার প্রধান সহযোগী।
রসতরঙ্গিনী (১৮৩৪) এবং বাসবদত্তা (১৮৩৬) তাঁর মৌলিক কাব্যগ্রন্থ। ১৮৪৯ সালে লেখা শিশুশিক্ষার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ভাগ ১৮৫০-এর মধ্যে তাঁর লেখা হয়ে গিয়েছিল। বলা হয় বইটি বাংলার প্রথম ‘প্রাইমার’। এর ঠিক পরেই তিনি লেখেন ‘স্ত্রীশিক্ষা’ নামে এর একটি বই। সংস্কৃতেও তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। তাঁর কবি প্রতিভার জন্য সংস্কৃত কলেজ থেকে ‘কাব্য-রত্নাকর’ এবং পান্ডিত্যের জন্য ‘তর্কালঙ্কার’ উপাধি লাভ করেন। ১৮৫৮ সালের ৯ মার্চ দুরারোগ্য কলেরায় মিষ্টি সুরের ভোরের পাখি মদনমোহন তর্কালঙ্কার মারা যান।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper